বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

রোহিঙ্গাদের আপাত সুরক্ষা নিশ্চিতে আইসিজে-এর পদক্ষেপ চায় ফর্টিফাই রাইটস

৯ ডিসেম্বর, রয়টার্স : মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনায় ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-তে করা মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে আজ। তবে চূড়ান্ত শুনানি হওয়ার আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের আপাত  সুরক্ষা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিতে আইসিজে-এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাই রাইটস।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় সাত লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসি-র পক্ষে আইসিজে-তে মামলা করে গাম্বিয়া।

গত মঙ্গলবার মামলার শুনানি শুরু হওয়ার আগে শনিবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাই রাইটস। সংস্থাটি বলেছে, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে। দেশটি জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন প্রমাণাদি দেখিয়েছে, মিয়ানমার সরকার কিভাবে তার এ সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। কিন্তু ফর্টিফাই রাইটস সবার জন্য মানবাধিকার নিশ্চিত করতে চায়।

ফর্টিফাই রাইটস-এর হাতে আসে নতুন প্রমাণাদিতে উঠে এসেছে, রোহিঙ্গাদের কিভাবে দাস শ্রমিক হিসেবে বাধ্যতামূলক শ্রম শিবিরগুলোতে ব্যবহার করে আসছে বর্মি কর্তৃপক্ষ। এমনকি রোহিঙ্গা শিশুদেরও এসব কাজে ব্যবহার করে আসছে দেশটি। এ জনগোষ্ঠীর মানুষের চলাফেরার অধিকারও সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব এমনকি তাদের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে আসছে বর্মি কর্তৃপক্ষ।

ফর্টিফাই রাইটস-এর  প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, আদালত এ ব্যাপারে জরুরিভাবে ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় সাড়া দেবে।

এদিকে এই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুর আগ মুহূর্তে মিয়ানমারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-কে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বার্মিজ কর্তৃপক্ষ। দুই দিনের সফরে শনিবার নেপিদো পৌঁছান তিনি। নেদারল্যান্ডসে যাত্রার আগে চীনা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন সু চি। বৈঠকে উভয়েই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

সর্বশেষ ২০১৬ সালে পশ্চিম ইউরোপ সফরে গিয়েছিলেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি। অর্ধ-শতাব্দীর সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি সেখানে গিয়েছিলেন গণতন্ত্রের পতাকা হাতে। ৩ বছরের ব্যবধানে এবার তিনি ইউরোপে যাচ্ছেন গণহত্যার অভিযোগ মাথায় নিয়ে। যে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে তিনি দুনিয়াব্যাপী নন্দিত হয়েছিলেন, এবার তার ইউরোপ সফরের উদ্দেশ্য তাদের গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাওয়া।

উল্লেখ্য, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বেসামরিক সরকার প্রধান সু চি-ও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহারই করেন না। বরং তাদের ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যা দেয় তারা। এখনও সু চি-র দলের মুখপাত্র মিও নায়ান্ট বলছেন, এই ‘বাঙালিদের’ চলে যাওয়ার বিষয়টি আলাদা। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ