মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

‘জয় শ্রীরাম’ এর নামে আরো তিন মুসলিমকে মারধর

১০ জুলাই, টিডিএন : ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডব থামছে না। জয় শ্রীরাম ইস্যুতে মুসলমানদের ওপর এ নির্যাতন সাম্প্রতিককালে আরো বেড়ে গেছে। এই একই ঘটনার সাক্ষী থাকলো এবার আসাম। তিন মুসলিম যুবককে জোর করে জয় শ্রীরাম বলানো ও মারধর করে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা।

পুলিশ জানায়, চারজন দুর্বৃত্ত মোটরবাইকে করে এসে রাকিবুল হক নামে এক ওষুধের দোকানের কর্মচারীকে মারধর করে। এদিকে পশ্চিম বরপেটা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলেন, দুষ্কৃতীরা কুরবান খান ও বুরান আলিকেও মারধর করে। কুরবান ও বুরান স্থানীয় চায়ের দোকানে কাজ করে। পুলিশ জানায়, দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে এফ আই আর দায়ের করা হয়েছে, খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে বলে পুলিশ আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি দুষ্কৃৃতিদের মোটরবাইকও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

বিজেপি সরকারের ‘এক দেশ, এক জাতি, এক ধর্ম’ দর্শনই কি ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে বেসামাল করে তুললো? দুর্বল বিরোধীদল কংগ্রেস মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে না পারলেও সে দেশের বিবেকবান বুদ্ধিজীবী-শিল্পী-সাহিত্যিকরা এ নির্যাতনের প্রতিবাদ করছেন। ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান কেন মুসলমানদের দিতে বাধ্য করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

২০১৯ সালের ৩০ মে মোদির শাসনের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রথমেই শুরু হয় ‘পাবলিক লিঞ্চিং’। বাস, ট্রেনে বা রাস্তায় সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধরে নির্যাতনের মাধ্যমে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করা হয়। ‘জয় শ্রীরাম’ বা ‘গো মাতা কি জয়’ স্লোগান না দিলে পাবলিক লিঞ্চিংয়ের তীব্রতায় বেদম প্রহার করা হয়।

পশ্চিমবঙ্গের শিয়ালদহ স্টেশনে বিজেপি সমর্থিত হিন্দু সংহতি নামের একটি কট্টর হিন্দু সংগঠনের নেতারা মুসলমান যাত্রীদের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেয়ার নির্দেশ দেয়। স্লোগান না দেয়ায় মারধর করে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া হয়। গত ৭ জুলাইও মধ্যপ্রদেশে গোরক্ষকদের হাতে মুসলিম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ওই প্রদেশের খান্ডোয়া জেলার সাভালিকেন্ডা গ্রামে ৬ জন মুসলিম যুবককে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাস্তায় হাঁটু মুুড়ে কান ধরে বসিয়ে রাখা হয়; জোর করে ‘গো মাতা কি জয়’ বলতে বাধ্য করা হয়।

সংখ্যালঘু মুসলমানদের ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করার তীব্র প্রতিবাদ করে ভারতের প্রথিতযশা অভিনেত্রী শাবানা আজমি ৫ জুলাই শনিবার মধ্যপ্রদেশে এক অনুষ্ঠানে মোদি সরকারের প্রতি প্রশ্ন তুলে বলেছেন, এসব কী হচ্ছে? যখন ঐতিহ্যবাহী বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দেয়া হয়, তখন সে ঘটনাটি প্রভু রামের জন্য অবশ্যই বেদনার ছিল।

বিজেপিকে উদ্দেশ করে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান মানুষ প্রহার করার জন্য ভারতে আমদানি করা হয়েছে।

ক্ষমতাসীন বিজেপির ফাদার সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) দর্শন হলো ‘সবার উপর গরু সত্য তাহার উপর নেই’। তাদের মুখপত্র ‘স্বস্তিকা’য় বলা হয়েছে ‘ভারতের মুসলমানরা ধর্মের বিধান মেনে যদি গরু জবাই করেন, তাহলে গরু হত্যাকারীকে হত্যা করার অধিকার অন্যদের রয়েছে। আরএসএস, বিজেপি, বিশ্বহিন্দু পরিষদ, শিবসেনা, বজরং দল ঐক্যবদ্ধভাবে সারা ভারতে মুসলিম বিদ্বেষ প্রচার করে মুসলমান নাগরিকদের হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ভারতের মুসলিম নেতা তাজুদ্দিন আহমেদ ২০১৯ সালের ২ জুন দেশ পত্রিকায় ‘ঊষা-দিশাহারা নিবিড় তিমির আঁকা’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘গো-রক্ষকদের তাণ্ডবে ভারতে কত সংখ্যালঘু মানুষের প্রাণ গেছে তার ইয়ত্তা নেই। আহার নিদ্রার মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে ‘পাবলিক লিঞ্চিং’।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ