শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কাশ্মীর সমস্যা ‘বিশেষ মর্যাদার’ মধ্যেই লুকিয়ে আছে

৮ আগস্ট, ডয়চে ভেলে :  মোদি সরকারের কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ প্রত্যাহার ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন।

কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন ডয়চে ভেলের হিন্দি বিভাগের প্রধান মহেশ ঝা এবং ডয়চে ভেলের উর্দু বিভাগের সাংবাদিক শাহজেব জিলানি এবং ডয়চে ভেলের উর্দু বিভাগের সাংবাদিক শাহজেব জিলানি।

ডয়চে ভেলের হিন্দি বিভাগের প্রধান মহেশ ঝা বলেন, আমি প্রথমেই বলবো ওটা বিজেপির এজেন্ড ছিলো। ভারতের স্বাধীনতার পর জনসঙ্ঘ নামের একটি রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি হয় যা পরবর্তীতে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি নামের দলে রুপান্তরিত হয়।

শুরু থেকেই এই দল কাশ্মীরে ‘বিশেষ মর্যাদার’ বিরোধিতা করে আসছিলো বলে উল্লেখ করে মহেশ ঝা বলেন, এখন নির্বাচনের জয়ের পর বিজেপি দাবি করতেই পারে যে তাদের সিদ্ধান্তের প্রতি ভারতের জনগণের সমর্থন রয়েছে। সত্তর বছর আগে তাদের এই সমর্থন ছিল না।

তিনি বলেন, মানুষ মনে করে কাশ্মীর সমস্যা আসলে এই ‘বিশেষ মর্যাদার’ মধ্যেই লুকিয়ে আছে। আর সেই ৮৯ সাল থেকে এই সমস্যা চলছে। পাশাপাশি আবেগের দিকটাও দেখতে হবে, সেই উপত্যকায় তিন থেকে ছয় লাখ হিন্দু নাগরিক বসবাস করতেন, কিন্তু আন্দোলন শুরুর পর তারা সেখান থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়। এখন কাশ্মীরে হিন্দুর সংখ্যা দুই থেকে তিন ভারের মতো। তারা মূলত জম্মু থাকেন।

ভারতের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে পাকিস্তান, এটা কেন? পাকিস্তান কি কাশ্মীরের এই ‘বিশেষ মর্যাদা’ সমর্থন করেছিলো? এ প্রশ্নের জবাবে ডয়চে ভেলের উর্দু বিভাগের সাংবাদিক শাহজেব জিলানি বলেন, কাশ্মীর নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। দুই দেশ এই ভূখ- নিয়ে অতীতে যুদ্ধেও লিপ্ত হয়েছে। এখন সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র  মোদি কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশের যোগাযোগের পন্থাই বদলে দিয়েছেন। কেননা, ভারত এখন আর কাশ্মীরকে বিতর্কিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করবে না।

ভারত কি আদৌ কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো বিষয়ে কখনো আলোচনায় অংশ নিয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে শাহজেব জিলানি বলেন,  মোদির নেতৃত্বে সেটা হয়নি, কিন্তু অতীতে লাহোর ঘোষণা এবং সিমলা চুক্তিতে দুই পক্ষই কিন্তু স্বীকার করেছিলো যে কাশ্মীর একটা অমিমাংসিত ইস্যু। দুই পক্ষই আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার ভিত্তিতে এই ইস্যুর সমাধান করার আগ্রহ দেখিয়েছিলো কিন্তু ৮৯ সালে আফগান যুদ্ধ চলাকালে পরিস্থিতি বদলে যায়। পাকিস্তান তখন কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের সমর্থন করতে শুরু করে। সেখানে বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং এক পর্যায়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী সেই অঞ্চল শাসন করতে শুরু করে, তারা যা বলছে তা অধিগ্রহণ। ফলে সমস্যা বাড়তে থাকে। আর পুরো একটি প্রজন্ম সেই সমস্যার মধ্যেই বেড়ে উঠেছে। এখন  মোদি সরকার সেখানকার ‘বিশেষ মর্যাদা’ বাতিলের মাধ্যমে পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। ফলে পাকিস্তান সরকারকে এখন পরবর্তী পস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে ভাবতে হবে। খেয়াল করলে দেখবেন, দুই সপ্তাহ আগেই কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতা করতে চান। কিন্তু এখন ভারতে জানিয়ে দিলো ওটা আমাদের ভূখণ্ডের অংশ।

শাহজেব জিলানি বলেন, এটা ঠিক যে এখানে  মোদি বা তার ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে কিন্তু আপনি যখন একটি অঞ্চলের সাংবিধানিক মর্যাদা পরিবর্তন করতে চাইবেন তখন সেই অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গেও আলোচনা দরকার। এটা যেভাবে ভীতি সৃষ্টি করে করা হয়েছে, সেটা ঠিক হয়নি।

একজন পাকিস্তানি কি ভয় সৃষ্টি করে সংবিধান বদল নিয়ে কিছু বলতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে পাকিন্তানের খুব একটা গণতন্ত্র নেই। আর আমি যে সমালোচনার কথা বলছি, তা কিন্তু ভারতের মধ্য থেকেই আসছে।

ভারতের শক্তি ও অর্থনৈতিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে শাহজেব জিলানি বলেন, ভারতের শক্তি এবং অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে পশ্চিমারা কাশ্মীরের প্রতি দেশটির আচরণ নিয়ে তেমন একটা কথা বলতে চায় না। কিন্তু যখন এই ইস্যুতে পরমাণু শক্তিধর দু’টি দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয় তখন পশ্চিমারা উদ্বেগ প্রকাশ করে। কিন্তু সে রকম পরিস্থিতি না হওয়া অবধি তারা এই বিষয়ে কথা বলতে চায় না।

কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যদা’ তুলে নেয়াই দরকার? বিজেপির প্রতি এক্ষেত্রে সাধারণ জনতার সমর্থন আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে তা প্রশ্ন কি করা এভাবে করা কি হয়েছে? কারণ আমি মনে করি গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে হবে। তাদের অনুমতি নিতে হবে। ফলে এটা যেভাবে হয়েছে সেভাবে হওয়াটা উচিত হয়নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ