রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

ঢাকা মহানগরীর যানজট

ঢাকা মহানগরীর যানজট যেন কিছুতেই কমছে না। সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সব উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টা এই যানজটের কারণে ম্লান হয়ে পড়ছে প্রতিদিন। মহানগরী ঢাকায় প্রতিদিনই যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। অনেক সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হলেও কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে যখন তখন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, ট্রাফিক আইন মেনে না চলা। এছাড়া ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের দীর্ঘসূত্রতা ও ডিজাইন পরিবর্তনের ফলে এ কাজ শেষ করতে যেমন সময় লাগছে, তেমনই যানজটও বাড়ছে। এরপর পবিত্র রমযানে মহানগরীতে সারা দেশের মানুষ বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজে বেশি আসেন। সাধারণ কেনাকাটা, ঈদবাজার প্রভৃতির জন্যও মানুষকে ঢাকা আসতে হয়। ফলে অন্য সময়ের চাইতে বেশি সংখ্যক যানবাহন, প্রাইভেটকার প্রভৃতি ঢাকায় প্রবেশ করে। এরপর রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করেন অনেকে।
অন্যদিকে মহানগরীর যেখানে সেখানে হাসপাতাল, ক্লিনিক গড়ে ওঠায় রোগীসহ তাদের লোকজনের আগমন যেমন বেড়ে যায়, তেমনই তাদের বহনকারী যানবাহনও ঢোকে। পুলিশের বাধা সত্ত্বেও ফুটপাত ও রাস্তার পাশে কেনাকাটার দোকান বসে। এমনকি এ রমযানে ইফতারি তৈরি ও বিক্রির দোকানপাটও বসে কোথাও কোথাও। কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ফুটপাত ও সড়কের পাশে পসরা বসানো বন্ধের চেষ্টা সত্ত্বেও সব জায়গায় তা কার্যকর হয়নি। রহস্যজনক কারণে মহানগরীর ফুটপাতে কোথাও কোথাও এখনও কেনাকাটা হচ্ছে। এমনকি ইফতারি তৈরি ও বিক্রির দোকানও বসছে। বিশেষ করে রমযানে তাদের ঠেকাবার যেন কেউ নেই।
মতিঝিল থেকে রমযানে ৩টায় ছুটির পর মানুষ মিরপুর কিংবা মোহাম্মদপুরের বাসায় পৌঁছে ইফতার করতে পারেন না। রোজার শুরুতেই এ পরিস্থিতি। ঈদ আসবার আগে আগে বা রমযানের মাঝামাঝি যানজটের তীব্রতা আরও বাড়বে বলে সবার ধারণা। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের সামান্য অংশ চালু হলেও বিরাট অংশ এখনও নির্মাণাধীন। মৌচাক, কাকরাইল, মালিবাগ তথা ফ্লাইওভার প্রকল্প এলাকা দিয়ে হাঁটাচলাও মুশকিল। এরপরও ইট-বালি, বড় বড় ব্লক, রড পড়ে থাকাতে চলাচলে জনগণের খুব অসুবিধা হচ্ছে। এর মাঝ দিয়েই চলছে গাড়ি। তাই জনগণের দুর্ভোগ নিরসনে এ ফ্লাইওভারের কাজ যত দ্রুত সম্পন্ন করা যায় তার চেষ্টা করা দরকার। এছাড়া এ প্রকল্পের একবার পিলার বানিয়ে তা আবারও ভেঙে ফেলবার মতো ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকেও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়া উচিত। কারণ এর ফলে প্রকল্পের ব্যয় যেমন বেড়ে যায়, তেমনই তা সম্পন্ন হতেও বিলম্ব হয়। অপরদিকে জনগণের দুর্ভোগ বাড়তেই থাকে। আমরা মনে করি, নির্মাতা কোম্পানির অযোগ্যতা, অনিয়ম ও অবৈধ কমিশন প্রদান প্রভৃতি কারণে নির্মাণ কাজে যেমন অযোগ্য লোক নিয়োগ পায়, তেমনই কাজ শেষ করতেও বেশি সময় লাগে। আর জনগণের দুর্ভোগের মাত্রা কেবল বেড়েই চলে। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কাজ সম্পন্ন হতে আরও কতদিন লাগবে, আমরা জানি না। এরপর শুরু হবে মেট্রোরেলের কাজ। বিরাট প্রকল্প। আমরা আশঙ্কা করছি মেট্রোরেলের কাজ শুরু হলে নিশ্চিতরূপেই যানজট বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। আমরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, উন্নয়নের স্বার্থে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, সেতু প্রভৃতি নিশ্চয়ই জরুরি। কিন্তু এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জনদুর্ভোগ যাতে বেড়ে না যায়, সেদিকে সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
মহানগরীর যানজট সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়। কর্তৃপক্ষ নানা আশ্বাসের বাণী শোনান। মাঝে মধ্যে উদ্যোগও নেয়া হয় কিছু। কিন্তু সুফল দৃশ্যমান হয় না। বিশেষত রোজা-রমযান, ঈদ ইত্যাদি এলে যানজট যেমন তীব্র আকার ধারণ করে, তেমনই জনদুর্ভোগও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরী দুইভাগে বিভক্ত হয়েছে। দুই মেয়রের পক্ষেই আশ্বাসের পর আশ্বাস দেয়া হচ্ছে নাগরিকদের দুর্ভোগ লাঘবের। কিন্তু অগ্রগতি তেমন চোখে পড়বার মতো হয়ে উঠছে না। যানজট সমস্যাসহ ঢাকা মহানগরীতে বসবাসকারী ও চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগ-দুর্গতি নিরসনের সকল উদ্যোগকে আমরা ইতিবাচক-ভাবেই দেখতে চাই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ