শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

নতুন আন্দোলন মঞ্চের উত্থান এবং কিছু কথা

আগেও একবার বলেছি, আজও বলছি যে এই জুন মাসে পলিটিক্যাল কলাম লেখা খুব ডিফিকাল্ট। ঈদ গেলো, কিন্তু রেশ থাকলো। সেগুলো শেষ হতে হতে লাগলো ১৫ তারিখ। তারপর শুরু হয়েছে ক্রিকেট বিশ^কাপ। ঘটনাচক্রে এই ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপে খেলছে উপমহাদেশের চারটি দেশ। এগুলো হলো ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান। এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফরম্যাট বদলে ফেলা হয়েছে। এখন আর গতবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল নাই। স্কোরিং টেবিলে প্রথম  যে ৪ দলের নাম থাকবে তারাই সেমিফাইনাল খেলবে। সেটা নিয়েও এবার হয়েছে অনেক বিপত্তি। অন্তত ৩টি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যাক্ত হয়েছে। যদি ম্যাচগুলি খেলা হতো তাহলে বিজয়ীরা দুইটি করে পয়েন্ট পেতো। বৃষ্টির কারণে ঐ দুটি দলের পয়েন্ট সমান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ থেকে আউট হয়ে গেছে। তারপরেও গতকাল শ্রীলঙ্কার সাথে খেলে শ্রীলঙ্কার কাছে পরাজিত হওয়ার ফলে শ্রীলঙ্কা বাড়তি দুই পয়েন্ট পেয়ে এখন ৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এখন খেলা এই মুহূর্তে খুব জমে উঠেছে। জমে উঠেছে একটি পয়েন্টে। সেটি হলো, কে যাবে সেমিফাইনালে। পাক-ভারত বাংলা উপমহাদেশ জুড়েই ঐ একই আলোচনা। আমি যখন এই কলামটি লিখছি তখন অর্থাৎ শনিবার বেলা পৌনে ১টার  সময়  ১২ পয়েন্ট পেয়ে সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া। তার মানে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া খেলবে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। নিউজিল্যান্ড যদিও পাকিস্তানের কাছে হেরেছে তবুও ১১ পয়েন্ট পেয়ে দেশটি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। সুতরাং সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড খেলবে তাতেও কোনো সন্দেহ নাই। ভারতও পেয়েছে ১১ পয়েন্ট। সুতরাং ধরে নিচ্ছি যে ভারতও সেমিফাইনালে খেলবে। অবশ্য ৩০ জুন অর্থাৎ আজ ইংল্যান্ডের সাথে ইন্ডিয়ার খেলা আছে। এ খেলাতে তেমন একটা হেরফের হবে বলে মনে হয় না। কারণ ইংল্যান্ডের পয়েন্ট ৮। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে ইংল্যান্ড এই খেলায় জিতবে তাহলেও সে দুই পয়েন্ট পেয়ে ১০ পয়েন্টে যাবে। সেক্ষেত্রে ইংল্যান্ড সেমিতে যাবে। কিন্তু ভারতের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ ভারত ১১ পয়েন্টে থেকে সেমিফাইনাল খেলবেই। তবে ইংল্যান্ড যদি আজ অর্থাৎ শনিবার ভারতের বিরুদ্ধে জয় লাভ করে ১০ পয়েন্ট লাভ করে তাহলে তারাই সেমিফাইনাল খেলবে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়বে।  কিন্তু এখানে অন্য একটি হিসাব আছে। সেটি হলো, ইংল্যান্ড যদি জেতে তাহলে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের জন্য নতুন সমীকরণের উদ্ভব ঘটবে। কারণ যখন লিখছি তখন শনিবার আর আড়াই ঘন্টা পরেই পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে খেলা শুরু হবে। আফগানরা ইতোপূর্বে তাদের স্পিন এ্যাটাকে যদিও ভারত এবং বাংলাদেশকে কাবু করেছিল এবং ৩০০ রানের নিচে দেশ দুটিকে  বেঁধে ফেলেছিলো তারপরেও তারা নিজেদের স্কোরকে বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেনি। কারণ তাদের অত্যন্ত দুর্বল ব্যাটিং। সুতরাং ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের কাছেই আফগানিস্তান হেরে গেছে এবং ভারত- পাকিস্তান উভয়ই ২ পয়েন্ট করে এগিয়ে গেছে। স্কোরিং টেবিলে আফগানিস্তানের পয়েন্ট এখন পর্যন্ত শূন্য। আজকের খেলায় যদি আফগানিস্তান জয়লাভও করে তাহলেও তার কোনো লাভ হবে না। কারণ সেক্ষেত্রে তারা মাত্র দুই পয়েন্ট পাবে।
॥দুই॥
 কিন্তু এর বিপরীতে খেলাটি নতুন টার্নিং পয়েন্ট নেবে। পাকিস্তান ৭ থেকে ৯ পয়েন্টে চলে যাবে। সুতরাং পাকিস্তান সেমিফাইনালের উজ্জ্বল আশা পোষণ করবে। কারণ তারপরেও তার সাথে বাংলাদেশের আর একটি ম্যাচ রয়েছে ৫ জুলাই শুক্রবার।  তবে সমীকরণটি এতো সোজা নয়। এখানে অন্যেরাও জড়িত আছে। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে খেলা হবে ৫ জুলাই শুক্রবার। পাকিস্তানের পেস এবং স্পিন এ্যাটাকে খুব ভালো করছেন মোহাম্মদ আমির  এবং শাহিন আফ্রিদি। আফগানিস্তানের ব্যাটিং অত্যন্ত দুর্বল। সেখানে পাকিস্তানের বাবর আজম এবং হারিস সোহায়েল এবার বেশ ফর্মে আছেন। সেজন্য অনেকে ধারণা করেন যে আজকে অর্থাৎ শনিবারের খেলায় পাকিস্তান জিতবে। সেক্ষেত্রেই ব্যাপারটা অনেকটা শেষ হয়েও হইলো না শেষের মতো অবস্থা। কারণ আগামীতে অর্থাৎ ২রা জুলাই মঙ্গলবার ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে খেলা হবে।  হার জিত সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী করা কঠিন। তবে সাধারণ মানুষ মনে করেন যে এই খেলায় বাংলাদেশ হবে ফেবারিট। কারণ বাংলাদেশের রয়েছে স্ট্রং ব্যাটিং লাইন। ৭ জন সেটস ব্যাটসম্যান। ৮ম জনকেও বিপদে কাজে লাগানো যেতে পারে।
কিন্তু বাংলাদেশের জন্য আর একটি মসিবত হলো ভারত। কারণ ভারতেরও রয়েছে স্ট্রং ব্যাটিং লাইন। আর জাসপ্রিট বোমরার মতো এই সময়ের সবচেয়ে তুখোড় পেস বোলার রয়েছে ভারতের। এই সব কারণ মিলে গত শনিবার থেকে আগামী ৫ জুলাই শুক্রবার পর্যন্ত মানুষের নজর থাকবে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠানরত বিশ^কাপ ক্রিকেট ফাইনালের দিকে। সমস্ত কাগজ জুড়ে এখন একই কথা। তাই শুরুতেই বলেছিলাম যে জুলাই মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত পলিটিক্যাল কলাম লেখার সুযোগ কম, কারণ পাঠক ঐ সব লেখা ঠিক এই মুহূতে খাবে না।
॥তিন॥
তবুও রাজনীতি তো বসে থাকে না। কোনো সময় সে দৌড়ে দৌড়ে চলে। কোনো সময় সে খুঁড়িয়ে খুঁিড়য়ে হাঁটে। এখন আমাদের রাজনীতিকে কি বলবো সেটা নিজেই ঠিক করতে পারছি না। কোনো সময় মনে হয় স্থবির, আবার কোনো সময় মনে হয় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। এই স্থবির রাজনীতিতে আংশিক গতি সঞ্চার করেছেন এলডিপির কর্নেল অলি আহমেদ এবং নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না।
গত ৩/৪ দিন আগে অলি আহমেদ ২০ দলীয় জোটে থেকেও একটি নতুন মঞ্চ খুলেছেন। নাম দিয়েছেন ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’। প্রথমে অনেকে ধারণা করেছিলেন যে, বিএনপির সাথে তাঁর বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে এবং এজন্য তিনি ২০ দলীয় জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন। তাঁর এই মুক্তি মঞ্চকে সমর্থন দিয়েছেন কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল ইবরাহিম, জাগপার সভা নেত্রী ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান , লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপের জেবেল রহমান প্রমুখ। ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও অলি আহমেদের মুক্তি মঞ্চের প্রতি এখনও সমর্থন ঘোষণা করেননি।
কর্নেল অলি আহমেদ মুক্তি মঞ্চের তরফ থেকে ১৮ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এই ১৮ দফা কর্মসূচি তিনি বাস্তবায়নের কাজ কবে থেকে শুরু করবেন অর্থাৎ কবে থেকে আন্দোলনে নামবেন সেকথা বলেন নি। কর্নেল অলির মুক্তি মঞ্চের ভবিষ্যৎ কি ?  একই প্রশ্ন করা যায় ঐক্যফ্রন্টকেও।  সেই ঐক্যফ্রন্টও না ভাঙলেও সম্পূর্ণ স্থবির।
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরীক নাগরিক ঐক্য আলাদা প্রোগ্রাম শুরু করেছে। গত শুক্রবার সুপ্রীম কোর্ট বার এ্যাসোসিশেন মিলনায়তনে সংগঠনটির দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন যে, এই পার্লামেন্ট বা জাতীয় সংসদ গণতন্ত্রের শোক সভার স্থানে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের অধিকার সম্পর্কে এই সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই। কিভাবে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা যায় সেই ফন্দি ফিকির করতে সরকার ব্যস্ত। মাত্র  ৭ জনের একটি বিরোধী দল। সেখানেও তাদেরকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য যে সময় বরাদ্দ করা হয়, সেই নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই তাদের মাইকের সুইচ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারের তীব্র সমালোচনা করে তারা যে বক্তব্য দেন সেই সব বক্তব্যও সংসদের কার্য বিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি কর্তৃক জাতীয় সংসদে যোগদানের তীব্র বিরোধিতা করে তিনি বলেন, তারা যদি মনে করে যে তারা সেখানে সরকারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবে তাহলে তারা বিরাট ভুল করছে। বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের তরফ থেকে জাতীয় সংসদে সংগ্রামের যে কথা বলা হচ্ছে তার তীব্র সমালোচনা করে মান্না বলেন,  যদি সংগ্রাম করতে চান তাহলে সর্বাগ্রে রাজ পথে নেমে আসুন এবং সেখান থেকে সংগ্রাম করুন। দেশে গণতন্ত্র নাই, আছে ভোট ডাকাতি। প্রবল গণআন্দোলন ছাড়া এর অন্য কোনো উপায় নাই। সকলেই জানেন যে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর কোনো ভোট হয়নি। যেটা হয়েছে সেটা হলো ভোট লুন্ঠন। অথচ ২০ দলীয় জোটের একজন শীর্ষ নেতা ৩০ ডিসেম্বর ভোরে তাদের এলাকায় ভোট দিয়ে বলেছেন যে, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। অথচ ৩০ তারিখে কোনো ভোট হয়নি। হয়েছে ভোট লুন্ঠন। সেই একই নেতার যখন বোধদয় হলো যে ভোটের নামে হচ্ছে ভোট ডাকাতি তখন তিনি এর প্রতিবাদে কোনো কর্মসূচি দেননি।
॥চার॥
নির্বাচনের পর ৬ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলো। অথচ এই ৬ মাসেও কোনো কর্মসূচি দেওয়া হলো না। তিনি দ্ব্যার্থ হীন ভাষায় ঘোষণা করেন যে অন্যরা কোনো কর্মসূচি দিক আর না দিক, প্রয়োজনে একা একা হলেও নাগরিক ঐক্য কর্মসূচি দিয়ে যাবে।
জনাব অলি আহমেদের মুক্তিমঞ্চ কতদূর যেতে পারবে আমরা জানি না। কিন্তু ৪০ বছর পর  বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে তিনি একটি চরম সত্যি কথা বলেছেন। তিনি মুক্তকন্ঠে ঘোষণা করেছেন  যে, জামায়াতে ইসলামী একটি দেশপ্রেমিক শক্তি। ৪০ বছর আগের জামায়াতে ইসলামী এবং বর্তমান জামায়াতে ইসলামী একদল নয়। ৪০ বছর আগের বাস্তবতা আর আজকের বাস্তবতায় আসমান-জমিন ফারাক। একটি গতিশীল দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামী সেই বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের শত্রু এবং মিত্র সম্পর্কে আওয়ামী লীগ দেশবাসীকে যে ধারণা দিচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। বাংলাদেশের শত্রু হলো তারাই যারা বাংলাদেশকে গ্রাস করতে পারে এবং ৪০ বছর ধরে ঋণ পরিশোধের নামে বাংলাদেশকে শোষণ করছে। জামায়াতের মতো দলগুলোই এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। আর সে জন্যই আধিপত্যবাদের দোসররা এসব দলকে গ্রাস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
Email:[email protected]

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ