শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

স্বজনরা এখন কতখানি আপন

সমাজে শুভবার্তা থাকলে মানুষ আশাবাদী হতে পারে। সমাজ যদি কাক্সিক্ষতভাবে পরিচালিত না হয়, সমাজে যদি অবক্ষয়ের মাত্রা প্রকট হয়ে ওঠে, তখন মানুষ আশ্রয় খোঁজে পরিবারে। কিন্তু পরিবার যদি স্বজনদের আপন না ভাবে, তখন মানুষ কোথায় যাবে? এই প্রশ্নটাই আজ বড় হয়ে উঠেছে রোকসানা আক্তার রুবির (৩২) জীবনে।
স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়েকে নিয়ে একা হয়ে পড়েছিলেন রুবি। রাজধানীর দক্ষিণ কমলাপুরে তার বাবার আধা কাঠা জায়গায় তিন বোন ও এক ভাইয়ের পাশাপাশি তিনিও অংশীদার ছিলেন। চেয়েছিলেন অভাব ঘোচাতে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে পৈতৃক ভিটায় মাথা গুঁজবেন। এ নিয়ে ভাই স্বপনের সঙ্গে রুবির চলছিল এক ধরনের দ্বন্দ্ব। এক সময় অন্য আত্মীয়রাও বন্ধ করে দেন তার খোঁজখবর নেওয়া। এক পর্যায়ে চরম হতাশ হয়ে পড়েন রুবি। সিদ্ধান্ত নেন মেয়েকে নিয়ে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেবেন। হাসপাতালে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছেন রুবি। ১৮ জুন মুগদা থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা গণমাধ্যমকে জানান, রুবি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি সুস্থ হলে তাকে আদালতে হাজির করা হবে।
উল্লেখ্য যে, ১৬ জুন রাতে মুগদার মানিকনগরে সাড়ে তিন বছরের মেয়ে রোজা ফারদিনকে আইসক্রিমের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে ওই নারীর বিরুদ্ধে।
স্বামীর মৃত্যুর পর শিশুকন্যাকে নিয়ে এক অসহায় অবস্থায় পড়ে গেলেন রুবি। নির্মম বাস্তবতায় উপলব্ধি করলেন, এই সমাজ-সংসারে তারা বড় একা। বেঁচে থাকার কোনো উপায় খুঁজে পেলেন না। বিশেষ করে পৈতৃক ভিটায় যখন মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেন না, তখন চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়লেন তিনি। এবং তখনই গ্রহণ করলেন মেয়েকে নিয়ে আত্মহননের মত ভুল সিদ্ধান্ত। মেয়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেও তিনি বিদায় নিতে পারেননি। হাসপাতালে আছেন চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এমন চিত্র মানুষ হিসেবে আমাদের ধিক্কার দেয়। গানের বাণীতে আমরা যতই বলিনা কেন ‘মানুষ মানুষের জন্য’, বাস্তবে কিন্তু তেমন উদাহরণ রাখতে আমরা সক্ষম হচ্ছি না। আমাদের সমাজে ভাইয়েরা এখনো পৈতৃক সম্পত্তিতে বোনকে অংশ দিতে চায় না। এইসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে বোনকে, আত্মহননের পথ তো কোনো সমাধান নয়। নারীরা যাতে এমন ভুল পথে না যায়, সে ব্যাপারে তো সমাজ ও রাষ্ট্রের করণীয় আছে। সেই কর্তব্য পালিত হবে কী?

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ