বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতায় সোর্সদের দৌরাত্ম্য

খুলনা অফিস : খুলনা মহানগরীতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতায় কথিত সোর্সদের চলছে মাদক ব্যবসা। নানা সময়ে এসকল সোর্সদের টার্গেটে পড়ে সম্মানহানী শিকার হচ্ছে সরকারি, বেসরকারি চাকুরিজীবীসহ সাংবাদিকরা। অভিযোগ রয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন অভিযানে উদ্ধার হওয়া মাদকের বড় একটি অংশ সোর্সদের মাধ্যমে আবারও মাদক স্পটগুলোতে চলে যায়। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন মাদকের স্পট ও মাদক বিক্রেতাদের সাথে সোর্সদের মাধ্যমে মাসোয়ারা উত্তোলন করেন অসাধু কর্মকর্তারা। একারণে কথিত সোর্সদের কাছে নিজেদেরকে সপে রেখেছেন অধিদপ্তরের ওই সকল কর্তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১লা জুলাই রাত ৮টার দিকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কথিত সোর্সদের ইশারায় নগরীর বাঘমারা তেতুঁলতলা এলাকায় ক্যাবল অপারেটর সুমন হাওলাদের বাড়িতে ৬/৭জনের একটি দল প্রবেশ করেন। এসময় তারা বাড়ির নারী সদস্যদের সাথে অশালীন আচরণসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি দেন। গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে এমন কথা বলে অসহায় এ পরিবারটির ঘরে তল¬াশীর নামে ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে কোন ধরনের মাদকের আলাম না পেয়ে তারা চলে যান। এতে ওই পরিবারটিকে এলাকায় নাান প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছে। ক্যাবল অপারেটর সুমন ওই এলাকার মুনসুর আলীর ছেলে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ এম হাবীবুর রহমান বলেন, কয়েক মাস আগে সকাল সাড়ে ১০দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি ৫/৬জনের একটি দল ১৪, বাঘমারা  এলাকায় আমার বাড়িতে প্রবেশ করেন। অধিদপ্তরের পরিদর্শক আহসান হাবীব ওই অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন। সেসময় আমি খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ট্রেজারী শাখায় কর্মরত ছিলাম। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের অশালীন আচরন ও অরাজকতা দেখে আমার পরিবারের সদস্যরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। আমি খবর পেয়ে বিষয়টি তাৎক্ষনিক তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ আমিনুল আহসান ও এডিএম স্যারকে অবগত করি। ওনারা এবিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামানের নিকট জানতে চাইলে তারা সোর্স’র ভুল তথ্য বলে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বিষয়টি নিয়ে আমার পরিবারসহ আমি অনেক কথার সম্মুখিন হয়েছি। পরবর্তিতে মাদক দব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সেই পরিদর্শক আমার কাছে এসে দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি আরও জানান, কথিত এসকল সোর্সদের কারণে সম্মানের সাথে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। এধরনের অনিয়মের বিষয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ জরুরী বলে মনে করেন এ সরকারি কর্মকর্তা।
নগরীর ৮৩, মুসলমানপাড়া এলাকায় বাসিন্দা এম এ জলিল খুলনা প্রেসক্লাবের সহকারী সম্পাদকসহ (ক্রীড়া), জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের মিডিয়া কমিটির সম্পাদক, সোনালী অতীত ক্লাবের প্রচার সম্পাদক, ইয়াং ভয়েজ ক্লাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও নগরীর মুসলমান পাড়ার হাক্কানী জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন সার্জেন্ট। সর্বশেষ ৭ জুলাই সকালে কথিত সোর্সদের তথ্যমতে তার বাসায় অভিযান চালায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অভিযানে নেতৃত্বদেন গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক পারভীন আক্তার। এসময় তার সাথে ছিলেন অধিদপ্তরের বিভাগী স্টাফ উপ-পরিদর্শক মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন, সিপাই মোঃ জিল¬ুর রহমান, মোঃ রুবেল হোসেন, মোঃ বোরহানুর রহমান মৃধা। তাদের মধ্যে ২ জন এমএ জলিলের বাড়ির দেয়াল টপকে ছাদে গিয়ে অভিযানের নামে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। এদিকে পরিদর্শক পারভীন আক্তারের সাথে থাকা বাকীরা তার বাড়ির গেটে আঘাত করে ডাকতে থাকে। একপর্যায়ে এমএ জলিল ঘর থেকে বেড়িয়ে কারন জানতে চাইলে তাকে ধরে ঘরের মধ্যে আসে ওই সদস্যরা। কিছুক্ষণ পর এমএ জলিলের বাড়ির পাশের ড্রেন থেকে ১০বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে তাকে মামলায় আসামী করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
এ বিষয়ে এমএ জলিলের স্ত্রী রুনা বেগম বলেন, কিছুদিন আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন সোর্স’র বিরুদ্ধে পত্রিকায় রিপোর্টের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারনা করছি। আমার স্বামী জীবনে ধূমপান পর্যন্ত করেনি। বাড়ির পাশের ড্রেনে মাদক রেখে তারা আমার স্বামীকে সমাজে হেয় করেছে। এধরনের ষড়যন্ত্রের বিচার চাই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ