কবি জীবনানন্দ দাশ
আখতার হামিদ খান : জীবনানন্দ দাশের জনপ্রিয়তা যেন তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল: তিনি যে আমাদের, বিশেষভাবে আমাদেরই, এ সত্যটি তিনি লোকান্তরিত হওয়ার পরই যেন অনবগুণ্ঠিত হতে শুরু করল। জীবৎকালে যিনি ছিলেন প্রায় অজ্ঞাত, আজ তিনি প্রায় সর্বহৃদয়সম্বাদী। বস্তুত তিনি আজ কেবল জনপ্রিয় নন, ১৯৫৪ এ মৃত্যুর অর্ধশতাধিক কালের মধ্যে জীবনানন্দ আজ বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান পুরুষে পরিণত হয়েছেন, বাংলা কবিতার আধুনিকতার শেষ সংজ্ঞাটি তাঁর কবিতার মাধ্যমেই সংজ্ঞায়িত হয়ে উঠেছে। বাংলা কবিতা বিশ শতকে প্রবেশ করেছিল রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে, আজ প্রায় অবিসংবাদিত যে- একুশ শতকের প্রবেশমুখে জীবনানন্দই আমাদের পুুরোধা।
এ কথা বলার অর্থ এই নয় যে রবীন্দ্রনাথ আমাদের কাছে অপাংক্তেয় হয়ে গেছেন। জগৎ সংসারে দাসত্ব শেষে যখনই আমরা নিজের কাছে ফিরে আসি তখনই রবীন্দ্রনাথ আমাদের খুব আপন হয়ে কাছে আসেন; আমাদের গভীরতম সত্তার ভেতর থেকে আমাদের উথাল-পাথাল করে দিয়ে অনুরণিত হয়ে ওঠে: ‘তোমায় আমায় মিলন হবে বলে আলোয় আকাশ ভরা’ কিংবা ‘মেঘের পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে, আমায় কেন বসিয়ে রাখো একা দ্বারের পাশে।’
আমাদেরই মনের গভীর থেকে রবীন্দ্রনাথ যেন পৃথিবীর উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন:
বিরাট প্রাণের বিরাট মৃত্যুর গুপ্ত সঞ্চার
তোমার যে মাটির তলায়
তাকে আজ স্পর্শ করি, উপলব্ধি করি সর্ব দেহে মনে।
অগণিত যুগযুগান্তরের
অসংখ্য মানুষের লুপ্ত পুঞ্জিত তার ধুলোয়
আমিও রেখে যাব কয় মুষ্টি ধুলি
আমার সমস্ত সুখ-দুঃখের শেষ পরিণাম
রেখে যাব এই নামগ্রাসী, আকারগ্রাসী, সকল পরিচয়গ্রাসী
নিঃশব্দ ধূলিরাশির মধ্যে।
এরই প্রতিপৃষ্ঠে আলোছায়ার জীবনানন্দীয় ভুবন: মানুষের অস্তিত্ব বিন্দুর দুই দিকে ছড়িয়ে আছে দুই কালো সাগরের ঢেউ; ঢের দিন বেঁধেছে মানুষ এই পৃথিবীতে; আজ অগণন মানুষের শব ছাড়া আর কোন শস্য আহরণের নেই। জীবনানন্দের মনে হয় ‘সমাবৃত হয়ে আছি কোন এক অন্ধকার ঘরে’। সঠিক পথের অন্বেষণে একবার দৃষ্টি ফেরে নক্ষেত্রের দিকে, একবার প্রান্তরের দিকে কিন্তু সঠিক পথের নির্দেশ পাওয়া যায় না; মানুষের জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের মত নয়, মহিনের ঘোড়ার মত অনর্থ, যান্ত্রিক জীবনের আর কোন মানে হয় না, আর তাই ধানসিঁড়ি নদীর কিনারে জীবনানন্দ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন পউষের রাতে এই জেনে যে আর কোন দিন জেগে উঠবেন না তবু তাঁর মনে হয় আবার ফিরে আসা হবে ধানসিঁড়িটির তীরে হয়ত মানুষ নয়, হয়ত শঙ্খ-চিল শালিখের বেশে, কেন না মানুষের মৃত্যু হলে তবু মানব থেকে যায়। তাই শেষ পর্যন্ত, কোথাও তরণী আজ চলে গেছে আকাশ রেখায়- তবে এই কথা ভেবে নিদ্রায় আসক্ত হতে গিয়ে তবু জেগে ওঠে পরাস্ত নাবিক...।” [নাবিক]
বস্তুত যে কাল-পরিধিতে বাঙালি কবিতাপাঠক জীবনানন্দকে আবিষ্কার করেছে, প্রায় সে সময়েই সংগীত বাঙালির মর্মমূলে ব্যাপ্ততম পরিসর করে নিয়েছে। এক বিবেচনায়, বিংশ শতাব্দীর নাগরিক মানুষের কাছে জীবনানন্দ দাশ রবীন্দ্রনাথেরই পরিপূরক। তাঁরা দুজনই আমাদের শূন্যতাদীর্ণ নগর-যান্ত্রিক মানসের শরণবেদী। আপাত অসবর্ণ দুই কবি বিংশ শতাব্দীর বিভক্ত মানব সত্তার দুই খন্ডের কাছে ভিন্ন মাত্রায় পূর্ণ আবেদন নিয়ে উপস্থিত হতে সক্ষম।
দুই.
জীবনানন্দ ঠিক কখন থেকে কবিতা লিখতে শুধু করেছিলেন তা নিরূপিত করা যায়নি। তবে তাঁর আত্মপ্রকাশ কল্লোলের কালে। কল্লোল প্রকাশিত হয় ১৯২৩ সালে। জীবনানন্দ এক চিঠিতে লিখেছেন কল্লোলের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ না-ঘটলেও কল্লোলে কবিতা ছাপিয়েই তিনি সুখী হয়েছিলেন।
জীবনানন্দের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরাপালক লেখা হয় ১৯২৩ সালে। তাতে জীবনানন্দীয় কবিত্বের উঁকি-ঝুঁকি থাকলেও সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ও কাজী নজরুল ইসলামের স্পষ্ট প্রভাবই প্রথমত দৃষ্টিগোচর হয়। এ রকম প্রভাব থাকা অস্বাভাবিক নয়; বরং রবীন্দ্রনাথের প্রভাব না থাকার বিষয়টিই ভাবিয়ে তোলার মত। মনে রাখা দরকার, যে সময়ে বাংলা কবিতায় আধুনিকতার উন্মেষ, সে সময়েই কবি হিসেবে জীবনানন্দের আবির্ভাব। কিন্তু এ পর্যায়ে প্রাক-আধুনিকতা কালের স্রোত অবসিত হয়ে ওঠেনি; তিরিশের আধুনিকতার শিলান্যাস হলেও যতীন্দ্রমোহন বাগচী বা জসীম উদ্দীনও লিখছেন, অব্যাহত রয়েছেন অবিশ্রান্ত রবীন্দ্রনাথ। এমন সময় আধুনিক কবিদের চোখে অনাধুনিকদের কবিতা ‘পদ্য’ হিসেবে চিহ্নিত হতে লাগল।
জীবনানন্দ ঠিক কখন পুরোপুরি আধুনিক হয়ে উঠেছিলেন তার দিন-ক্ষণের হিসেব মেলানো দুরূহ। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল কখন কী করে তিনি জীবনানন্দীয় হয়ে উঠেছিলেন। ঝরাপালকের তৃতীয় গাহি মানবের জয়!
কোটি কোটি বুকে কোটি ভগবান আঁখি মেলে জেগে রয়!
সবার প্রাণের অশ্রু-বেদনা মোদের বক্ষে লাগে,
কোটি বুকে কোটি দেউটি জ্বলিছে,- কোটি কোটি শিখা জাগে,
প্রদীপ নিভায়ে মানবদেবের দেউল যাহারা ভাঙে,
আমরা তাদের শস্ত্র, শাসন আসন করিব ক্ষয়!
জয় মানবের জয়!
’ঝরাপালক’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। এর কবিতাগুলো আগের কয়েক বৎসরে লেখা। এ সময়ে জীবনানন্দের বয়স বেশি নয়, কুড়ির কোঠায়। বিষয়বস্তু, শব্দ চয়ন, ছন্দ বা কাব্য দর্শন তখনও ‘জীবনানন্দীয়’ হয়ে ওঠেনি। তবে একটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যণীয়; নিপাট অন্তঃমিলের পরিবর্তে আন্তঃমিলের প্রতি ঝোঁক। তবে আরেকটু মনোনিবেশ করলে দেখা যায় চূড়ান্ত কাব্যরীতিটি খুঁজে না-পেলেও কবি জীবনানন্দ তাঁর কবি ভুবনের দেখা পেতে শুরু করছেন। “অস্তচাঁদে” কবিতাটির প্রথম স্তবকটি দেখলে মনে হয় কেউ যেন কাঁচা হাতে জীবনানন্দেরই ভঙ্গীতে লেখার চেষ্টা করেছে:
ভাল বাসিয়াছি আমি অস্তচাঁদ, -ক্লান্ত শেষ প্রহরের শশী!
অঘোর ঘুমের ঘোরে ঢলে কালো নদী, ঢেউয়ের কলসী,
নিঝঝুম বিছানার’ পরে
মেঘ- বৌর খোঁপাখসা জ্যোৎস্নাফুল চুপে চুপে ঝরে,
.................
সে যেন দেখেছে মোরে জন্মে জন্মে ফিরে ফিরে
মাঠে ঘাটে একা একা, বুনোহাঁস জোনাকির ভিড়ে!
দুশ্চর দেউলে কোন কোন যক্ষ-প্রাসাদের তটে
দূর উর-ব্যাবিলোন-মিশিরের মরুভূ’-সঙ্কটে,
দীর্ঘকাল আগে বুদ্ধদেব বসু আমাদের জানিয়েছিলেন যে জীবনানন্দ একটি কাব্য ভাষা নির্মাণ করেছিলেন নিজেকে প্রকাশ করার জন্য। উপর্যুক্ত কবিতাটিতে ‘বুনোহাঁস’, ‘জোনাকির ভিড়’, ‘ব্যাবিলনের’, ‘মিসরের মরুভূমি’, ‘আসীরীয় সম্রাট’, পূর্ব দক্ষিণ ফ্রান্সে অবস্থিত ‘প্রুভেন্স’ অঞ্চলের ‘ক্রবাদুর’ ‘অলিভ পাতা’ ইত্যাদির ব্যবহারে এ ভাষার সূত্রপাত লক্ষ্যণীয়। ঝরাপালকেই জীবনানন্দ লক্ষ্য করেছেন- চাঁদ আজো জেগে আছে অপলক যদিও ব্যাবিলন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে; জেনেছেন- সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয়; শুনেছেন- নিবিড় কাননে, তটিনীর কূলে ঘরিয়াল ডাহুক শালিক গাঙচিল বুনোহাঁস ফিরে ফিরে ডেকে যায়।
দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ধূসর পান্ডুলিপি জীবনানন্দের প্রথম পরিচায়ক কবিকৃতি। এই ক্ষীণতনু গ্রন্থে ছিল সেই সব অমর কবিতা- নিজকর্ন স্বাক্ষর, মাঠের গল্প, সহজ, কয়েকটি লাইন, অনেক আকাশ, পরস্পর, বোধ, অবসরের গান, ক্যাম্পে, জীবন, শকুন, স্বপ্নের হাতে এবং মৃত্যুর আগে। কিন্তু চারিত্র্যলক্ষণ নিরূপিত হলেও জীবনানন্দ সহসা সহজবোধ্য হয়ে ওঠেননি। এমন কী রবীন্দ্রনাথের কাছেও না। কেন-না, কবিতা পত্রিকায় যখন ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতাটি ছাপা হল তখন রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধেদেব বসুকে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ঐ কবিতার কেবল চিত্ররূপাময়তার কথাই উল্লেখ করেছেন।
‘চিত্ররূপময়তা’ জীবনানন্দের প্রায় সব কবিতারই অনবদ্য বৈশিষ্ট্য; কিন্তু ‘মৃত্যুর আগে’ কি কেবলই চিত্ররূপময় কবিতা? হ্যাঁ, এই কথা ঠিক যে জীবনানন্দ দাশ তাঁর কাব্যের বহিরাঙ্গিকে অনিন্দ্যভাবে চিত্ররূপময়। কিন্তু সামগ্রিকভাবে পরবর্তীকালে ধূসর পা-ুলিপি’তে সংকলিত এই বিখ্যাত কবিতাটির বৃহত্তর বৈশিষ্ট্য চিত্ররূপময়তার চাইতে অন্তর্লীন বাণী যা বিংশ শতাব্দীর প্রপীড়িত আধুনিক মননশীলতার অনিবার্য অভিজ্ঞান। কিন্তু এর কিছুই রবীন্দ্রনাথকে স্পর্শ করল না!- ঝরাপাতার মত কবিতাটির বহিরাঙ্গিক বৈশিষ্ট্যর নীচে চাপা পড়ে রইল। অথচ কবিতাটির শেষ স্তবকেও যে প্রচন্ড প্রশ্ন কবি তুলেছেন কী-ভাবে তা অগ্রাহ্য করা সম্ভব?
আমরা মৃত্যুর আগে কী বুঝিতে চাই আর? আমি না কি আহা,
সব রাঙা কামনার শিয়রে যে দেয়ালের মতো এসে জাগে
ধূসর মৃত্যুর মুখ-একদিন পৃথিবীতে স্বপ্ন ছিল- সোনা ছিল যাহা
নিরুত্তর শান্তি পায়- যেন কোন মায়াবীর প্রয়োজনে লাগে।
কী বুঝিতে চাই আর? রৌদ্র নিভে গেলে পাখিপাখালীর ডাক
শুনি নি কি? প্রান্তরে কুয়াশায় দেখি নি কি উড়ে গেছে কাক!
কিন্তু স্পষ্টত রবীন্দ্রনাথ তা অগ্রাহ্য করেছিলেন। তাঁর সম্পাদনায় ১৯৩৮ সালে যখন আধুনিক বাংলা কবিতার সংকলন হল তাতে তিনি ‘মৃত্যুর আগে’র শেষ দুই স্তবক বাদ দিয়ে কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করেন।
মৃত্যুর পর প্রকাশিত রূপসী বাংলা জীবনানন্দের জনপ্রিয়তম কাব্যগ্রন্থ। যে সময় ধূসর পা-ুলিপি প্রকাশিত হয়, তার আগেই ১৯৩৪ সালে, রূপসী বাংলা’র কবিতাগুলো তিনি লিখেছেন। কিন্তু জীবদ্দশায় এ কবিতাগুলো প্রকাশ করেননি জীবনানন্দ। “এই পৃথিবীতে আমি অবসর নিয়ে শুধু আসিয়াছি”, “পৃথিবীর পথে আমি বহুদিন বাস করে হৃদয়ের নরম কাতর/ অনেক নিভৃত কথা আমি জানিয়াছি” কিংবা “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ/ খুঁজিতে যাই না আর” এরূপ বেদনার্ত, বাসনাকাতর, কামনাসিক্ত পঙক্তিমালার মধ্যে অকপট ধরা দিলেও তা প্রকাশের জন্যে জীবনানন্দ সহসা প্রস্তুত ছিলেন না বলে মনে হয়। ফলে ১৯৩৪ এ লিখিত হওয়ার পরবর্তী বছরেও এ কবিতাগুলো জীবনানন্দের কাছে প্রকাশানুকূল হয়ে ওঠেনি।
জীবদ্দশায় প্রকাশিত জীবনানন্দের অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলো হল বনলতা সেন (১৯৪২, বর্ধিত সংস্করণ ১৯৫২), মহাপৃথিবী (১৯৪৪) এবং সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮)। মৃত্যুর পর রূপসী বাংলা ছাড়াও প্রকাশিত হয় বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১)। রূপসী বাংলা এবং বেলা অবেলা কালবেলা জীবনানন্দ নিজেই পরিকল্পনা করে গিয়েছিলেন। এ দুটি পান্ডুলিপি ছাড়াও মৃত্যুর পর জীবনানন্দের অনেক অপ্রকাশিত কবিতা ইতোমধ্যে আবিষ্কৃত ও প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত অপ্রকাশিত মিলিয়ে এ যাবৎ (১৪১২৬) প্রাপ্ত কবিতার সংখ্যা সাতশোর কাছাকাছি। এর অনৈক কবিতাই খসড়া পর্যায়ের বিবেচনা করা চলে। তবু বাছাই করে আরও তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে। এগুলো হল সুদর্শনা (১৩৮০), মহাবিহঙ্গম (১৩৮৬) এবং আলো পৃথিবী (১৩৮৮)।
সে যাই হোক, আমরা যদি জীবনানন্দের জীবনকালের প্রকাশিত কবিতাগুলোর দিকে তাকাই তবে ক্রমশ লক্ষ্য করি পরিবর্তনের ঢাল। ‘বনলতা সেন’ এ যে জীবনানন্দ লিখলেন-
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;.... (বনলতা সেন)
সেই জীবনানন্দ দশকেই সাতটি তারার তিমিরে লিখতে দেখা যায়-
সান্টা ক্রজ থেকে নেমে অপরাহ্নে জুহুর সমুদ্রপারে গিয়ে
কিছুটা স্তব্ধতা ভিক্ষা করেছিল সূর্যের নিকটে থেমে সোমেন পালিত;
বাংলার থেকে এত দূরে এসে- সমাজ, দর্শন তত্ত্ব, বিজ্ঞান হারিয়ে,
প্রেমকেও যৌবনের কামাখ্যার দিকে ফেলে পশ্চিমের সমুদ্রের তীরে
ভেবেছিলো বালির উপর দিয়ে সাগরের লঘু চোখ কাঁকড়ার মতন শরীরে
ধবল বাতাস খাবে সারাদিন.... (জুহু)
স্পষ্টত উপমার বর্ণচ্ছটা সময়ের প্রবাহে অনেকখানি প্রশমিত হয়ে এসেছে; তীব্র-প্রায় জান্তব-ইন্দ্রিয়বোধ স্তিমিত, কোন এক সুনির্দিষ্ট জীবনবোধের অন্বেষায় জীবনানন্দ বিভোর হয়ে পড়েছেন ক্রমশ। কিন্তু জীবনমুখী কল্পনার প্রাণশক্তির জোরে একান্ত ব্যক্তি-অনুভবও রসনিষ্ঠ রয়ে গেছে। ফলে পাঠকের সঙ্গে কবি জীবনানন্দের দূরত্ব সৃষ্টি হয় না, কবিতা-সম্ভোগে হোঁচট খেতে হয় না।
তিন.
ত্রিশোর কবিরা আধুনিকতার ঘর-বাড়ি নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন উত্তর-সামরিকী কালে। ভারত তখন ঔপনিবেশিকতা বিরোধী আন্দোলনে প্রমত্ত; ১৯৩০-এর গভীর অর্থনৈতিক মন্দা ক্রমপ্রলম্বিত; সংস্কৃতির নৌকো দোদুল্যমান। সব মিলিয়ে মানুষ এক ভয়াবহ অনিশ্চয়াত, নৈরাজ্য এবং অবক্ষয়ের মুখোমুখি। এই অন্ধকারে জীবনানন্দের আবির্ভাব যেন প্রতিফলিত হল নিচের পঙক্তিকটিতে:
গভীর অন্ধকারের ঘুম থেকে নদীর চ্ছলচ্ছল শব্দে জেগে উঠলাম আবার; তাকিয়ে দেখলাম পা-ুর চাঁদ বৈতরণীর থেকে তার অর্ধেক ছায়া গুটিয়ে নিয়েছে যেন
কীর্তিনাশার দিকে। [অন্ধকার]
সমাজ, রাষ্ট্র, দর্শনের তাবৎ ঝঞ্ঝাটের গোলকধাঁধা ভেদ করে মানুষের নিরব অথচ মূল আবেগানুভব আবিষ্কার করা একমাত্র কবিদের পক্ষেই সম্ভব ছিল। সমাজ বাস্তবতার সঠিক পাঠকৃতির মাধ্যমে আবেগ, বুদ্ধি ও যুক্তিশীলতার উপযুক্ত সামঞ্জস্য বিধান সম্ভব ছিল তাদেরই পক্ষে। কেন না জীবনের নিভৃত কুহকের সন্ধান কবিদেরই জানা, সন্ধ্যায় কাকের মতো আকাক্সক্ষা নিয়ে কবিরাই ঘরে ফেরেন, কবিরাই বুঝতে সক্ষম:
....পথ ঘাট মাঠের ভিতর
আর এক আলো আছে; দেহে তার বিকালবেলার ধূসরতা;
চোখের-দেখার হাত ছেড়ে দিয়ে সেই আলো হয়ে আছে স্থির;
পৃথিবীর কঙ্কাবতী ভেসে গিয়ে সেইখানে পায় ম্লান ধূপের শরীর;
ত্রিশের কবিরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবী জোড়া এলিয়টবর্ণিত পোড়াজমিকে আধুনিকতার দিব্য ভিত্ হিসেবে পরমভাবে গ্রহণ করেছিলেন। জীবনানন্দ পোড়োজমির সুপ্রসার অস্তিত্বকে অস্বীকার করেননি, কিন্তু একে অবিনাশী বা চিরকালীন জীবনপট হিসেবে মেনে নেননি। জীবনের মৃত্যুকেন্দ্রিকতা হৃদয়ঙ্গম করে জীবনানন্দের কাছে সব কাজ তুচ্ছ, সব চিন্তু প-শ্রম মনে হয়েছিল বটে কিন্তু তাঁর অনাবদ্ধ দৃষ্টিতে লক্ষ্মীপেঁচার লাজুকতাও দৃশ্যমান হয়েছিল, তিনি দেখেছিলেন, ‘মাঠের পারে নরম নদীর নারী ছড়াতেছে ফুল কুয়াশার’, মনে হয়েছিল সেই নারী ‘কবেকার পাড়াগাঁর মেয়েদের মত যেন হায়’, দেখেছিলেন, ‘অন্ধকারে আকন্দ ধুন্দুল জোনাকিতে ভরে গেছে’। তাঁর গভীর দৃষ্টিলব্ধ চিত্র তাঁর গভীরতম বোধকে দিয়েছিল পরম আশ্রয়: উটের গ্রীবা ধারণ করেছে নিস্তব্ধতা, সন্ধ্যার আঁধার ভিজিয়ে দিয়েছে নিমর্ষ পাখির ডানা, মিনার হয়ে মেঘ তার জানালায় ডেকেছ সোনালি ডানার চিলকে।
কবিতার জন্মসূত্র সম্পর্কে জীবনানন্দের একটি অবিচল ধারণা ছিল। তিনি বারংবার উল্লেখ করেছেন, কবিতা কবির সততাপ্রসূত অভিজ্ঞতা ও কল্পনাপ্রতিভার সন্তান। ১৩৪৫ এ প্রকাশিত তাঁর প্রথম প্রবন্ধেই তিনি বলেছেন, কবির হৃদয়ে থাকবে কল্পনা এবং কল্পনার ভিতরে থাকবে চিন্তু ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা। কিন্তু তিনি লক্ষ্য করেছিলেন এই শর্তপূরণের অভাবে সতীর্থদের কবিতা ভঙ্গুর ও নিরাবলম্ব হয়ে উঠেছে- চিন্তার ব্যায়ামের দৌরাত্ম্যে কবির অভিজ্ঞতা হয়ে পড়েছে বিদূষিত, পাঠকের হাতে পৌঁছুচ্ছে ‘অপ্রাসঙ্গিকভাবে পরিকল্পিত’ কবিতা। আবার নির্ভুল কাঠামো ও বিস্ময়োদ্রেককারী উক্তি সত্ত্বেও বিশুদ্ধ কাব্যরসে অরুচি তাঁদের কবিতাকে করে তুলেছে অস্ফুট ও অসার্থক- কখনও ‘সাংবাদিকী ও প্রচারধর্মী’।
জীবনান্দ লক্ষ্য করেছিলেন তাঁর সতীর্থরা অডেনের কথা শিরোধার্য করে একের পর এক স্মরণীয় উক্তি নির্মাণে মনোযোগী কিন্তু শেষাবধি কারো কবিতা কেবল কতিপয় স্মরণযোগ্য উক্তির সমষ্টিমাত্র, কারো কবিতার বাণী স্মরণীয়তর; কামিংসের মত তাঁরা রচনা করে চলেছেন বুদ্ধিদীপ্ত বাক্যসমুচ্চয়। সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘উটপাখি’ এবং সমর সেনের ‘নাগরিক’ পড়ে জীবনানন্দের মনে হয়েছে কবিদ্বয় নিরেট সাংবাদিকতার দেয়াল টপকে গেছেন মাত্র, ‘কিন্তু প্রজ্ঞাদৃষ্টি দিয়ে ভাবপ্রতিভাকে শুদ্ধ করে নিয়ে তেমন কোন জীবনদর্শন সৃষ্টি করতে পারেননি যাকে কবিতা বলা যায়।’ তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘কাব্য...যে ইতিহাস ধারার অনুগত, কবি সে ইতিহাস ও সমাজ পরিচ্ছন্নভাবে মর্মস্থ করতে পেরেছেন কি?’
এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘মানুষ হিসেবে অনুদার আমি হতে পারি, কিন্তু সময় ও সীমা-প্রসৃতির ভিতর সাহিত্যের পটভূমি বিমুক্ত দেখতে ভালোবাসি। তবু আমি এটা স্বীকার করব না যে ‘মেমোরেবল স্পীচ্’ মাত্রই কবিতা। কবির পক্ষে সমাজকে বোঝা দরকার, কবিতার অস্থির ভিতর থাকবে ইতিহাসচেতনা ও মর্মে থাকবে পরিচ্ছন্ন কালজ্ঞান।’ জীবনানন্দের এই যে দাবি- কবিতার অস্থির ভিতরে থাকবে ইতিহাসচেতনা এবং মর্মে থাকবে পরিচ্ছন্ন কালজ্ঞান- এ কেবল জ্ঞানতাত্ত্বিক ভাষ্য নয়, এই দাবি সমসাময়িক আধুনিক কাব্যচেতনার দিকভ্রষ্টতার তিরস্কারও বটে; ত্রিশের আধুনিকতাবোধের এই সমালোচনা জীবনানন্দের কাব্যচেতনারও বিশ্বস্ত দিকনির্দেশক।
আধুনিকদের প্রতীচ্য-প্রীতি নিয়ে আপত্তি তোলেননি জীবনানন্দ, কিন্তু আধুনিকদের বাংলা কবিতার ঐতিহ্যমোচন অনুমোদন করেননি তিনি-আধুনিকদের কাছে তিনি নিবেদন করেছেন: তাঁরা যেন অন্ধকারে দীর্ঘ শীত-রাত্রিটিরে ভালবাসেন; তাঁরা যেন হৃদয়ঙ্গম করেন যে শীতের রাত অপরূপ-মাঠে মাঠে ডানা ভাসাবার গভীর আহ্লাদে পূর্ণ; তারা যেন তাকিয়ে দেখেন শিকারির গুলির-আঘাত এগিয়ে কেমন করে বুনোহাঁস দিগন্তের নম্র নীল জ্যোৎস্নার ভিতরে উড়ে যায়; ভালবেসে তারা যেন ধানের গুচ্ছের ওপর হাত রাখেন; গাছের সবুজ পাতা অঘ্রাণের অন্ধকারে হলুদ হয়ে যায়- এ যেন তাঁদের দৃষ্টি না হারায়। এভাবেই আকাশচারী আধুনিকদের প্রতি মাটিতে অবতরণের আহ্বান জানিয়েছিলেন জীবনানন্দ, এভাবেই তিরিশের সতীর্থদের থেকে তিনি আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন।
চার.
দুর্ভাগ্য যে, পশ্চিমের প্রভাবে তিরিশের আধুনিকদের হাতে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাংলা কবিতার ঐতিহ্যমোচন হয়েছিল। শুধু রবীন্দ্রনাথের কৃতিকে অস্বীকার নয়, আধুনিকেরা তাদের সামাজিক অস্তিত্বের শেকড়কেও অস্বীকার করেছিলেন। নিজ অভিজ্ঞতার বাইরে আত্ম-বিশ্লেষণ আর আত্মোপলব্ধির একটি কষ্টকল্পিত ভূগোল তাঁরা রচনা করে চলেছিলেন নিবিষ্ট মনোযোগে।
অন্যদিকে জীবনানন্দ দাশ রবীন্দ্রনাথকে সচেতনভাবে ডিঙিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে মনে হয় না। বরং প্রত্যক্ষ হয় যে, রবীন্দ্রনাথেরই অনেপনীয় ছায়ায় তাঁর স্বাবলম্বনের ক্রমান্বয়ী বিবর্তন ধারা বয়ে চলেছিল। তবু যে জীবনানন্দকে আমরা প্রবল ভাবে চিনি-সেই বেতফল-লক্ষ্মীপেঁচা-হেমন্তের কবিতার কোন ভারতীয় অগ্রজ কিন্তু নেই; তাঁর থেকেই তাঁর সূত্রপাত।
অন্যদিকে, প্রতীচ্য থেকে তিনি আহরণ করেছেন অনেক, কিন্তু আমরা পেয়েছি কেবল অকৃত্রিম জীবনানন্দীয় কবিতা। তার শব্দাবলী, ভাষা-ভঙ্গি-প্রকরণ, সকল করণকৌশলের অতলে প্রতীচ্যের সকল দান নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
বস্তুত সুদীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে প্রমুখের সযত্ন পরিচর্যায় গড়ে ওঠা আধুনিকতা প্রচ্ছায়ায় সে ‘রূপসী বাংলা’ ধূসরতা প্রাপ্ত হয়েছিল-জীবনানন্দের ধানসিঁড়ি নদী, লক্ষ্মীপেঁচা, হলুদ রঙের খড়, করুণ শঙ্খ, কার্তিকের জ্যোৎস্না, ম্লান বেতফল, সোনালি ডানার চিলের মধ্যে সেটি অনুপেক্ষণীয় রূপ লাভ করেছে। যে জীবন ও নিসর্গের ছবি তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন, তার জন্যে সর্বজনবোধ্য সম্পূর্ণ নতুন এক কাব্যভাষা, নতুন একগুচ্ছ শব্দাবলীর প্রয়োজন হয়েছিল। জীবনানন্দের কবিকৃতি এক অর্থে এই শব্দভান্ডার সৃষ্টির এই শব্দক্রীড়ার পরিণতি। তবে ‘মালার্মে-প্রবর্তিত কাব্যদর্শই আমার অন্বিষ্ট; আমিও মানি যে শব্দের মুখ্য উপাদান শব্দ’ বলেও সুধীন্দ্রনাথ দত্তের পক্ষে যা সম্ভব হয়নি, জীবনানন্দের পক্ষে তা সম্ভব হয়েছিল- কেন-না, অভূতপূর্ব শব্দচাতুর্যের সঙ্গে জীবনানন্দের হাতে সর্বজনীন মানবীয় অভিব্যক্তির সফল সংশ্লেষ ঘটেছিল। বিংশ শতাব্দীর নিসর্গচ্যূত নিরাবলম্ব নাগরিক মানুষের জীবনবোধ জীবনানন্দের কবিতায় বিশ্বস্ত প্রতিচ্ছায়া খুঁজে পেয়েছিল। জীবনান্দ কেবল আধুনিক নগর মানুষের জীবনবোধের সফল আবিষ্কারকই নন, তিনি বাংলা কবিতায় একটি মৌলিক পরিবর্তন করে গেছেন; তিনি কবিতায় ধারাবাহিক অর্থক্রমের বাধ্যবাধকতাকে অতিক্রম করে শব্দচিত্র নির্মাণের রীতি প্রবর্তন করে গেছেন। অর্থ হয়ত আছে, কিংবা নেই, কিন্তু তাতে যেন যায় আসে না। কিন্তু এই শব্দক্রীড়া মালার্মে কথিত কবিতার শব্দকেন্দ্রিকতা নয়। কেন না জীবনানন্দের হাতে শব্দপুঞ্জ চিরাচরিত অর্থময়তা থেকে চিত্ররূপময়তায় মুক্তি পেয়েছিল-
এখন দিনের শেষে তিনজন আধো আইবুড়ো ভিখিরীর
অত্যন্ত প্রশান্ত মনে হল মন;
ধূসর বাতাস খেয়ে এক গাল-রাস্তার পাশে
ধূসর বাতাস দিয়ে করে নিলো মুখ আচমন।
কেননা এখন তারা যেই দেশে যাবে তাকে রাঙা নদী বলে;
সেই খানে ধোপা আর গাধা এসে জলে
মুখ দেখে পরস্পরের পিঠে চড়ে জাদুবলে। (লঘু মুহূর্ত)
বস্তুত শিল্প সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে, হিসেব-নিকেশ করে কবিতা নির্মাণ কলাকৈবল্যবাদী কাব্যবোধ, নৈরাত্মরীতি বা অন্য কোন নির্মাণ কৌশল, বৃত্তাবদ্ধ দর্শন বা ছন্দের নির্দিষ্ট কাঠামো এ ধরনের কোন ছকধর্মিতাকেই গ্রহণযোগ্য আদর্শ বলে মেনে নেননি জীবনানন্দ। রীতিপ্রকরণের চর্চা নয়, তার কবিতায় নিপুণ প্রয়োগে শব্দপুঞ্জ শিল্পে উত্তীর্ণ হয়েছে। সেই সুধীন্দ্রনাথ দত্ত কথিত সেন্স অফ ফর্ম অগ্রাহ্য করে তিনি দেখিয়েছেন কী করে শব্দের প্রাকৃত প্রবাহমানতা সৃষ্টি করে অবিন্যস্ত সৌন্দর্য, কবিতা হয়ে ওঠে বাক্সময় ছবি। দেখিয়েছেন, কী করে কথ্য শব্দের ব্যবহারে অনির্বচনীয় আবেদন সৃষ্টি হতে পারে।
জীবনানন্দ বলেছিলেন, ‘সকল দেশের সাহিত্যেই দেখা যায় একজন শ্রেষ্ঠতম কবির কাব্য তার যুগ এমন মানবীয় পূর্ণতায় প্রতিফলিত হয় যে সেই যুগের ইতস্তত বিক্ষিপ্ত পথে যে সব কবি নিজেদের ব্যক্ত করতে চান, ভাবে ভাষায়, কবিতার ইঙ্গিতে বা নিহিত অর্থে, সেই মহাকবিকে এড়িয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।’ রবীন্দ্রনাথের মূল্যায়ন প্রসঙ্গেই জীবনানন্দ এই মন্তব্য করেছিলেন।
জীবনানন্দ তার যুগকে ধরেছিলেন এমন বলা যথাযথ হবে না, বরং তিনি ছিলেন প্রোফেটিক। কেন না স্বীয় যুগ নয়, বরং পরবর্তী কালকেই তিনি অব্যর্থ কাব্যকলায় ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর তাই তিনি ১৯৫৪ সালে মৃত্যুর পর থেকে ক্রমশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন, হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয়- আজ তাকে এড়িয়ে যাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।