বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বাগেরহাটে মহিষ প্রজনন খামারে খাবার সরবরাহের প্রায় অর্ধকোটি টাকা লোপাট

খুলনা অফিস : বাগেরহাটে অবস্থিত দেশের একমাত্র মহিষ প্রজনন খামারে খাবার সরবারাহের নামে প্রায় অর্ধকোটি টাকার পুরোটাই লোপাট হয়েছে। মহিষের ভাগে জোটেনি কানাকড়ি খাবারও। টাকা হজমের সকল পথ রুদ্ধ হওয়ার পর সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পাওয়া যায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কিছু খাবার সরবরাহ করছে।
দরপত্রের সমুদয় শর্ত পালনের চুক্তিনামা মোতাবেক গত ১৩ মার্চ ঢাকার সাভারের আশুলিয়া নয়ারহাট বাজার এলাকার মেসার্স মাহিন বিল্ডার্স কে চলতি বছরের ১০ জুন কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। বাগেরহাটের ফকিরহাট মহিষ প্রজনন কেন্দ্র ও টাঙ্গাইলের মহিষের বাছুর পালন খামারে পশু খাদ্য সরবরাহে ৪৬ লাখ ৮২ হাজার চারশ’ টাকা মূল্যের খাবার সরবরাহের নিমিত্তে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কার্যাদেশটিতে স্মাক্ষর করেন প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মহিষ উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর প্রকল্প পরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।
কিন্তু কার্যাদেশের মেয়াদ উত্তীর্ন হলেও গত ৩০ শে জুন পর্যন্ত মহিষের জন্য বরাদ্দকৃত একটি খাবারও প্রদান করেনি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের সমূদয় টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এমনকি মালামাল গ্রহণ কমিটির অনেকেই জানেন না খাবার প্রদান না করে টাকা উত্তোলনের খবর। এমনকি মালামাল গ্রহণ কমিটির চালান ফর্মে খামার ব্যবস্থাপকসহ অন্য একজন সদস্য স্বাক্ষর করেছেন। বাকী সদস্যদের স্বাক্ষর নাকি প্রয়োজন হয়নি। দেশের একমাত্র মহিষ প্রজনন খামারটি অব্যবস্থাপনা ও যথাযথ অর্থ বরাদ্দের অভাবে যেমন রয়েছে। তেমনি বরাদ্দকৃত অর্থের অপচয় হচ্ছে এমন ভাবে যার ফলে বর্তমানে অলাভজনক রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে খামারটি। 
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, খামারটির কার্যক্রম শুরুতে ১৯৮৬ সালে মহিষ রাখার জন্য ১০টি টুইন টিন শেড তৈরী করা হয়। ওই ঘরগুলো তৈরীর পর থেকে আর মেরামত না করায় মরিচা ধরে ছাউনির টিন নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে খামারটিতে ৪৬৭ টি মহিষ ও বাচ্চা থাকলেও এদের অধিকাংশ রোগা। অযত্ন আর অবহেলায় মহিষগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে এখানে।
সূত্র আরও জানায়, এ খামারে নেপিয়ার, পারা ঘাস এবং ভূট্টা খাদ্য হিসেবে উৎপাদন করার ব্যবস্থা থাকলেও গত জুন মাসে প্রকল্প থেকে ঘাস চাষ ও সার ব্যবহারের জন্য ১০লক্ষাধিক টাকা বরাদ্দ দিলেও সে টাকার পুরোটাই আত্মসাতের আওতায় রয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি পক্ষ জানিয়েছেন। এছাড়া খামারের দুধ বিক্রি, সার বিক্রির টাকা তো রয়েছেই।
বাগেরহাটের ফকিরহাটে অবস্থতি মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের ব্যবস্থাপক ও মালামাল গ্রহণ কমিটির সদস্য সচিব ডা. মুহম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছে একটি গ্রুপ আর মাল সর্বরাহ করবে আর একটা গ্রুপ। ঝামেলা কি হয়েছে তা প্রকল্প পরিচালক অফিস জানে। সেই ঝামেলা উত্তরনের পর সময় অতিক্রান্ত হলেও বর্তমানে কিছু মাল আসা শুরু করেছে। খামারের ব্যবস্থাপকের ভাষ্যমতে ইতোমধ্যে ষাট ভাগ মাল তারা বুঝে পেয়েছেন। তবে ষ্টোরকিপার মো. জাকারিয়া জানান, তার ষ্টোরে যে পরিমানের মাল আছে তা সর্বোচ্চ ২৫ দিন চালানো যাবে।
এদিকে মালামাল গ্রহণ কমিটির সভাপতি ও বাগেরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. লুৎফর রহমান জানান, সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যে পরিমাণ মাল পাওয়ার কথা তা পাওয়া যায়নি। বর্তমানে কি পরিমাণ মালামাল স্টকে আছে তা তিনি জানেন না। যদিও ষ্টকের পরিমাণ তার আগে জানার কথা এরপরও তাকে অবগত না করানোর কারণে তিনি খামারে যাবেন বলে জানান। সেখানে গিয়ে দেখবেন ষ্টকের অবস্থা কি। তবে খামারের ব্যবস্থাপক তাকে জানিয়েছেন, বেশ পরিমাণ মালামাল ইতোমধ্যে ঢুকেছে।
এদিকে ঢাকা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মহিষ উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর প্রকল্প পরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলামের মুঠো ফোন (০১৬১৫৯২৪০০৯) এর সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায় নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ