বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

নবীগঞ্জে পশু চিকিৎসার নামে নৈরাজ্য

নবীগঞ্জ সংবাদদাতা: নামে মাত্র কয়েকদিন ট্রেনিং করে হয়েছেন ডাক্তার। নবীগঞ্জে পশু চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা ও নৈরাজ্য দিন দিন বেড়েই চলছে। বহু কাল যাবত পশু পালন ও বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে। আবার অনেকে একমাত্র গবাদি পশু গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, মোরগ, কবুতর সহ ইত্যাদি গৃহপালিত পশু পালন করে আসছেন এবং অনেকে তাহা বিক্রি করে চালিয়ে আসছিলেন পরিবারে ভরণ-পোষণ। ঐ গবাদি পশু রোগাক্রান্ত হলে খুঁজে যেতে হয় পশু চিকিৎসকদের নিকট। কিন্তু দক্ষ পশু চিকিৎসক না থাকায় এখন অদক্ষ পশু চিকিৎকরাই চিকিৎসা করে আসছেন। সেই সুবাদে তারা নিয়মের স্থলে অনিয়ম করে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা। তারা নামে মাত্র কয়েক দিন পশু চিকিৎসা ট্রেনিং দিয়ে এখন নিজেকে বড় একজন পশু চিকিৎসক বলে সমাজে পরিচয় দিচ্ছেন। হাজারো ভিজিটিং কার্ড বের করে অল্প দিনেই পরিচিতি পেয়েছেন বিশিষ্ট পশু চিকিৎসক নামে। পরিচয় দিচ্ছেন কয়েকটি ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন পশু চিকিৎসার নামে। ইদানিং এমন দেখা গেছে -হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে পশু চিকিসকদের ব্যাপক আনা গোনা। তারা পশু চিকিৎসার নামে অহরহ অপচিকিৎসা দিচ্ছেন। পশু রোগাক্রান্ত হলে লোকজন চিকিৎসকদের নিকট দৌড়ে যান পশু চিকিৎসার জন্য। কিন্তু বর্তমানে নবীগঞ্জে বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় দেখা গেছে পশু চিকিৎসার নামে চলছে এক নৈরাজ্য। এক শ্রেণীর অসাধু পশু চিকিৎসকরা প্রতিনিয়তই তারা গ্রামে গ্রামে চষে বেড়াচ্ছেন। সমাজের সহজ সরলমনা অনেক লোকজন তাদেরকে বড় মাপের একজন পশু চিকিৎসক জেনে তাদের রোগাক্রান্ত পশুদের দেখাচ্ছেন। এ সুযোগে অসাধু চিকিৎকরা মন গড়া ওষুধ তাদের নিজস্ব প্যাডে লিখে দিচ্ছেন। অনেকে তাদের সাথের ব্যাগে রক্ষিত ওষুধ উচ্চ হারে বিক্রি করছেন। পশু চিকিৎসকদের বাড়িতে কল করে আনলে তারা আসা-যাওয়া ও ভিজিট বাবত পাঁচশ’/এক হাজার টাকা নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের প্রেসক্রিপশনের ওষুধ খেয়ে পশু সুস্থ হওয়ার স্থলে মারা যাওয়ার অভিযোগ অনেকের। নবীগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইদানীং শতাধিক পশু চিকিৎসক নামের অসাধু পশু চিকিৎসক চষে বেড়াচ্ছেন ও অপচিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এমন ও দেখা গেছে- পশু রোগাক্রান্ত হলে যেখানে অল্প ওষুধ দিয়ে রোগ সরানো সম্ভব ঐ স্থানে কয়েক দফায় কৌশলে ওষুধ বিক্রি করছেন ৪/৫ হাজার টাকা। পশু চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার শিকার হয়েছেন প্রায় অনেকেই। এর মধ্যে উপজেলার রঘু দাউদপুর গ্রামের কৃষক রউফ জানান - মানুষের চিকিৎসা অনেকাংশেই সহজ কিন্তু ইদানীং কিছু লোক পশু চিকিৎসার নামে গড়ে তুলেছেন নৈরাজ্য এবং হাতিয়ে নিচ্ছেন মনগড়া টাকা। তিনি আরো জানান- তার পালনকৃত পশু রোগাক্রান্ত হওয়ায় প্রায়ই তিনি পশু চিকিৎসকদের নিকট যেতেন। কিন্তু পশু ডাক্তারদের মনগড়া চিকিৎসায় অতিষ্ট হয়ে তিনি পশু পালনের দিকে এখন মনোনিবেশ নেই। জনৈক সাবেক ইউপি সদস্য জানান ইদানীং যে হারে পশু চিকিৎসার নামে নৈরাজ্য চলছে তা কিভাবে রোধ সম্ভব হবে আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা শামসুল আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান পশু চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা কারীদের আইনের আওতায় আনা জরুরী। অনেক সময় ভুল চিকিৎসার ফলে গবাদি পশু মারা যাচ্ছে বলে তিনি শুনে আসছেন। কিন্তু আইনতো আমাদের হাতে নেই। তিনি আরও জানান- বর্তমানে নবীগঞ্জে গৃহপালিত পশুদের মধ্যে গরু-৩০ হাজার, ছাগল-৫০ হাজার, মোরগ-২ লাখ ২০ হাজার, হাঁস-৩ লাখ ২৫ হাজার ও মহিষ প্রায় শতাধিক রয়েছে। বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা লোকজনদের দাবি পশু চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে তাদের দৌরাত্ম ও নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে আনলে সমাজের লোকজন হতাশার স্থলে পাবেন আশার বাণী। নতুবা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে পশু চিকিৎসকদের মনগড়া চিকিৎসার নামে নৈরাজ্য ও বাণিজ্য।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ