শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

কুমিল্লায় মা-ছেলেসহ ৪ জনকে কুপিয়ে হত্যা

কুমিল্লা : জেলার দেবিদ্বারে কুপিয়ে ৩ জনকে হত্যার পর নিহতের স্বজনদের আহাজারি

কুমিল্লা অফিস : কুমিল্লায় মা- ছেলেসহ প্রকাশ্যে ৪ জনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে এক রিক্সাওয়ালা। পরে গণপিটুনিতে ঘাতক রিক্সা চালক মোখলেছুর রহমানকে হত্যা করেছে উত্তেজিত জনতা। ঘাতক ধারালো ছেনি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আরও মারাত্মক আহত করেছে ৪ নারীসহ আরও ৫ জনকে। গতকাল বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে ওই ঘটনা ঘটেছে জেলার দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের রাঁধানগর গ্রামে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ জনের লাশ উদ্ধার করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেবিদ্বারের রাঁধানগর গ্রামের মর্তুজ আলীর পুত্র মোখলেছুর রহমান (৩৫) পেশায় রিক্সা চালক। বুধবার সকাল ১০টার দিকে সে রিক্সা চালিয়ে বাড়িতে এসে ধারালো লম্বা ছেনি নিয়ে  বেরিয়ে যায়। প্রথমে সে প্রতিবেশী নুরুল ইসলাম, তার স্ত্রী নাজমা বেগম ও মা মাজেদা বেগমকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। এতে ঘটনাস্থলেই নাজমার মৃত্যু হয়। পরে ঘাতক একই বাড়ির মৃত শাহ আলমের শিশু পুত্র আবু হানিফ (১০) কে এলোপাতারি কুপিয়ে হত্যা করে।
এ সময় হানিফের মা আনোয়ারা বেগম আনু ছেলেকে বাঁচাতে দৌড়ে আসলে ঘাতক মোখলেছ তাকেও কুপিয়ে হত্যা করে। মা ও ছেলের মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতক মোখলেছ রক্তমাখা উম্মুক্ত ধারালো ছেনি নিয়ে বাড়িতে ও রাস্তায় ফাহিমা, রাবেয়া বেগম, মাজেদা বেগম ও জাহানারা  বেগমসহ আরও ৪ জনকে কুপিয়ে আহত করে।
এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় লোকজন ঘাতককে পিটিয়ে হত্যা করে। স্থানীয়রা মারাত্মক আহত নুরল ইসলাম, ফাহিমা, রাবেয়া বেগম, মাজেদা বেগম ও জাহানারা বেগমকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পুলিশ ঘাতক মোখলেছের স্ত্রী রাবেয়া বেগম ও ভাবী মরিয়ম আক্তারকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
নিহতের স্ত্রী রাবেয়া বেগম সাংবাদিকদের জানান, ‘তার ৩ মেয়ে ১ ছেলে রয়েছে। তার স্বামী মাদকাসক্ত কিংবা মানসিক সমস্যা ছিল না, তবে মাঝে মধ্যে তার মাথা ব্যথা করতো, সে নিয়মিত মাথা ব্যথার ট্যাবলেটও খেত, প্রতিদিন রিক্সা চালিয়ে বিকালে বাসায় ফিরলেও বুধবার সকাল ১০টার দিকে বাসায় ফিরে ধারালো ছেনি নিয়ে বের হয়ে সামনে যাকে পেয়েছে তাকেই কুপিয়েছে।’ কিন্তু কি কারণে সে বাড়ির লোকজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তা তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
এ দিকে ঘটনার খবর পেয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) সাখাওয়াৎ হোসেনসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। খবর পেয়ে এলাকার হাজার হাজার লোক ঘটনাস্থলে ভীড় করে। এমন নৃশংস হত্যাকান্ড এ নিয়ে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
 দেবিদ্বার থানার ওসি জহিরুল আনোয়ার জানান, ঘাতক এলোপাতাড়ি ৮/৯ জনকে কুপিয়ে ছিল। পরে ৩ জনের মৃত্যুর পর এলাকার লোকজন ঘাতককে পিটিয়ে মেরেছে। এখন পর্যন্ত আমরা ঘাতকসহ ৪ জনের লাশ পেয়েছি, হাসপাতালে আরও ২ জনের মৃত্যুর গুজব থাকলেও বিকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন আর কারও মৃত্যু হয়নি। হত্যাকান্ডের কারণ এখনো অসম্পষ্ট, তাই এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ