শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

৬ মাসে সারাদেশে ৫৭২ শিশু ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার

স্টাফ রিপোর্টার: আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ৬ মাসে সারাদেশে ৫৭২ জন শিশু ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। নারী-শিশু যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে শিশু যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা গত বছরের ঘটনার সমান বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বেশির ভাগ ঘটনায় দেখা গেছে, শিশুরা নিকট আত্মীয়, নিকটকজন অথবা প্রতিবেশী দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এসময় বক্তারা বলেন, শিশু যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে, অন্যথায় এই ধরনের অপরাধ কমানো সম্ভব হবে না।
আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। এই উপলক্ষে গতকাল সোমবার ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এই দাবি জানায় বক্তারা।
আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটির প্রধান শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান প্রফেসর মমতাজ বেগম এডভোকেট। সচিবালয় সমন্বয়কারী ফেরদৌস আরা রুমীর সঞ্চালনায় সাংবাদিক সম্মেলনে  মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় কমিটির সদস্য তামান্না রহমান। এছাড়াও জাতীয় কমিটির জাতীয় কমিটি সদস্য মাহবুব আলম ফিরোজ, ঢাকা জেলা কমিটির সম্পাদক সৈয়দা শামীমা সুলতানা, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল, ইক্যুইটিবিডি’র মোস্তফা কামাল আকন্দ  প্রমূখ সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, দেশের ৫০টির বেশি জেলায় উদ্যাপন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও সারাদেশে র‌্যালি, সেমিনার, মানববন্ধন, মেলা আয়োজন এবং গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য সম্মাননা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদ্যাপন করা হচ্ছে। তারা আরও জানান, বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন করে আসছে। উল্লেখ্য, ইক্যুইটিবিডি আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটি’র সচিবালয় হিসেবে কাজ করছে।
তামান্না রহমান মূল বক্তব্যে বলেন, গত ৬ মাসে সারাদেশে ৫৭২ জন শিশু ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর এই শিশুদের মধ্যে একজন ছেলে শিশুসহ ২৩ জন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৩ জন ছেলেশিশু মোট ৭৫ জন শিশু। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে। গবেষণা দেখা গেছে, শতকরা ৭৫ ভাগ শিশু যৌন হয়রানির ঘটনাই ঘটে পরিবারের ঘনিষ্ঠজন, বন্ধু বা আত্মীয়দের মাধ্যমে। শিশু যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো বেশির ভাগ বাড়িতে, আত্মীয় বা পারিবারিক বন্ধুদের বাড়িতে, স্কুলে বা স্কুলে যাওয়ার পথে এবং পরিচিত পরিবেশে ঘটছে। সাধারণত নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয় বেশি হয়। পারিবারিক সুরক্ষা নেই অথবা সুরক্ষা বিষয়ে তাদের ধারণাও তেমন একটা নেই। এছাড়া শিশু নরম-কোমল, প্রতিবাদহীন এবং ভয় দেখিয়েও তাদের চুপ করিয়ে রাখা যায়, অভিভাবকরা এই বিষয়ে পারিবারিক সম্মানের কথা শিশুদের চুপ করিয়ে রাখে ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে শিশুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে।
মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, ধর্ষণের ঘটনা দ্রুত বিচার আইনে নিষ্পত্তি করতে হবে। থানায় ভিকটিম বা তার পরিবার মামলা করতে গেলে দোষারোপ না করে মামলা গ্রহণ করতে হবে এবং দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে।
জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান প্রফেসর মমতাজ বেগম এডভোকেট বলেন, শিশুদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। তাকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও নির্ভরতা দিয়ে তার জন্য স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। জাতীয় মহিলা সংস্থা দেশের ৬৪টি জেলায় কাজ করে। শিশুদের সুস্থ-সুন্দর মানসিক বিকাশের জন্য সংস্থাটি এই কমিটির সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে। পাশাপাশি সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ