শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

নৈতিক স্খলন বাড়ছে পুলিশে ॥ প্রতিরোধে ইউনিট প্রধানদের কাছে ১৪ দফা নির্দেশনা

তোফাজ্জল হোসেন কামাল : পুলিশের নানামুখী অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা পুরনো। জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নজিরও আছে। তবুও পুলিশের সদস্যরা নানামুখী অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছেই। এটা পুলিশের নৈতিক স্খলন বলে দাবি করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের বেশ ক‘জন সদস্য নারী কেলেংকারীতে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের ধর্ষণকান্ডে বিব্রত হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগও। একের পর এক ধর্ষণকান্ডের বাইরে অতি সম্প্রতি ক্যাসিনোকান্ডেও বিতর্কিত হয়ে পড়েছে পুলিশ। এ ছাড়া, ঘুষ-দুর্নীতি-চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধের সাথেও পুলিশ‘র নাম আলোচনায়।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে , পুলিশের যারা দুর্নীতিতে জড়াচ্ছেন, সেটা সংখ্যা হিসেবে খুব বেশি নয়। তবে কম বেশি যেটাই হোক, এরকম অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
পুলিশ সদর দফতরের সহাকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, গত ২০ মাসে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ১৪ হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ধর্ষণকান্ডে আস্থা হারাচ্ছে পুলিশ বিভাগ : সম্প্রতি কয়েকটি থানার ওসির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে ওএসডি বা বরখাস্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ রাজধানীর পল্টন মডেল থানার ওসি মাহমুদুল হককে বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে তাকে বরখাস্তের পাশাপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় পুলিশ সদর দপ্তর।
মতিঝিল বিভাগের ডিসি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, এক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কারণে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
একইদিন পাবনার চাটমোহরে পরকীয়ার ঘটনায় মো. ফিরোজ আলী নামে এক কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে পাবনা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে তাকে প্রত্যাহার করে পাবনা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাটমোহর পৌর সদরের দোলং মহল্লার সিঙ্গাপুর প্রবাসী নাসির উদ্দিনের স্ত্রী ১ সন্তানের জননী মনোয়ারা খাতুনের (৪০) সঙ্গে চাটমোহর থানার কনস্টেবল মো. ফিরোজ আলীর দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া সম্পর্ক চলে আসছিল। সোমবার রাত ৮টার দিকে ফিরোজ আলী মনোয়ারার ঘরে প্রবেশ করে। স্থানীয় জনগণ বিষয়টি টের পেয়ে আপত্তিকর অবস্থায় তাদের আটক করে। খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে ফিরোজকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক চাটমোহর থেকে প্রত্যাহার করে পাবনা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করে।
এ ব্যপারে চাটমোহর থানার ওসি শেখ মো. নাসীর উদ্দিন জানান, কোনো ব্যক্তির দায় পুলিশ বাহিনী নেবে না। ওই ঘটনায় কনস্টেবল ফিরোজকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পুলিশ এ্যাক্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ওই নারীর পক্ষ থেকে অভিযোগ দেওয়া হলে সে ব্যাপারেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে খুলনা জিআরপি থানা হাজতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থানার ওসি ওসমান গণি পাঠান ও এসআই নাজমুল হককে ক্লোজড করা হয়েছে। ২ আগস্ট খুলনার জিআরপি থানার ওসি ওসমান গণি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক তরুণীকে (২১) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ পাওয়ার পর আদালতের নির্দেশে গত ৫ আগস্ট দুপুরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মিলে।
এ ছাড়া , কুষ্টিয়ার শার্শা থানার এসআই খায়রুলকে ধর্ষণের দায়ে প্রত্যাহারের পর শার্শা থানার ওসি এম মশিউর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কারণ তিনি এই ধর্ষণের দায় এড়াতে পারেন না বলে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে ৭ সেপ্টেম্বর যশোর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তবে যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হক সাংবাদিকদের জানান, শার্শা থানার ওসি এম মশিউর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়নি। দীর্ঘদিন একই জায়গায় থাকায় প্রশাসনিক কারণে পুলিশের হেড কোয়ার্টার থেকে বদলি করা হয়েছে।
এছাড়া, ১২ সেপ্টেম্বর পাবনায় গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর মামলা না নিয়ে থানায় এক আসামির সঙ্গে বিয়ে দেয়ার ঘটনায় সদর থানার ওসি ওবায়দুল হককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর একই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এনামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে , চাঁদাবাজি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে খুলনা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার উপ-পরিদর্শকসহ (এসআই) সাত পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) বিকেলে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ জানান, ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর থেকে সাত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে একটি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ এসেছে। আর্থিক লেনদেনে যেহেতু আমরা জিরো টলারেন্স তাই সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে এসআই লুৎফর রহমান ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কে এম হাসানুজ্জামান, এএসআই শেখ সাইদুর রহমান, এএসআই গাজী সাজ্জাদুল ইসলাম, কনস্টেবল মো. কামরুজ্জামান বিশ্বাস, জামিউল হাসান ইমন, জুয়েল শেখকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে কে জড়িত কে জড়িত নয় বলেও জানান এসপি শফিউল্লাহ।
এদিকে , গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার ৮ থানার ওসিকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনোকান্ডের কারনে এই রদবদল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একটা থানার কয়েক লাখ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, আইন শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব যাদের ওপরে থাকে তারাই যদি শপথ ভঙ্গ করে জনগণের জীবনকে বিভীষিকাময় ও অনিরাপদ করে তোলেন তার শাস্তি কি শুধু ওএসডি বা সাময়িক বরখাস্ত? তাদের জেল হবে না? জরিমানা হবে না? এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কি তাদের হবে না যা দেখে কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো কর্মকর্তা এসব অপরাধে লিপ্ত হওয়ার সাহস না করে? এসব প্রশ্ন তুলছেন অনেক নাগরিক। তারা বলছেন, কারো অপরাধ উল্লেখ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে তার যে শাস্তির বিধান আছে, কোনো নারীকে থানায় এনে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ কিংবা কোনো কলেজছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তাকে হোটেলে এনে নিয়মিত ধর্ষণ করে অন্তঃসত্ত্বা করার শাস্তির বিধান কি একই? আর হাতে গোনা এসব ওসির অপকর্মের দায় নিতে হচ্ছে গোটা পুলিশ বিভােগকে।
এই বিষয়ে সাধারণ মানুষ বলছে, পুলিশ বিভাগের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর যে নির্দেশ তা অমান্য করে কতিপয় পুলিশ অফিসার তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধি করে গোটা পুলিশ বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কেউ বলছেন, রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কার কাছে বিচার চাইবে।
নৈতিক স্খলন প্রতিরোধে পুলিশের ইউনিট প্রধানদের ১৪ নির্দেশনা  : ক্যাসিনো কান্ডে জড়িত থাকাসহ নৈতিক স্খলন, অবৈধ আর্থিক লেনদেন, ঘুষ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের জন্য সব ইউনিট প্রধানদের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। নৈতিক স্খলনরোধে করণীয় প্রসঙ্গে ১৪টি নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই চিঠিতে। ইউনিট প্রধানদের চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ শাখার সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. সোহেল রানা।
চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি পুলিশের কতিপয় সদস্যের কর্মকান্ডে নৈতিক স্খলনের বিষয়টি ফুটে উঠেছে যা একটি শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে পুলিশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন করেছে। নৈতিক স্খলনের বিষয়টি গোটা পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাই নৈতিক স্খলনরোধে এসব দিকনির্দেশনা পালনের জন্য অনুরোধ জানানো হলো।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পুলিশের আইন সম্পর্কে প্রত্যেক সদস্যকে প্রতিমাসে অবহিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে রোলকলে, কল্যাণ সভায় বা অন্যান্য সভায় এসব আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো উদ্ধৃত করে নৈতিক স্খলনের বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের সচেতন করতে হবে। ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্র, সরকার কিংবা কোনও বাহিনী, বিভাগ ও সংস্থা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পুলিশের কোনও সদস্য যদি নৈতিক স্খলন করে থাকেন তাহলে দেরি না করে ইউনিট প্রধানকে বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নৈতিক স্খলনের বিষয়ে সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউনিট প্রধানরা তা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। কোনও সংবাদ গোপন করার বিষয় পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট অফিসার, ইনচার্জ ও ইউনিট প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আহত, আঘাত, হেয় কিংবা সামাজিক বিতর্ক তৈরি করে এমন বিষয় শেয়ার বা পোস্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে পুলিশ সদস্যদের। এছাড়া প্রত্যেক পুলিশ সদস্য যাতে যথাযথভাবে পোশাক পরিধান করেন তা নিশ্চিত করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে যেকোনো দুর্ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসারের প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেকোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন বা অন্য যেকোনো স্পর্শকাতর ঘটনা শেয়ার বা পোস্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আসামিকে গ্রেফতার, পরিবহন এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় ফৌজদারি কার্যবিধি এবং বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। পুলিশের হাতে যাতে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার না হন সেটি নিশ্চিত ও সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দায়িত্বরত অবস্থায় দরকার ছাড়া মোবাইলে ইন্টারনেট ব্রাউজিং, চ্যাটিং, গান ও ওয়াজ শোনা বন্ধ করতে হবে। এ রকম অবস্থায় কাউকে দেখা গেলে সংশ্লিষ্ট ডিউটি অফিসার কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব পুলিশ সদস্যের পরিবারের সদস্যরা কর্মস্থলে থাকেন না তারা যাতে নিয়ম অনুযায়ী ছুটিতে যেতে পারেন সে বিষয়ে গুরুত্ব এবং নজরদারি করতে হবে। পুলিশ লাইন্স, থানা ও ফাঁড়িতে পুলিশ সদস্যের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, কেরাম, দাবা, টেবিল টেনিস, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ইউনিট প্রধানদের।
সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালীন পুলিশের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগগুলোর বিষয়েও পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশে দুর্নীতির চিত্র : বাংলাদেশে সরকারি সংস্থাগুলোর সেবাখাতে দুর্নীতি নিয়ে ২০১৭ সালে একটি জাতীয় 'খানা' জরিপ করে দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল টিআইবি। খানা বলতে সাধারনত: এক চুলায় খাওয়া-দাওয়া করেন এমন পরিবার বোঝায়। সেই জরিপে সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে দুর্নীতিতে শীর্ষে স্থান পায় পুলিশ।
দেখা যায়, পুলিশের কাছে সেবা নিতে গিয়ে ৭২.৫% খানা দুর্নীতি-অনিয়মের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে। বছরে টাকার অংকে যা দুই হাজার ১শ কোটি টাকারও বেশি।
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গ্রেফতার, ট্রাফিক সংক্রান্ত বিষয়, পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন, মামলা দায়ের, চার্জশীট এমনকি জিডি করতে গিয়েও ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ খানা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
জরিপে দেখা যায়, সবেচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় চার্জশীট সংক্রান্ত বিষয়ে। টাকার অংকে যা গড়ে ২১ হাজার টাকারও বেশি।
হাইওয়ে পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, থানা পুলিশসহ সকল সংস্থাতেই কমবেশি দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে টিআইবি'র ঐ জরিপে।
টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, জরিপ করতে গিয়ে তারা দেখেছেন পুলিশের মধ্যে দুর্নীতির ব্যাপ্তি ও গভীরতা অনেক। তিনি বলেন,"পর্যবেক্ষণে আমরা যেটা দেখতে পাই যে, এখন এমন কোন অপরাধ নেই যাতে পুলিশ জড়িয়ে পড়ছে না। এটার ব্যপ্তি খুব গভীর, বিস্তৃৃত এবং সকল পর্যায়ে। কেউ কেউ যেমন সততার দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছেন, তাদের সংখ্যা কম আবার অবস্থানও দুর্বল হয়ে আসছে।"
ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, একদিকে যেমন ব্যক্তিগতভাবে নৈতিক অবক্ষয়ের ঘটনা আছে। অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে পুলিশকে ব্যবহার করার যে প্রবণতা, সেখান থেকেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তার মতে, দুর্নীতি এতো বিস্তৃত হওয়ার কারণ এর সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ। এর ফলে যেমন অনেকে জবাবদিহিতার বাইরে থাকার সুযোগ পান। আবার অনেকে রাজনৈতিকে উদ্দেশ্য সাধনে বাধ্য হওয়ার পর নিজেও ব্যক্তিগতভাবে অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে অর্থ উপার্জনের পথ ধরছেন। তিনি বলছেন, বাহিনীর মধ্যে যেমন দুর্নীতি-অনিয়ম-অপরাধের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তেমনি রাজনৈতিক কারণে পুলিশকে অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়া বন্ধ করতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ