শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বৃষ্টি বাদল উপেক্ষা করে প্রার্থীদের গণসংযোগ

মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, রংপুর অফিস : রংপুর-৩ সদর আসনের উপ-নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রার্থীদের গণসংযোগ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রার্থীদের গণসংযোগে মুখরিত হয়ে উঠেছে এ আসনের জনপদ। গণসংযোগ, পোস্টার, ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে প্রার্থীরা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন।
 মহাজোট প্রার্থী সাদ এরশাদ তার বাবা এইচএম এরশাদের নানা উন্নয়নের বিষয় তুলে ধরছেন ভোটারদের সামনে। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোটারদের হৃদয়ে স্থান করার চেষ্টা করছেন। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। বাবার মত নিজেকে রংপুরের মানুষের জন্য উৎসর্গ করার আশ্বাষ দিচ্ছেন। বাবা এইচএম এরশাদের মত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রংপুরের মানুষের ভালোবাসা পেতে চান। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আসন্ন নির্বাচনে তাকে লাঙ্গল প্রতীকে বিজয়ী করলে পিতার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে চান। নগরীর সাতগারা, দামোদনপুর, চকইসবপুর, কেরানীরহাট নির্বাচনি প্রচারণা চলাকালে জাপা প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চান এরশাদপুত্র রাহগীর আল-মাহি সাদ। সাদের গণসংযোগে ভোটাররা তাকে আশ্বস্ত করেছেন বলে তিনি জানান। এ সময় জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ স¤পাদক ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গিরসহ স্থানীয় জাপা নেতৃবৃন্দ তার সাথে ছিলেন। এবারের উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন- বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমানের ”ধানের শীষ”, জাপার সাদ এরশাদ এর ”লাঙ্গল”, এরশাদের ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রাথী হোসেন মকবুল শাহারিয়ার আসিফের ”মোটরগাড়ি”, খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজুর ” দেয়াল ঘড়ি”, গণফ্রন্টের কাজী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর ”মাছ” এবং এনএনপির শফিউল আলমের ”আম” প্রতীক। রংপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন জানান, উপ-নির্বাচনে আচরণ বিধি লঙ্ঘন রোধে ভিলেজেলেন্স টিম সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করছে। এসব টিমের নেতৃত্ব রয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। তাঁরা আচারণবিধি লঙ্ঘনকারী প্রার্থীর বিরুদ্ধে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেবেন। এ ছাড়া ভোট গ্রহণের দিন প্রতিটি আসনে একটি করে ভিজিলেন্স টিম দায়িত্ব পালন করবে বলে জানান রির্টানিং কর্মকর্তা। উল্লেখ্য-স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে রংপুর-৩ সদর আসনে প্রথম নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের সিদ্দিক হোসেন। এরপর ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের কাজী আব্দুল কাদের, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির শফিকুল গাণি স্বপন, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পাটির মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ২০০১ সালে জিএম কাদের, ২০০৮ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ২০০৯ সালের উপনির্বাচনে রওশন এরশাদ, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন । গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটিতে ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯২৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আর ধানের শীষের প্রার্থী রিটা রহমান পান ৫৩ হাজারের ওপরে।  আগামী ৫ অক্টোবর শনিবার এই আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে
এদিকে রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান অভিযোগ করেছেন, তার প্রতি বৈষম্য মূলক আচরণ করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা রকমের মামলা সহ হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণায় সমঅধিকার দেয়া হচ্ছে না। মহাজোটের প্রার্থীকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়া হলেও তাকে তা  থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মহাজোট প্রার্থী সভা মঞ্চ করে নির্বাচনী এলাকায় জনসভা, পথসভা করছে। এক সঙ্গে অধিক সংখ্যক মাইকের হর্ণ ব্যবহার করছে। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছেন। অথচ সোমবার আমাদের দলের মহাসচিব নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে রংপুরে আসছেন। তার নির্বাচনী সভার মঞ্চ তৈরিতে আচরণ বিধির কথা বলে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। আমি প্রশাসনের কাছে দাবি করছি নির্বাচনে প্রভাব পড়ে এই ধরণের আচরণ করা থেকে তারা যেন বিরত থাকেন। আমি ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে বেশ কয়েকটি অভিযোগ দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন আমাকে নিয়মতান্ত্রিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। রংপুরের জনগণ আর লাঙ্গলের ঘানি টানতে চান না। তারা ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। এবার তাই ধানের মূল্য পেতে তারা ধানের শীষে ভোট দিবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে নির্বাচন নিয়ে আমি এবং ভোটাররা শংকার মধ্যে রয়েছি। সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষ বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ কালে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। গণসংযোগ কালে তার সাথে ছিলেন, রংপুর মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল খালেক, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সুলতান আলম বুলবুল ও রংপুর বারের সহ সভাপতি এ্যাডভোকেট রেজেকা সুলতানা ফেন্সি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রাশেদ উন নবী খান বিপ্লব, সাধারণ সম্পাদক মোখছেনুল আরেফীন রুবেল, মহানগর ছাত্রদল সভাপতি নুর হাসান সুমন, সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া ইসলাম জিম, প্রমুখ। রিটা রহমান বৃষ্টি  উপেক্ষা করে নগরীর রিপোর্টার্স ক্লাব, জাহাজ কোম্পানী মোড়, বেতপট্রি দেওয়ানবাড়ি রোড, হাড়িপট্রি, চাউল আমোদ গলিসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান জানান,  তিনি জনগণের পাশে থেকে কাজ করতে চান।  তাকে ভোট দিলে উন্নয়ন হবে। তিনি আরো জানান, যদি নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহারিয়ার আসিফ- তৃণমূলের সাধারণ মানুষের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের সমস্যা সমাধানে, সুখে-দুঃখে পাশে থাকছেন, যখন যেভাবে পারছেন পাশে দাঁড়িয়েছেন এসব তুলে ধরে তিনি ভোট চাচ্ছেন। তিনি আশাবাদী এবার তিনি জয়ী হবেন। খেলাফত মজলিস প্রার্থী তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু দেয়াল ঘড়ী প্রতীক নিয়ে গণসংযোগে প্রতিনিয়তই ছুটছেন নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়। তার দাবি জনগণের সাড়া পাচ্ছেন ব্যাপক। গণফ্রন্টের প্রার্থী কাজী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ (মাছ ) প্রতীকে একাই ছুটে বেড়াচ্ছেন গণসংযোগ করে। এছাড়াও রংপুরবাসীকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে এনএনপির প্রার্থী শফিউল আলম । তিনি এখানে আম প্রতীক নিয়ে নেমেছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ