বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

সুচির নোবেল প্রত্যাহারের দাবি

এক সময় বলা হতো, সব কবি কবি নয়, কেউ কেউ কবি। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় এখন আবার অনেকে বলছেন, সব মানুষ মানুষ নয়, কেউ কেউ মানুষ। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিরীহ মানুষের ওপর নিষ্ঠুর ও অমানবিক কর্মকা- দেখে এমন উপলব্ধি খুবই সঙ্গত। বিশেষ করে আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমারে এখন রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে জুলুম-নির্যাতন ও জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান চলছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। রোহিঙ্গাদের হত্যা ও ধর্ষণের সাথে সাথে তাদের বাড়িঘরও জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে মানবাধিকার সংগঠনগুলো কিছু কথাবার্তা বললেও বিশ্বের প্রতাপশালী রাষ্ট্রগুলো নীরব। তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর কিছু মানুষের জীবন খুবই মূল্যবান, আর অনেক মানুষের জীবনের কোন দামই নেই। আলো ঝলমলে ও বিজ্ঞানমনস্ক বর্তমান পৃথিবীতে এমন বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা কেমন করে চলছে তা ভাবতে গেলে অবাক হতে হয়। এক সময় ভাবা হতো মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী সামরিক জান্তার কারণে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অকথ্য জুলুম নির্যাতন চলতে পারছে। গণতন্ত্রমনা নেত্রী অং সান সুচির ব্যাপারে অনেকে আশাবাদী ছিলেন। তারা ভেবেছিলেন ক্ষমতার পরিবর্তন হলে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জীবনে মুক্তি আসতে পারে। মিয়ানমারে ক্ষমতার পালাবদল তো হলো কিন্তু রোহিঙ্গাদের জীবনে কোন পরিবর্তন এলো না। মন-মানসিকতায় অংসান সুচিও উদারতার পরিচয় দিতে সক্ষম হননি। বরং তার মধ্যেও মুসলিম বিদ্বেষ কাজ করছে।
অং সান সুচির মুখোশ ক্রমেই উন্মোচিত হচ্ছে। ফলে তার কৃত্রিম ইমেজের পালকও খসে পড়ছে। সুচির শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার জন্য অনলাইন আবেদনে ইতিমধ্যে স্বাক্ষর করেছেন লক্ষাধিক মানুষ। দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার ব্যাপারে অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এই আবেদন জানানো হয়। নরওয়ের নোবেল শান্তি কমিটি, যারা এ পুরস্কার দেয় তাদের প্রতি আবেদনে এ পুরস্কার প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়া থেকে চেঞ্জ ডট অরগে এই আবেদনটি করা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক শান্তি এবং ভ্রাতৃত্ববোধ রক্ষায় যারা কাজ করেন তাদেরই নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়। সুচির মতো যারা এই পুরস্কার পান তারা শেষ দিন পর্যন্ত এই মূল্যবোধ রক্ষা করবেন এটাই আশা করা হয়। যখন একজন নোবেল শান্তি বিজয়ী শান্তি রক্ষায় ব্যর্থ হন তখন শান্তির স্বার্থেই নোবেল শান্তি কমিটির উচিত এই পুরস্কার হয় জব্দ করা, নয় ফিরিয়ে নেয়া।’
লক্ষাধিক মানুষের অং সান সুচির নোবেল প্রত্যাহারের দাবিটি গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছে। নিপীড়িত রোহিঙ্গা মুসলমানদর ব্যাপারে সঙ্গত ভূমিকা পালনে সুচি ব্যর্থ হওয়ায় মানুষ অবাক হয়েছে। সুচি যে ইমেজ সংকটে পড়ে গেছেন তা তিনি এবং তার দল কতটা উপলব্ধি করতে পারছেন তা আমরা জানি না। তবে লক্ষাধিক মানুষ তার নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারের যে দাবি জানিয়েছেন তা তিনি এড়িয়ে যাবেন কেমন করে? বিষয়টি যে শুধু তার নিজের এবং দলের জন্য ক্ষতিকর তা নয়, মিয়ানমার নামক রাষ্ট্রের জন্যও তা কলঙ্কজনক। আর দেশে-দেশে যদি সংখ্যালঘু মানুষদের প্রতি জুলুম-নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের মতো অমানবিক কর্মকা- চলতে দেয়া হয়, তাহলে এ পৃথিবী মানুষের বাসযোগ্য থাকবে কেমন করে? আর আখেরে ওই অপকর্মগুলো মিয়ানমারের জন্যও কি কোন শুভ ফল বয়ে আনবে?
এ বিষয়টি নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি বুঝতে সক্ষম না হলে তার নোবেল প্রত্যাহার করাই সমীচীন বলে আমরা মনে করি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ