শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

এসব কিসের আলামত?

‘ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন মুদ্রিত হয়েছে জাতীয় দৈনিকে ২০ জুলাই (২০১৯) তারিখে। মুদ্রিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাহায্য চেয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা। তবে তার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, এসব অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা, ভিত্তিহীন। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন উদ্দেশ্য আছে। আর তিনি যে বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া ও জমি কেড়ে নেওয়ার কথা বলেছেন সেটা কোথায় হয়েছে বলুক। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার ১৯ জুলাই বিকালে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা বৌদ্ধ মন্দিরে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, প্রিয়া সাহার অভিযোগ ঠিক নয়।
উল্লেখ্য যে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর আয়োজিত ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়া বিভিন্ন দেশের অন্তত ২৭ জন প্রতিনিধিকে গত বুধবার তার ওভাল অফিসে ডেকে পাঠান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাদের মধ্যে ছিলেন প্রিয়া সাহা। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩ কোটি ৭০ লাখ (৩৭ মিলিয়ন) হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান উধাও হয়ে গেছেন। এখনও সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ (১৮ মিলিয়ন) সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রয়েছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। জমি কেড়ে নিয়েছে। এর কোন বিচার পাইনি।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তখন তার কাছে জানতে চান কারা এসব করেছে। প্রিয়া সাহা বলেন, উগ্রপন্থী মুসলমানরা এটা করেছে। সব সময় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা এটা করে থাকে।
এ প্রসঙ্গে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘প্রিয়া সাহা যে যুক্তরাষ্ট্র গেছেন সেটা আমরা মিডিয়ার কাছ থেকে জেনেছি। তিনি আমাদের যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ওই সমাবেশে যাওয়ার কথা জানাননি। তা ছাড়া ওই সম্মেলনে সংগঠনের তিন সদস্যের যে প্রতিনিধি দল গেছে তাতে তিনি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। এখন ‘ডিজঅ্যাপিয়ার’ শব্দটি বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’ রানা দাশগুপ্ত ঠিকই বলেছেন, ‘ডিজঅ্যাপিয়ার’ শব্দটি দিয়ে প্রিয়া সাহা কী বোঝাতে চেয়েছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে যেভাবে যে ভাষায় প্রিয়া সাহা অভিযোগ করলেন তাতে তিনি স্পষ্ট করেই এ বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছেন যে, বাংলাদেশের সমাজে সংখ্যালঘুদের বসবাস নিরাপদ নয়। তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়, জমি কেড়ে নেয়া হয় এবং বিচারও পাওয়া যায় না। আসলেই কি বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন বার্তা দেয়া যায়? সমাজে দুর্বলদের ওপর অন্যায় অবিচার কোন্্ দেশে হয় না? আমেরিকায়ও হয়। মূল সমস্যা হলো, সুশাসনের অভাব। বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের মধ্যে কারও উপর কি অন্যায় অবিচার হয় না? কেউ বাড়ি বা জমি হারায় না? এখন সবাই কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে গিয়ে অভিযোগ করবেন। বলবেন, আমাদের সাহায্য করুন। এমনটি হলে তো প্রশ্ন দেখা দেবে, বাংলাদেশে কি কোন প্রশাসন কিংবা সরকার নেই? বাংলাদেশের সমাজেও অন্যায় আছে। অন্যায়ের খবর মিডিয়ায় আসে, জনবিক্ষোভ হয়, বিচারও হয়। প্রিয়া সাহার নজরে কি এসব আসেনি? যার ওপরই অন্যায় হোক না কেন তার বিচার হতেই হবে। বাংলাদেশের সমাজ এ ব্যাপারে একমত।
শুধু প্রিয়া সাহাই যে ট্রাম্পের কাছে ধর্না দিয়ে দেশের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করেছেন তা নয়, এর আগে রানা দাশগুপ্তও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে ধর্না দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করেছেন। বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক মুনতাসির মামুন সে ব্যাপারে  জনকণ্ঠ পত্রিকায় কলাম লিখে তার ক্ষোভ ও বেদনার কথা জানিয়েছেন। এভাবে ধর্না দিয়ে কি তারা বাংলাদেশকে ভয় দেখাতে চান ? এসব কিসের আলামত ?

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ