শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

পাপের ভারে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হবে

স্টাফ রিপোর্টার : এল.ডি.পি সভাপতি ও জাতীয় মুক্তিমঞ্চের সমন্বয়কারী ড. কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, আমরা এদেশ স্বাধীন করের্ছি। সুতরাং একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেকের তাড়নায় চুপ করে বসে থাকতে পারি না। এদেশের জনগণের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে এবং সে দায়িত্ব পালনে আমরা বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। আমরা অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশব্যাপী ক্ষমতাসীনদের লাগামহীন অপশাসনের বর্ণনা দিতে গিয়ে অলি আহমেদ বলেন, বিগত কয়েকদিন পূর্বে হঠাৎ সরকার জানতে পারল যে, ঢাকা সহ দেশের সর্বত্র ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও কৃষকলীগের কিছু সদস্যরা জুয়া, মদ এবং অসমাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে। এর সাথে জড়িত ঢাকা মেট্রোপলিটনের কিছু কিছু কর্তা ব্যক্তি ও থানার ওসিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব এবং প্রধান প্রকৌশলীরা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কয়েক লক্ষ হাজার কোটি টাকা ঘুষ হিসাবে গ্রহণ করে বিদেশে পাচার করেছে। জি কে শামীমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বস্তায় বস্তায় টাকা মন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে এবং টিআইবি’র পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে। অনুরূপভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে। এখন জনগণের মনে প্রশ্ন হল, তাদের কষ্টার্জিত এই টাকা গুটি কয়েক অসাধু রাজনীতিবিদ এবং সরকারি কর্মচারীরা কিভাবে আত্মসাদ করেছে, কিভাবে বিদেশে পাচার করেছে। সরকার কি আদৌ জানত না? তাহলে গোয়েন্দা বা পুলিশের কি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমরা মনে করি, এই ধরণের জঘন্য রাষ্ট্রদ্রোহী অনৈতিক কাজ কখনও সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্টপোষকতা ছাড়া সম্ভব নয়।
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, দেশের যুব সমাজ ও ছাত্র সমাজ হতাশ, তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কারণ প্রায় ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যাঞ্চেলরের পদত্যাগের দাবীতে অথবা অন্যান্য সমস্যা নিয়ে আন্দোলন অব্যাহত আছে। ফলে লেখাপড়ার মানও নিম্নগামী। আমাদের মধ্যে মনুষ্যত্বও বিলোপ পেয়েছে। সামাজিক অবক্ষয় ঘটেছে। ধর্মীয় অনুশাসনকেও কেউ মানছে না। সর্বত্র অরাজকতা এবং অনিশ্চয়তা। ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা। দেশে অনৈতিক ও অসমাজিক কার্যকলাপ শহর-সহ গ্রামাঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছে। উত্তরণ প্রয়োজন।
কর্নেল অলি আরো বলেন, অনেক অবৈধ মন্ত্রী বলছেন জুয়া ও মাদক জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমানের সময় থেকে আরম্ভ হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিগত ১১ বছর এইগুলি বন্ধ করার জন্য আপনারা কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য অনেকগুলি আইন বাতিল করা হয়েছে এবং নতুন নতুন আইন পাশ করা হয়েছে অথচ জুয়া ও মাদক বন্ধ করার জন্য কোন আইন পাশ করা হয় নাই। শুধু অন্যকে দোষারোপ করে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চায়। তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা সকলে সরকারী দলের নেতা। সুতরাং অন্যের উপর দোষ চাপায়ে পার পাওয়া যাবে না। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন ক্লাবে কেন অভিযান করা হল। উচিত ছিল পরিকল্পিতভাবে সমগ্র দেশে একই দিন এবং একই সময়ে অভিযান পরিচালনা করা। তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহীরা গা ডাকা দিতে পারত না। এর অর্থই হল সরকার তাদের নেতা কর্মীদের পালানোর সুযোগ করে দিয়েছে। মালামাল ও টাকা-পয়সা সরানোর জন্য সময় দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত এখনও পর্যন্ত খালেদ, শামীম, লোকমানদের দোসরেরা/পার্টনারেরা কেন গ্রেফতার হল না। যে সমস্ত মন্ত্রী, এম.পি এবং নেতাদের নাম খালেদ ও শামীম প্রকাশ করেছে তাদেরকে কেন জেলে নেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও যে সমস্ত এম.পি স্বনামে বেনামে ঠিকাদারী করছে, তাঁদেরকে কেন খুঁজে বের করা হচ্ছে না। এর দায়িত্ব কার। ব্যবসায়ীদেরকে ব্যবসা করতে দিন। রাজনীতিকে কলুষিত করতে দেওয়া যাবে না। দুদকের ভূমিকা আরো স্বচ্ছ হওয়া উচিত ছিল। নেপথ্যের নায়করাও ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। গত কয়েকদিনে অনেক এম.পি ও নেতা ভারতের ভিসা নিয়ে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশের বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, দুর্নীতিবাজ, লুঠেরা এবং খুনিরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পার পেয়ে যাচ্ছে ও পুরস্কৃত হচ্ছে। কিভাবে অনেক মন্ত্রী, এম.পি এবং তাদের স্ত্রী রাতারাতি ব্যাংক, বীমা, বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় বড় হোটেলের মালিক হল, তা খুঁজে বের করা উচিত। আমরা মনে করি, সন্দেহভাজন এসব মন্ত্রী ও এম.পি’র স্ত্রীদের আয়কর রিটার্ণের ফাইলগুলিও পরীক্ষা করা উচিত।
অলি বলেন, এখনও পর্যন্ত সাগর-রুনির খুনিরাও ধরা পরে নাই। ব্যাংকের টাকা লুণ্ঠনকারীদের ধরা হচ্ছে না বরং তাদেরকে বর্ধিত সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। শেয়ার মার্কেট কেলেংকারীর সাথে জড়িতদের কোন শাস্তি হয় নাই। হলমার্ক, যুবক, ডেসটিনি এর সাথে জড়িত অনেক দুর্নীতিবাজরা পার পেয়ে যাচ্ছে। মনে রাখবেন আল্লাহ্র কোরআন সত্য। তাদের জন্য কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে। হয়ত সেই দিন আর বেশী দূরে নয়। জনগণ অন্যায়কারী ও জুলুমবাজদের বিচার করবে। বেকার যুবকেরাও বসে থাকবে না। একদিন না একদিন মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে আসবেই।  বিবেকের তাড়নায় হয়ত দুর্নীতিবাজরাও সরকারকে সমর্থন দেবে না, অন্যায়কারী এবং জুলুমবাজদের ধ্বংস অনিবার্য। পাপের ভারে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হবে। অতীতেও অনেকের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। সুতরাং সময় ক্ষেপন করে লাভ হবে না। যত দ্রুত সম্ভব সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে পদত্যাগ করুন। তত্তা¡বধায়ক সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ