শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সারা দেশে কমলেও রাজধানীতে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

 

স্টাফ রিপোর্টার: ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীতে আবারও বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা, তবে সারা দেশে ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা কমেছে। এই ঘণ্টায় সারা দেশে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা ৬৫৩ নতুন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে গতকাল কোন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার এন্ড কন্ট্রোল রুম থেকে এই তথ্য পাওয়ায় যায়।

তথ্য অনুযায়ী, সোমবা সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ১৯৮ জন নতুন রোগী। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ১৯৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হন।

ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলাগুলোর হাসপাতালে সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৪১৭ জন রোগী, যা গতদিনের চেয়ে ৪৩ জন কম।

কন্ট্রোল রুম বলছে, এই সময়ের মধ্যে ঢাকার হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৪১৫ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৫৪ জন।

সারা দেশে বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট দুই হাজার ৫৪৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এরমধ্যে রাজধানীর ১২টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত এবং ২৯টি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন এক হাজার ৩৩ জন, আর ঢাকা বিভাগসহ মোট আট বিভাগে ভর্তি আছেন এক হাজার ৫১৩ জন।

 এদিকে এডিস মশা থেকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া হয়, সে তথ্য এখন অনেকেরই জানা। কিন্তু এই মশা আরও যে মারাত্মক রোগের জীবাণু বহন করে, সেটি হলো জিকা।

অথচ মানবদেহে জিকা শনাক্ত করার কোনো ধরনের ব্যবস্থা বাংলাদেশের হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় একেবারেই নেই। শুধু সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে জিকা শনাক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে।

ব্রাজিলে জিকার প্রাদুর্ভাবকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এখন জিকা চলে এসেছে বাংলাদেশের ঘরের কাছেই ভারত পর্যন্ত।

ডেঙ্গুজ্বরের ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ গত কয়েক মাস ধরে সজাগ। কিন্তু বাংলাদেশ জিকা সম্পর্কে কতটা প্রস্তুত?

জিকা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছিল উগান্ডায়ে ১৯৪৭ সালে এক ধরনের বানরের শরীরে। মানবদেহে এটি প্রথম শনাক্ত হয়েছিলো নাইজেরিয়োতে ১৯৫৪ সালে। এরপর আফ্রিকাসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের কিছু দ্বীপে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর সবচাইতে বড় প্রাদুর্ভাব হয় দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে ২০১৫ সালে।

এর লক্ষণগুলো দেখে সাধারণভাবে একে খুব ভয়াবহ মনে করেনি অনেকে। লক্ষণগুলো হলো- হালকা জ্বর, চোখে ব্যথা ও লালচে রঙ, মাথা ব্যথা, গিঁটে গিঁটে ব্যথা এবং শরীরে র‌্যাশ।

কিন্তু পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন এই রোগ সম্পর্কে যা মনে করা হচ্ছে, মশাবাহিত জিকা ভাইরাস তার চেয়েও অনেক বেশি ভয়ানক। এর ফলে স্নায়ু বিকল হয়ে যেতে পারে, যাতে অস্থায়ী পক্ষাঘাত দেখা দিতে পারে।

কিন্তু জিকার সবচেয়ে ভয়াবহ একটি বিষয় হলো গর্ভবতী নারী যদি এতে আক্রান্ত হন হবে তার শিশু মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত হতে পারেন। এতে শিশুর মাথা ছোট হয়। অর্থাৎ তাদের মস্তিষ্ক সঠিক আকারের হয় না বা মস্তিষ্কের সঠিক বৃদ্ধি হয় না।এমন শিশুদের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ার অথবা দেরিতে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। জিকার কারণে ২০১৫ ও ১৬ সালের দিকে ব্রাজিলে চার হাজারের মতো শিশু এমন সমস্যা নিয়ে জন্মে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্বের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি শহরে এডিস মশার যে ঘনত্ব রয়েছে, তা অনেক বেশি। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার সঙ্গে কোনোভাবে যদি এই ভাইরাসটা বাংলাদেশে চলে আসে, তাহলে কিন্তু এটা আমাদের দেশে।

যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রধান ড. সানিয়া তাহমিনা বলছেন, জিকার ব্যাপারে আসলে উচ্চমহল থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। যে দেশে এডিস মশা আছে, সেদেশে এর ঝুঁকি আছে আমরা জানি। আমরা জানি, যদি আমরা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে এর দ্বারা বহন করা কানো অসুখই হবে না।

ড. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে যে, এখন থেকে ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তীতে জিকাও ডেঙ্গুর মতো ছড়াতে পারে। রাগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলছেন, আমরা চারটি হাসপাতাল থেকে নিয়মিত রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করছি। সেগুলোর তিনরকম পরীক্ষা হয়। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা। এ ছাড়া মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত শিশুদের ওপর সারভেইল্যান্সের প্রস্তুতি চলছে, যাতে আমরা জানতে পারি তারা জিকায় আক্রান্ত হয়েছে কি না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ