রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আ’লীগের দুই লাঠিয়াল বাহিনীর সংঘর্ষে আহত ১০

নরসিংদী সংবাদদাতা : রায়পুরার নিলক্ষার চরে আবারো ১৪৪ ধারা ভঙ্গ হয়েছে। গতকাল রোববার আ’লীগের বিবদমান দুই লাঠিয়াল বাহিনী রাজিব ও হক চেয়ারম্যানের মধ্যে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সংঘর্ষ হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বরের পর ১৪৪ ধারা ভঙ্গের এটা দ্বিতীয় ঘটনা। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষের কমবেশী ১০ ব্যক্তি আহত হয়ছে। বীরগাঁও গ্রামের ৩টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে লাঠিয়ালরা। ভাংচুর ও লুটপাট করেছে ২টি বাড়ি। আহতদের নাম ঠিকানা জানা যায়নি। তাদেরকে নবীনগর ও ভৈরবের বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম ও রায়পুরা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ূন কবির পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। 

এলাকাবাসী জানিয়েছে, গত ১২, ১৩ ও ১৪ নবেম্বর নিলক্ষার চরের কয়েকটি গ্রামে ৩ দিনব্যাপী সংঘটিত রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় মামুন, মানিক, খোকন ও শাহজাহান নামে ৪ ব্যক্তি নিহত হয়। এ ৪টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে মামুন, মানিক ও খোকন নামে নিহত ৩ ব্যক্তি খুনের ব্যাপারে রায়পুরা থানায় আজো কোন মামলা রুজু হয়নি। নিহত শাহজাহান খুনের ঘটনায় তার আত্মীয়-স্বজনকে ভয় ও লোভ দেখিয়ে পাল্টা মামলা করেছে রাজিবের সমর্থকরা। এ মামলায় আসামী করা হয়েছে রাজিবের পারিবারিক কয়েকজন বিরোধীকে। নিহত ৩ ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনরা থানায় মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে নরসিংদী জুডিসিয়াল আদালতে মামলা দায়ের করে। বিজ্ঞ আদালত ঘটনাসমূহ তদন্ত করে মামলা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিলেও থানা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ মাসাধিককালেও মামলা রুজু করেননি। গত ১২,১৩,১৪ নবেম্বরের অব্যাহত দাঙ্গা এবং সম্ভাব্য দাঙ্গার আশংকায় গত ১৮ নবেম্বর পুলিশ সুপার আমেনা বেগমের লিখিত অনুরোধে নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান নিলক্ষার চরে কয়েকটি গ্রামে ১৪৪ ধারা জারি করেন। 

এই দাঙ্গার পর নিলক্ষার লাঠিয়াল সর্দার ছোমেদ আলী ও রাজিব এখনও পুলিশের কাছে অধরাই থেকে যাচ্ছে। ছোমেদ আলী স্থানীয় ভেড়ারচরে আশ্রয় নিয়েছে। অপর লাঠিয়াল নেতা রাজিব ঢাকায় আওয়ামী লীগের একজন রাজনৈতিক নেতার বাসায় থাকেন। মাঝেমধ্যে তিনি এই নেতার সাথে নরসিংদী ও রায়পুরা সফর করে আবার ঢাকায় চলে যান। রহস্যজনক কারণে পুলিশ আওয়ামী লীগের এই দুই লাঠিয়াল সর্দার ছোমেদ আলী ও রাজিবকে গ্রেফতার করছে না। যার ফলে ছোমেদ আলী এবং রাজিবের লাঠিয়াল বাহিনী এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভয়াবহ টেটাযুদ্ধ, কয়েকটি মানুষ খুন, বহুসংখ্যক বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে লাঠিয়াল সর্দার রাজিব আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাচ্ছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতার সাথেই তিনি নরসিংদী আসেন আবার নেতার সাথেই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে ঢাকায় চলে যান। পুলিশের সামনে ঘ ঘোরা ফেরা করলেও পুলিশ রাজিবকে গ্রেফতার করার সাহস পাচ্ছে না। যার ফলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী গ্রুপ সাবেক চেয়ারম্যান হক সরকারের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। রাজিব ও ছোমেদ আলী বাহিনী এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশ ক্যাম্পের পাশ দিয়েই ঘুরাফেরা করছে। আর প্রকাশ্যে বোমাবাজি করে বেড়াচ্ছে। গত কয়েক দিনে রাজিব ও সোমেদ আলীর লাঠিয়ালরা এলাকায় শত শত বোমা ফাটালেও একটি বোমার ঘটনায়ও মামলা হয়নি। রবিবার রাজিবের বাহিনী বীরগাঁও গ্রামে উঠে এলোপাতাড়ি বোমা ফাটাতে থাকলে এলাকায় ব্যাপক ত্রাসের সঞ্চার হয়। এক পর্যায়ে তারা বাড়ি ঘরে হামলা করলে হক চেয়ারম্যানের লোকজন খবর পেয়ে গ্রামে গিয়ে তাদেরকে তাড়া করে। এতে উভয়পক্ষে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দাঙ্গা দমনে চেষ্টা চালায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ