শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদে সকল দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

0শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারীতে সরকারি দলের লোকজন জড়িত00 0সরকার দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে00 স্টাফ রিপোর্টার : জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ বলেছেন, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির সাথে সরকারি দলের লোকেরা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সরকারি দলের লোকজন সকল অন্যায়ের প্রধান হোতা হলে দেশে ইনসাফ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে কীভাবে? এ কথা বলতে গেলে তাদের কষ্ট লাগে। সরকার অন্যায়ভাবে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে আটক করে রেখেছে। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে হবে। সরকার আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদে ইসলামী ও গণতান্ত্রিক সকল দল ও জোটকে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চূড়ান্তভাবে আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য তিনি আহবান জানান। গতকাল শুক্রবার সকালে মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমীর সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নায়েবে আমীর অধ্যাপক একেএম নাজির আহমদ ও মাওলানা মুহাম্মদ আবদুস সুবহান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা রফিউদ্দিন আহমদ, কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক মো. তাসনীম আলম, ঢাকা মহানগরী জামায়াতের আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী ও কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ। মকবুল আহমদ বলেন, সরকার জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা ও অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, রাজশাহী মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর আমীর আতাউর রহমানসহ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে আটক করে রেখেছে। তারা কেউ কোন অন্যায় করেননি। অথচ তাদের গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার আজ পর্যন্ত কোন চার্জশীট দিতে পারেনি। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারকগণ বলেছেন, এভাবে একজন লোককে বিনা বিচারে আর কত দিন আটক রাখা যায়? এ থেকেই বুঝা যায় তারা কোন অপরাধ করেননি। রাজনৈতিকভাবে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। অবিলম্বে তাদের মুক্তি প্রদানের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান। জনাব মকবুল আহমদ গত ৫ এপ্রিল মুক্তাঙ্গনে জামায়াতে ইসলামীর মিছিল-সমাবেশে অন্যায়ভাবে পুলিশের হামলা, লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপে জামায়াতে ইসলামীর দুই শতাধিক নেতাকর্মী আহত হওয়া এবং অর্ধ-শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সভা-সমাবেশ করার অধিকার আমাদের সংবিধান স্বীকৃত গণতান্ত্রিক অধিকার। এ অধিকারে বাধা প্রদান করে সরকার আমাদের ওপর জুলুম করেছে। সরকার অন্যদেরকে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে কিন্তু আমাদেরকে বাধা দিচ্ছে। এ বৈষম্যমূলক আচরণের আশু অবসান হওয়া দরকার। সরকারের এ জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক ও ইসলামী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনকে চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ এক সংকটকাল অতিক্রম করছে। সরকারের জুলুম-নির্যাতন ও নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। নির্বাচিত হলেই কোন সরকার গণতান্ত্রিক হয় না। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। তারা ক্ষমতায় আসার আগে যেসব ওয়াদা করেছিল কোনটাই পালন করেনি। বরং তার উল্টো কাজই করেছে। দেশবাসীর সকলেরই মনে আছে ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে ৩১ ডিসেম্বর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাতে তিনি যা বলেছিলেন সকলের অবগতির জন্য তার মূলকথা আমি হুবহু তুলে ধরছি : ‘‘শেখ হাসিনা বলেন, বেগম খালেদা জিয়াও এ দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দেশ পরিচালনায় তারও অভিজ্ঞতা আছে। দেশ পরিচালনায় তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চাই। আমরা সবার প্রতি সমানভাবে দায়িত্ব পালন করতে চাই। আমাদের সরকার হবে সবার সরকার। তাই দেশ পরিচালনায় সবার সহযোগিতা চাই। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। হানাহানির রাজনীতি পরিহার করতে চাই। নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি উপহার দিতে চাই। বিরোধী দলকে আমরা সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা করব না। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলও রাষ্ট্র পরিচালনার অংশীদার। সংসদে ডেপুটি স্পিকার ও আনুপাতিক হারে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান পদ বিরোধী দলকে দেয়া হবে।’’ তিনি প্রশ্ন করেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সে দিনের বক্তব্য এবং আজকের ভূমিকা কী মিলে? তখন সকলেই জবাব দেন-না, মিলে না। সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সমস্যার সমাধান, দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ওয়াদা করে ক্ষমতায় এসে এসবের কোন সমাধান করতে পারেনি। দেশ পরিচালনায় বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এখন ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে। সরকার আদালতের কাঁধে ভর দিয়ে দেশের সংবিধানে হাত দিয়েছে। আদালত যদি সংসদের কাজ করতে পারে, তাহলে সংসদ আছে কেন? আজ সংবিধান ছাড়া দেশ চলছে। ফলে দেশ অরাজকতার দিকে চলে যাচ্ছে। সরকার সংবিধান নিয়ে যা খুশি তাই করবে তা দেশের জনগণ মেনে নিতে পারে না। তিনি বলেন, সরকার একদিকে বলছে তারা ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান চালু করবে। আবার বলছে সংবিধানে বিস্মিল্লাহ ও রাষ্ট্র ধর্ম থাকবে। আবার বলছে ‘আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের কথা' সংবিধানে থাকবে না। তাদের এ পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে। তারা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীনতা চালু করতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার ইভটিজিং বন্ধ করার জন্য আইন করার কথা বলছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে নর্তকী এনে তাদের দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে অশ্লীল নাচ-গান পরিবেশন করে যুব সমাজকে নৈতিক অধঃপতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা সরকারের এহেন ভূমিকার নিন্দা জানাচ্ছি। সরকার একদিকে বলছে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কোন কিছু করবে না, অন্যদিকে তারা ইসলামবিরোধী নারীনীতি চালু, ফতোয়া বন্ধ, নারীদের হিজাব পরাকে ঐচ্ছিক বিষয় ঘোষণা করে এবং ধর্মহীন শিক্ষানীতি চালু করে কার্যত ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সরকারের এহেন ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের কারণে দেশের আলেম সমাজ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে। আন্দোলন করতে গিয়ে যশোরে একজন কুরআনে হাফেজ পুলিশের গুলীতে নিহত হয়েছেন এবং আহত অপর একজন গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ইন্তিকাল করেছেন। দমন নীতি চালিয়ে আন্দোলন দমন করা যাবে না। সরকারের মন্ত্রীরা সাংবাদিকদের অশালীন ভাষায় গালি দিচ্ছেন। এ সমস্ত অন্যায় কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার ভারতকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বিনা ফিতে ট্রানজিট দিচ্ছে। চুক্তি করার পূর্বে তারা বলেছিল ভারতকে ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ নাকি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। আর এখন বলছে ভারতের নিকট থেকে কোন ট্রানজিট ফি নেয়া হবে না। এটা নাকি সভ্যতার খেলাপ। অথচ ভারতের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণের যে চুক্তি হয়েছে সে ঋণের সুদাসল ঠিকই পরিশোধ করতে হবে। তাহলে নিজ দেশের স্বার্থ অন্য দেশের কাছে বিকিয়ে দেওয়া এ কেমন সভ্যতা। আমরা সরকারের এহেন জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, গ্যাস, বিদ্যুতের অভাবে বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গ্যাস বিদ্যুতের সংযোগ না দেয়ার কারণে বহু কারখানা চালু হতে পারছে না। ৯৬ সালে যারা শেয়ার কেলেঙ্কারী করেছিল, আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বিচার করেনি। এবার যারা শেয়ার কেলেঙ্কারী করেছে তাদের বিচারের কথা সরকার মুখে বললেও আদৌ তাদের বিচার করা হবে কিনা এ ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। শেয়ার কেলেঙ্কারী ঘটনার তদন্ত করা হয়েছে। কিন্তু কারা এ কেলেঙ্কারীর সাথে জড়িত তাদের নাম বলা হচ্ছে না। সরকার বলছে তাদের নাম বলা যাবে না। আমাদের প্রশ্ন কেন তাদের নাম বলা যাবে না? তিনি বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ কর্মীদের নামে দায়ের করা সাত হাজারেরও অধিক মামলা তুলে নিয়েছে। আরো কিছু মামলা তুলে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। যাদের মামলা তুলে নেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে সাজা প্রাপ্ত খুনের আসামী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরাও রয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলের লোকদের কোন একটি মামলাও তুলে নেয়া হয়নি। সরকার বেছে বেছে নিজ দলের লোকদের চাকরি দিচ্ছে। এভাবে তারা প্রশাসন ও বিচার বিভাগকেও দলীয়করণ করেছে। ফলে প্রশাসন ও বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের ইস্যুটি একটি মীমাংসিত বিষয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই যুদ্ধাপরাধের ইস্যুটি মীমাংসা করে গিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন অফিসারকে তিনি ত্রিদেশীয় চুক্তির বিনিময়ে ছেড়ে দিয়ে বলেছিলেন, বাঙালীরা ক্ষমা করতে জানে। তাহলে এখন আবার যুদ্ধাপরাধের বিচার কিসের? এটি অন্যদের দেয়া ইস্যু&। এ ধরনের আত্নঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসুন। জামায়াতে ইসলামীকে সভা-সমাবেশ করতে বাধা দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ