শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনায় সংগ্রাম হত্যায় ৫ জন গ্রেফতার ॥ ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার

খুলনা অফিস : মোবাইল চুরি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধের কারণে খুলনার রূপসা থানাধীন বাগমারা গ্রামে সারজিল ইসলাম সংগ্রামকে কুপিয়ে হত্যা মামলার ১নং আসামী রাহাত শিকদারসহ ৩ জনকে গ্রেফতার এবং হত্যায় ব্যবহৃত ২টি চাপাতি ও ২টি ছোরা উদ্ধার করেছে জেলা ডিবি পুলিশ। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান এর আদালতে ১নং আসামী রাহাত শিকদার ও আলমগীর মোল্যা হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামী বায়েজিদ সরদারকে ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন সহ আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত ১০ অক্টোবর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছে।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংগ্রাম হত্যার ঘটনায় প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বিপিএম বলেন, খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার বাগমারা এলাকায় ২৬ সেপ্টেম্বর সারজিল ইসলাম সংগ্রামকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। সংগ্রাম একটি মাছ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এ ঘটনায় রূপসা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। যার নং-২১, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়। এজহার নামীয় আসামীরা হলেন-খুলনা সদর থানার দক্ষিণ টুটপাড়া মহিরবাড়ি ছোট খালপাড় এলাকার আবুল হোসেন সিকদার এর ছেলে মো. রাহাত সিকদার (২৭), একই এলাকার আলমগীর হাওলাদারের ছেলে সোহেল হাওলাদার ওরফে গেদন সোহেল (২৫), রূপসা থানার বাগমারা এলাকার রশিদা এর বাড়ির ভাড়াটিয়া মৃত ইউনুছ শেখের ছেলে ইব্রাহিম শেখ (২৫), রূপসা থানার গোয়ালবাথান এলাকার সেলিম শেখের ছেলে অমিত শেখ (২৫), রূপসা বাগমারা এলাকার রফিকুল এর বাড়ির ভাড়াটিয়া সোবহান হাওলাদারের ছেলে সাজু ওরফে সাধু (২৬), মহিরবাড়ির খাল পাড়ের সিরাজসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জন। এ পর্যন্ত এজহার নামীয় আসামী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে খুলনা সদর থানার দক্ষিণ টুটপাড়া মহিরবাড়ি ছোট খালপাড় এলাকার আবুল হোসেন সিকদার এর ছেলে মো. রাহাত সিকদার (২৭)কে।
মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই (নি.) মুক্ত রায় চৌধুরী পিপিএম। তদন্তে প্রকাশিত আসামীদের মধ্যে আদম শেখ, সুমন মোল্লাসহ আরও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে সংগ্রাম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে রয়েছেন রাহাত ও আদম। তবে শুধুমাত্র মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড হয়নি। এর সাথে মাছ কোম্পানিতে মাছে পুশিং এর বিষয়ও জড়িত থাকতে পারে। কেননা কিছুদিন আগে মাছ কোম্পানির সাথে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য প্রশাসনের সাথে মাছ কোম্পানির মালিকদের মতবিনিময় হয়। তারপর থেকে প্রশাসন এ ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আরও ঘটনা জানা যেতে পারে বলে জানান এসপি শফিউল্লাহ।
সংগ্রাম হত্যাকাণ্ডের দুই আসামীর জবানবন্দী প্রদান : মঙ্গলবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান এর আদালতে ১নং আসামী রাহাত শিকদার ও আলমগীর মোল্যা হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন।
ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের স্বার্থে জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মো. তোফায়েল আহমেদ এর নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী অফিসারসহ ডিবির একটি বিশেষ টিম প্রযুক্তি নির্ভর তদন্তের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলার মোটিভ উদ্ঘাটন করেছে। নিহতের চাচাতো ভাই ইনজামুল এর একটি মোবাইল ফোন চুরি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধের কারণে সংগ্রামকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকা-ের সাথে জড়িত আসামী সুমন মোল্যাকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারের পর সে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে। পরবর্তীতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মামলার এজাহার নামীয় ১নং আসামী রাহাত শিকদারকে গত ৬ অক্টোবর রাত পৌনে ৯টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর আসামীর তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত আসামী আলমগীর মোল্যা (৩৭) ও বায়েজিদ সরদার (১৯)কে গত ৭ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আসামী রাহাত শিকদার এর বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ২টি ছোরা, ২টি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আসামী বায়েজিদ সরদারকে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত ১০ অক্টোবর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছে। এ হত্যা মামলার এজাহার নামীয় ১নং আসামীসহ ৬ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে ডিবি পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত হওয়ায় ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে জেলা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ সেপ্টেম্বর বেলা ১টা ৫০ মিনিটে রূপসা থানাধীন বাগমারা হিমায়ন বরফ কলের সন্নিকটে আলামিন মল্লিক এর চায়ের দোকানের সামনে ধারাল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ৯-১০ জনের একটি দল ভিকটিম সারজিল ইসলাম সংগ্রামকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ভিকটিমের মা সাবিনা ইয়াসমিন মিলি বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে রূপসা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ