শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

রাব্বানী ডাকসু থেকে পদত্যাগ না করলে ব্যবস্থা -ভিপি নুর

স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকা, শৃংখ্লাভঙ্গসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অপসারিত হওয়া গোলাম রাব্বানীকে স্বেচ্ছায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেছেন, রাব্বানীর উচিত ডাকসুর জিএস পদ থেকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করা।
চাঁদাবাজির অভিযোগে রাব্বানীর সঙ্গে ছাত্রলীগের সভাপতি পদ থেকে অপসারিত রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট থেকে পদত্যাগ করেছেন। এর পর রাব্বানীর পদত্যাগের দাবি আরও জোরালো হয়।
এ বিষয়ে নুরুল হক নুর সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, গোলাম রাব্বানী যেহেতু তার নিজ ছাত্র সংগঠন থেকে বাদ পড়েছেন চাঁদাবাজির অভিযোগ মাথায় নিয়ে, সেখানে তিনি কী করে ডাকসুর জিএস পদে থাকেন? যেখানে ছাত্রলীগই তাকে রাখেনি।
রাব্বানীর সমালোচনা করে নুরুল হক নুর বলেন, ছাত্রলীগ তো শুধু একটা ছাত্র সংগঠন। আর ডাকসু তো হলো সব ছাত্র সংগঠনের একটা প্ল্যাটফর্ম। সেখানে এমন বিতর্কিত, দুর্নীতিবাজ তো থাকতে পারেন না। তাহলে তো সারা দেশের সব ছাত্র সংগঠন বিতর্কিত হবে। তিনি বলেন, ডাকসুর বর্তমান জিএসের বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগের পর আমরা আশা করেছিলাম, তিনি নিজের সম্মানের দিকে তাকিয়ে পদত্যাগ করবেন। অথচ তিনি এখনো সেটি করেননি। নৈতিক দিক থেকে হলেও তার পদত্যাগ করা দরকার ছিল। যিনি চাঁদাবাজির অভিযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁর কাছ থেকে নৈতিকতা আশা করা যায় না। নৈতিকতা থাকলে তো এত বড় পদে থেকে এসব করতে পারতেন না’- যোগ করেন নুর।
 গোলাম রাব্বানী ডাকসু থেকে পদত্যাগ না করলে তার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে ভিপি নুর বলেন, আমি নিজেই এ বিষয় নিয়ে ডাকসু সভাপতি ও ঢাবি ভিসির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, গঠনতন্ত্র দেখে ব্যবস্থা নেবেন। দরকার হলে ডাকসুর সভা ডেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
ঢাবি ভিসি ব্যবস্থা না নিলে কী করবেন এমন প্রশ্নে ডাকসুর এই ভিপি বলেন, আমরা চাই, গোলাম রাব্বানী নিজ থেকে ডাকসুর প্রতি সম্মান রেখে পদত্যাগ করুক। না হলে ডাকসুতে বিষয়টি আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তা ছাড়া ডাকসুর গঠনতন্ত্রেও আছে, সভাপতি চাইলে কারো বিরুদ্ধে অনুযোগ থাকলে তাঁকে বহিষ্কার করতে পারেন। তবে বহিষ্কৃত হওয়ার চেয়ে নিজে থেকে সরে গেলে সেটাই হবে সম্মানের।
 শোভনের পদত্যাগের উদাহরণ টেনে ভিপি নুর বলেন, ছাত্রলীগের সদ্য পদত্যাগী সভাপতি নিজের বিবেকের তাড়নায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানের দিকে তাকিয়ে সিনেট থেকে পদত্যাগ করেছেন। অথচ গোলাম রাব্বানী এখনও ডাকসু থেকে পদত্যাগ করেননি।
এদিকে ভিপি নুরের দাবির বিষয়ে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘হু ইজ নুরুল? নুরুল কে?’
তিনি বলেন, পদত্যাগ কেন করব? পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। ডাকসু বা সিনেট থেকে আমার পদত্যাগের দাবিটি খুবই খোঁড়া ( লেইম)। এই দাবির ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন রাব্বানী।
 শোভনের সিনেট সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে গোলাম রাব্বানী বলেন, শোভন ডাকসুতে নির্বাচিত ছিলেন না, ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে আমরা সম্মিলিতভাবে তাকে সিনেটে নিয়ে এসেছিলাম। নেত্রীর মনে কষ্ট দিয়ে তিনি অনুতপ্ত, তিনি নিজের জায়গা থেকে পদত্যাগ করেছেন। এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে তিনি অন্যায় করেছেন। যেসব অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, একটিও প্রমাণ হয়নি, হবেও না। কারণ আমরা এ ধরনের কিছু করিনি। পত্রপত্রিকায় যা এসেছে, কোনোটিরই দালিলিক তথ্যপ্রমাণ নেই
নিয়ম মেনে ভর্তি হয়েই ডাকসু নির্বাচন করেছেন ছাত্রলীগ নেতারা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রলীগের যেসব নেতা নির্বাচন করেছেন, তারা নিয়ম মেনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সভাকক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেছেন তিনি। সাংবাদিক সম্মেলনে আরও ছিলেন ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক লিপি আক্তার, সদস্য নিপু ইসলাম প্রমুখ। একই প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানী সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন না।
ডাকসু এজিএস সাদ্দাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা সবাই নিয়ম অনুসরণ করে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঐতিহ্য রয়েছে, প্রথা রয়েছে, রীতি রয়েছে, সে প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা সুস্পষ্ট করে ডাকসুর পক্ষ থেকে বলতে চাই- তারা ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি হননি। ভর্তি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে। এই প্রক্রিয়ায় শুধু ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভর্তি হয়নি; ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন ও স্বতন্ত্র জোটের অনেক নেতাকর্মীও ভর্তি হয়েছেন। দুঃখজনক যে, শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠনকে দায়ী করে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
যারা ডাকসু নির্বাচনে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন, তারা এ বিষয়কে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন সাদ্দাম।
প্রসঙ্গত, ডাকসু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ৩৪ শিক্ষার্থী অনিয়ম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে সাত জন ডাকসুতে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের ছাত্রত্ব বাতিল এবং ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কয়েকটি সংগঠন আন্দোলন করছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থানের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসু নেতারা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ