শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

‘ডেঙ্গু’ সীমা ও সীমানা ছাড়িয়েছে

* ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় আতঙ্কে খোদ চিকিৎসকরাও
* চার বছরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৫১ জন
* সর্বশেষ রোববার মারা গেছেন হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন
* ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্রামে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি
* আক্রান্ত ডিএসসিসির সচিবও
তোফাজ্জল হোসেন কামাল : প্রাণসংহারী ‘ডেঙ্গু’ সীমা ও সীমানা-এ দুটোই ছাড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকাতে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে প্রাণসংহারের ঘটনা সীমা ছাড়িয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ঢাকার সীমানা ছাড়িয়ে এখন ‘ডেঙ্গু” দেশের আনাচে কানাচেও ছড়িয়ে পড়ছে। সর্বশেষ রোববার রাতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আনা হলে হবিগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন শাহাদাত হোসেন হাজরাকে (৫৩) মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এর আগে ডেঙ্গু জ্বরে আরও চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭। এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে যশোরে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ কি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে! বর্তমান অবস্থা কোন পর্যায়ে রয়েছে, ডেঙ্গু কি মহামারি রূপ নেবে, কতদিন পর্যন্ত এর প্রকোপ অব্যাহত থাকবে-এমন অনেক প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় চলতি বছরের সর্বোচ্চ একদিনে ৪০৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির নতুন রেকর্ড হয়েছে।
এক সময় বলা হতো সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবে তারা সঙ্গত কারণেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। কিন্তু এ বছর চিত্র ভিন্ন। ডেঙ্গুতে শুধু সাধারণ মানুষই আক্রান্ত কিংবা মারা যাচ্ছেন এমনটা নয়, এ বছর চিকিৎসকরাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মারা যাচ্ছেন। সর্বশেষ রোববার রাতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আনা হলে হবিগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন শাহাদাত হোসেন হাজরাকে (৫৩) মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এর আগে গত ৩ জুন রাজধানীর উত্তরার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসক নিগার নাহিদ দিপু রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মাত্র মাস দেড়েকের ব্যবধানে দু’জন চিকিৎসকের মৃত্যুতে এখন অনেক চিকিৎসকও ডেঙ্গুতে মৃত্যু আতঙ্কে ভুগছেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যার ক্রমাগত বাড়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারাও চিন্তিত। সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র পাঁচজন বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে কমপক্ষে ২৭ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা ডেঙ্গু রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিদিন টেলিফোন ও মোবাইলে যোগাযোগ করে কীভাবে এ অবস্থার উন্নতি করা যায় সে ব্যাপারে জানতে চাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, চলতি জুলাই মাসের গত ২১ দিনে শুধু হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫০ জন। গত ১ জানুয়ারি থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ১৭৯ জন। তাদের কাছে অফিসিয়ালি এখন পর্যন্ত পাঁচজন রোগীর মৃত্যুর রেকর্ড রয়েছে।
হালনাগাদ তথ্যানুসারে, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৬৫ জন।
একাধিক ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের (স্ট্রেইন বা সেরো টাইপ)। এগুলো হলো ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। তিনি বলেন, ২০০২ সালের পর থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ডেন-১ ও ডেন-২ স্ট্রেইন দেখা যেত। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত ডেন-৩ তে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তদের অনেকেই দ্বিতীয় বারের মতো ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এ পরিস্থিতিকে কী বলা যেতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে মহাখালীর রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, অন্য বছরের তুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এ বছর অনেক বেশি সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। প্রকোপ বেশি-এটাই বলা যাবে। তবে এ মুহূর্তে বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্য কোনো সংজ্ঞাতে সংজ্ঞায়িত করা যাবে না। তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এ বছর বেশি হলেও দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে হিসাব করলে তা খুব বেশি নয়।
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এ সময়টাতে ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকায় জ্বর হলেই তা ডেঙ্গু কিনা তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। তাই জ্বর হলে ঘরে বসে না থেকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
অধ্যাপক ফ্লোরার কাছে ডেঙ্গুতে মৃত্যু সংখ্যা নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি হিসাবে গড়মিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে নিশ্চিত তথ্য পাওয়ার পরই সরকারিভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। আর অন্য যেগুলো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় সেগুলোর তথ্য আইইডিসিআরে আসে। ডেথ রিভিউ কমিটি সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে নিশ্চিত হলে তবেই তা প্রকাশ করা হয়।
ডেঙ্গুর এ অবস্থা কতদিন অব্যাহত থাকবে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাপসাতালে ভর্তি ৪০৩ রোগীর মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে ৮৩, মিটফোর্ডে ৩৮, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১২, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩৩, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ৪৫, বারডেমে ৮, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ১৫, মুগদা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৮, বিজিবি হাসপাতালে ৫ ও কুর্মিটোলা হাসপাতালে ৯ জন ভর্তি হয়েছেন।
বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ১২৩ জনের মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেলে ২১, ইবনে সিনায় ১১, স্কয়ারে ৭, সেন্ট্রালে ১৭, গ্রিন লাইফে ৮, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল কাকরাইলে ১১, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৮, খিদমা হাসপাতালে ৪, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯, সালাউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩ ও পপুলার হাসপাতালে ১৪ জন ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া খুলনা বিভাগে দু’জন ভর্তি হয়েছেন।
সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বেশি মৃত্যু কম
ডেঙ্গু জ্বরের রোগী সরকারি হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছে। এসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুও কম। গত চার বছরে এ রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যু বিষয়ে সরকারি তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার নির্দেশনা বা ট্রিটমেন্ট প্রটোকল অনুসরণ করে চিকিৎসা দেওয়ার চর্চা বেশি। এ কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও কম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ৫১ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ১৮ জন মারা গেছে সরকারি হাসপাতালে। এদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বাকি ৩৩ জন মারা গেছে বেসরকারি হাসপাতালে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ বছর ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজধানীর ১০টি বেসরকারি হাসপাতালে। এর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল তিনটি হাসপাতালও আছে। দুজনের মৃত্যু হয়েছে একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও বাকি দুজনের মৃত্যু হয়েছে একটি আধা সরকারি হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এ বছর ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালে। অধিদপ্তরের পুরোনো হিসাবে দেখা যায়, ২০১৮ সালে ডেঙ্গুতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালে ১৯ জন ও সরকারি হাসপাতালে ৭ জনের মৃত্যু হয়।
ব্যতিক্রম দেখা যায় ২০১৭ সালের মৃত্যু তালিকায়। এ বছর ৮ জন মারা যায়। এর মধ্যে ২ জন মারা যায় বেসরকারি হাসপাতালে, ৪ জন ঢাকা শহরের সরকারি হাসপাতালে। বাকি ২ জন দুটি উপজেলা হাসপাতালে। উপজেলা পর্যায়ে মৃত্যুর ঘটনা এর আগে ও পরে আর ঘটেনি।
এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৬ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৪ জনের মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যে ৯ জন মারা যায় বেসরকারি হাসপাতালে। আর ২০১৫ সালে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর কোনোটি সরকারি হাসপাতালে হয়নি।
জানা গেছে , গত ৬ মাসে যে পরিমাণ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, চলতি মাসের গত ২১ দিনে তার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ২ হাজার ১১১ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু চলতি মাসের গত ২১ দিনেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৮৩৬ জন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো। জাতিসংঘের আবাসিক কার্যালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন মিয়া সেপ্পো। ডাক্তারি পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। সেপ্পো আপাতত অফিস করছেন না বলেও জানা গেছে। মিয়া সেপ্পো হাসপাতালে ভর্তি হননি। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে এখন পূর্ণ বিশ্রামে রয়েছেন তিনি। কবে থেকে সেপ্পো অফিস করবেন সে বিষয়ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আক্রান্ত ডিএসসিসির সচিবও
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন খোদ ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এর সচিব ( যুগ্ম সচিব) মোস্তফা কামাল মজুমদারও। কয়েকদিন ভুগে তিনি ডেঙ্গুর কবল থেকে রেহাই পান। অথচ এই সংস্থারই দায়িত্ব মশক নিধনের কাজ।মশাবাহিত রোগের প্রতিকার করা। রমজানের ঈদের সময়ই তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানান। গতকাল সোমবার নগর ভবনের তার দফতরে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে এ তথ্য প্রকাশ পায়।
ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ঢাকার বাইরেও
গত কয়েক দিনে চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও কুষ্টিয়ায় এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ২৩ জন। চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের কেউ কেউ ঢাকায় গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে। অনেকে আবার আক্রান্ত হয়েছে নিজ এলাকায়।
গত চার দিনে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঁচজন ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়। এ নিয়ে চলতি বছর ৯ জন এ রোগে আক্রান্ত হলো। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সাতজন এবং বেসরকারি হাসপাতালে দুজন চিকিৎসা নিয়েছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গু নিয়ে এখনো আতঙ্কের কিছু নেই। এ ব্যাপারে আমরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি।’ তিনি জানান, চমেক হাসপাতালে গত ১৩ জুলাই চকরিয়া থেকে একজন, ১৫ জুলাই ফেনীর একজন, ১৭ জুলাই নগরের নাসিরাবাদে একজন এবং ১৮ জুলাই রাউজানের গহিরা থেকে দুজন ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চমেক হাসপাতালে সাতজন ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে তিনজন চলে গেছে। এখন চারজন ভর্তি রয়েছে। আতঙ্কের কিছু নেই।’
কুষ্টিয়ায় ডেঙ্গুতে ১০ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ছয়জনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ জেলায় প্রথম আক্রান্ত হন ইসমাইল হোসেন (২১)। তিনি সদর উপজেলার বালিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার পাল বলেন, ‘বাইরে থেকে আক্রান্ত হয়ে কুষ্টিয়ায় চিকিৎসা নেয়া রোগী এর আগে পাওয়া গেছে। কিন্তু কুষ্টিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম। এ ছাড়া শহরের বেসরকারি একটি হাসপাতালে এ মাসে ১০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়।’
গাজীপুরে গত তিন দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৯ জন। তাদের মধ্যে চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ নিয়ে গত ২০ দিনে শুধু গাজীপুর মহানগরী এলাকায় ৩০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলো। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষণ দাস জানান, প্রতিদিনই কেউ না কেউ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর জয়দেবপুর শহর, ছোট দেওড়া, ইটাহাটা, কাশিমপুর, কোনাবাড়ী, পুবাইল ও টঙ্গী এলাকার বাসিন্দারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
নড়াইলে  ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রুখসানা পারভীন রানী (৫২) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে যশোরের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। রুখসানা পারভীন নড়াইল জেলা শিল্পকলা একাডেমির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান লুলুর সহধর্মিণী। নিহতের স্বজনরা জানায়, সপ্তাহখানেক আগে রুখসানা পারভীন পারিবারিক কাজে ঢাকায় যান। সেখান থেকে ঝিনাইদহে বাবার বাড়ি গিয়ে জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। প্রথমে ঝিনাইদহে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু জ্বর কমেনি। পরে অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার দুপুরে তাঁকে যশোরের ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়ে। এরপর রাত ২টায় মৃত্যু হয় তার।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ