শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই নিয়ন্ত্রণ নেই সরকারের

# চাল, ডাল, তেল, আটা-ময়দা ও সবজির দাম বাড়তি
স্টাফ রিপোর্টার: নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েই চলছে। পেঁয়াজের দাম এখনো নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে। গতকালও আরেক দফা বেড়েছে  পেঁয়াজের দাম। সরকারের নানা পদক্ষেপের পরও নিয়ন্ত্রণে নেই নিত্যপণ্যের বাজার। চাল, ডাল, তেল, আটা-ময়দাসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম চড়া। দেশী  পেঁয়াজের দাম গতকাল বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি। আর গাছসহ নতুন  পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১শ টাকা কেজি।  পেঁয়াজের পাশাপাশি অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে নেই।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৫০-২৬০ টাকায়। প্রতিকেজি দেশি নতুন পেঁয়াজ (মুড়িকাটা) বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৮০ টাকায়। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০-২১০ টাকায়। মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি। এছাড়া চীন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। আর পেঁয়াজ পাতা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ টাকা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত এক মাসে দেশি পেঁয়াজ ৯৫ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে।
বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা, যা দাম বৃদ্ধির আগে বিক্রি হয়েছিল ৪২-৪৪ টাকা কেজি। নাজিরশাল বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৮ টাকায়, যা আগে ৪৪-৪৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। বি আর-২৮ বিক্রি হয়েছে ৩৮-৪০ টাকায়, যা দাম বাড়ার আগে বিক্রি হয়েছে ৩৪-৩৫ টাকা কেজি। এছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকায়, যা আগে প্রতিকেজি ৩২-৩৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
টিসিবির তথ্যমতে- বাজারে গত এক মাসে মোটা চাল ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। আর সরু চাল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ৮৫-৯০ টাকায়, যা দাম এক মাস আগে ছিল ৭৮-৮০ টাকা। পাম অয়েল লিটারে ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি বলছে, এক মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর পাম অয়েল ৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কাঁচাবাজারে বাজারভেদে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা। আর আলুর দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। কিছুটা দাম বেড়েছে শাকের বাজারেও। অন্যদিকে বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে সব ধরনের মাছ। মাছভেদে কেজি প্রতি ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচা বাজারে শিম (কালো) বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এক কেজি সাদা শিম। গাজর (ফ্রেশ) বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়, গাজর (রেগুলার) ৬০ টাকায়, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, ঝিঙা-ধুন্দল ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, উস্তি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, কাকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, বেগুন আকারভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকায়, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, পেঁপে ২৫ থেকে ৪০ টাকায়, কচুর ছড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, কচুর লতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় এবং কাঁচামরিচ ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
অন্যদিকে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শসার বাজার চড়া থাকলেও সপ্তাহের ব্যবধানে তা কেজি প্রতি ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে শসা (প্রকারভেদে) ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ক্ষিরা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া আকারভেদে প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও জালিকুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
বাজারে নতুন আলু এলেও দাম কমেনি মোটেও। উল্টো কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে পুরাতন আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা করে। নতুন আলু (আকারভেদে) ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে।
সেগুনবাগিচা বাজারের সবজি বিক্রেতা শামিম বলেন, শীতের মৌসুম হলেও পাইকারি বাজারে সবজি কম আসায় দাম বেশি। আমাদের বেশি দামে কিনে, লাভ রেখে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে অন্য বছরের এ সময়ে সবজির সরবরাহ বেশি থাকে। দামও অনেক কম থাকে।
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, বাজারে সরকারি তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা সব মালামালের দর-দাম ঠিক করে দেন।
দাম বেড়েছে মাছের। মাছভেদে কেজি প্রতি ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম রাখা হচ্ছে। এসব বাজারে প্রতি কেজি (এক কেজি সাইজ) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১০৫০ টাকায়, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছিল ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায়, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছিল ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে।
এছাড়া দাম বেড়ে প্রতি কেজি কাচকি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, মলা ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, ছোট পুটি (তাজা) ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি (গলদা) ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বাগদা ৫৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, দেশি চিংড়ি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুই (আকারভেদে) ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, মৃগেল ২২০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙাশ ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, কৈ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, কাতল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এসব বাজারে মুরগি ও গরু গোশতের দাম অপরিবর্তিত আছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, লেয়ার ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, সাদা লেয়ার ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা, খাসি ৭৮০ টাকা, বকরি ৭২০ টাকা কেজি দরে।
লাল ডিম প্রতি ডজনে পাঁচ টাকা কমে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। সাদা ৯০ টাকা। ডজনে হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। এছাড়া পাকিস্তানি ডিম ১৪০ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা ডজন বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণ সর্ম্পকে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমানের বক্তব্য হলো, বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক সংস্থা থাকলেও সেগুলো তেমনভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। যার কারণে বাজারে একাধিক নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। তাদের মনিটরিং কার্যক্রম এখন পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ। যার কারণে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস বাড়ছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ