বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পাঁচ কিলোমিটার সীমান্ত অরক্ষিত মিরসরাইয়ে চোরাই পথে অবাধে আসছে ভারতীয় পণ্য

মিরসরাই সংবাদদাতা : পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে মিরসরাইয়ের ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে অবাধে আসছে ভারতীয় পণ্য। ৫ কিলেমিটার সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় নির্বিঘ্নে এসব পণ্য নিয়ে আসছে চোরাকারবারিরা। শাড়ি, কাপড়, থ্রিপিস, বিভিন্ন প্রসাধনী, পিঁয়াজ, রসুন ও মসলাসহ নানা পণ্য। এছাড়াও সীমান্ত এলাকা দিয়ে নিয়ে আসছে ভারতীয় মুরগির বাচ্চা ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। কুরবানীর ঈদ সামনে রেখে চোরাকারবারীরা বেপরোয়া হয়ে  উঠেছে।

জানা গেছে, আমলীঘাট থেকে করেরহাট কয়লার মুখ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জায়গায় কাঁটা তারের বেড়া না থাকায় চোরাকারবারীরা পাচারের সুবিধা হিসেবে বেছে নেয় ওই স্থানটি। এসব স্থানে বিডিআরের টহল তেমন একটা থাকে না।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ফটিকছড়ি, হেঁয়াকো, মিরসরাইয়ের করেরহাট, বারইয়াহাট এবং ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমের একাধিক চোরাকারবারী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় পণ্য পাচার করছে।

এ ছাড়া বনভূমি বেষ্টিত হওয়ায় সীমান্তরক্ষীবাহিনীর তৎপরতাও কিছুটা সীমিত। ফলে চোরাকারবারী সিন্ডিকেট অরক্ষিত ওই সীমান্ত এলাকাকে নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে। রামগড় পৌর এলাকার মন্দির ঘাট, বল্টুরাম টিলা, অফিস টিলা, আনন্দপাড়া, পোস্ট অফিস সড়কের পাশের নদীর পাড়ের বসতি, দারোগাপাড়া, মহামুনি, ফেনীরকূল মারমা পাড়া, কাজির চর, উত্তর ফটিকছড়ির বাগান বাজার, যতিরচর, চা বাগান, নলুয়ার চর, আধারমানিক, পানুয়া এবং মিরসরাইয়ের ভবানী ইসলামপুর, রহমতপুর, কয়লা, কচুয়া, খুন্দা প্রভৃতি সীমান্ত পয়েন্টে চোরাই পণ্য নিয়ে আসে।

সূত্রে জানা যায়, মূলতঃ চোরাচালানীদের অন্তঃদ্বনেদ্বর কারণেই মাঝে মধ্যে কিছু চোরাই পণ্য ধরা পড়ে। কোন কোন সীমান্ত পয়েন্টে বিডিআরের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাচার কাজ হলেও কোথাও কোথাও আবার সীমান্তরক্ষীদের সাথে গোপন যোগসাজশে এই চোরাচালান হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিরসরাইয়ের করেরহাট এলাকায় পণ্য ঢোকার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ দিকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য যাচ্ছে মিরসরাইয়ের করেরহাট সীমান্ত থেকে।

গত ১৮ অক্টোবর রাতে উপজেলার করেরহাট ভারতীয় সীমান্তের কাটাপাহাড় থেকে ৫৬০ বোতল ফেনসিডিল আটক করে বিজিবি। ৯ অক্টোবর রাতে করেরহাট এলাকা থেকে ৪১৮ পিস শাড়ি আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ১ অক্টোবর করেরহাট থেকে চট্টগ্রাম শহরের নিয়ে যাওয়ার সময় ২২৮ পিস শাড়ি আটক করে পাহাড়তলী থানা পুলিশ। আটককৃত শাড়িগুলো চোরাকারবারী কামরুলের বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ১ সেপ্টেম্বর করেরহাটের শুভপুর থেকে ২৭ হাজার মুরগির বাচ্চা ও ৬ সেপ্টেম্বর অলিনগর সীমান্ত এলাকা থেকে ২৮ হাজার মুরগীর বাচ্চা আটক করে বিজিবি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, চোরাচালান সিন্ডিকেটের অন্যতম হচ্ছে করেরহাট এলাকার বাসিন্দা তোবারক হোসেনের ছেলে ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি কামরুল। সে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় পণ্য নিয়ে আসে। পাচার কাজের জন্য সে গড়ে তুলেছে বিশাল একটি সিন্ডিকেট। প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়না। চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে একাধিকবার গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে পুনরায় তার পূর্বের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অবশ্য চোরাচালানের বিষয়টি অস্বীকার করে কামরুল বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে করেরহাট এলাকায় বৈধভাবেই ব্যবসা করে আসছি। আটককৃত শাড়িগুলো তার নয় বলে দাবি করেন তিনি।

প্রশাসনকে ম্যানেজের বিষয়টি অস্বীকার করেন মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান।

এ বিষয়ে বিজিবি মধুগ্রাম বিওপির কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার মুহাম্মদ খোরশেদ আলম চোরাকারবারী তাদের সাথে যোগসাজশে চোরাচালান করে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘চোরাকারবারীদের সাথে আমাদের সখ্যতার কোন প্রশ্নই আসে না। অন্যথায় আমরা চোরাইপথে আসা বিভিন্ন পণ্য আটক করতাম না।'

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ