সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ধর্ষণের রুট খোলা রেখে ধর্ষণ বন্ধ হবে না

মোঃ তোফাজ্জল বিন আমীন : দেশে প্রতিদিন কোনো না কোনো ভয়াবহ বা অমানবিক ঘটনা ঘটিয়াই চলিয়াছে। এ সকল ঘটনা এতটাই মর্মান্তিক যা লিখলে, যেকাহারও হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত না হইয়া পারে না। বলতে গেলে এক বিভীষিকাময় সময় পার করছি। শিশু হত্যার মহা-উৎসবের পর এবার ধর্ষণ সিরিজ চলছে। প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতায় মুদ্রিত হওয়া বিকৃত যৌন নির্যাতনের নির্মমতার ছবি হৃদয়টাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিলেও পরিত্রাণের উপায় মিলছে না। অহরহ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিশু, তরুণী, কর্মজীবী নারী, গৃহিণীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মহিলা। একজন ধর্ষিতা নারীর আর্তনাদ এখন আর কাউকে আলোড়িত করছে না। সবই যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। ট্রেনের নিচে বাবা মেয়ের আত্মহত্যার রেশ কাটতে না কাটতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমত নিন্দার ঝড় বইছে। বিত্তবান পরিবারে কয়েকজন যুবক জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে এনে সারা রাত গণধর্ষণ করেছে। শুধু তা-ই নয়, তারা সেই ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করেছে। কত নির্লজ্জ বেহায়া হলেপরে একজন মানুষ এমন পশুত্বের কাজ করতে পারে? আল্লাহ তায়ালার গযব লূতজাতির উপর এমনি এমনি পড়েনি এটা আমাদের মাথায় রাখা প্রয়োজন। ধর্ষণ যেন সংক্রামক জীবাণুর মতো ছড়িয়ে পড়ছে সমাজ ও রাষ্ট্রে। এই তো সেদিন গাজীপুরের শ্রীপুরে বাবা মেয়ে বিচার না পেয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহনের পথকে বেছে নিয়েছে। তাঁর এই মৃত্যু সমাজের কদর্য চেহারাটাকে জাতির সামনে উন্মোচিত করেছে। হজরত আলী ও আয়েশা মরেনি। প্রতিকার ও প্রতিরোধহীন নির্বিকার অকৃতজ্ঞ রাষ্ট্রকে গণধিক্কার জানিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে গেছেন। তারপরেও ধর্ষণের বিভীষিকা থেমে নেই। কেন এমন অস্থির হয়ে ওঠলো সমাজটা? ৫ বছরের একটি বাচ্চাকে ধর্ষণ করার জায়গা কোথায় বলুন তো? পশুদের মধ্যে ধর্ম নেই একথা সত্যি কিন্তু ওদের মধ্যে এমন জঘন্য অসুস্থতা নেই। 

একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের বড় অংশের মধ্যে যদি মনুষ্যত্বের চেয়ে পশুত্বের পরিমাণ বেশি দেখা যায় তাহলে সে সমাজ বা রাষ্ট্রের নাগরিকদের উদ্বেগ বেড়ে যায়। যে সমাজ বা রাষ্ট্রের মেয়েশিশুরা লম্পট চরিত্রহীন পুরুষদের লালসার শিকার হয়, সে সমাজকে নষ্ট সমাজ ব্যতিত আর কী বলা যেতে পারে? সমাজ ও রাষ্ট্রের বড় বড় ব্রিজ কালভার্ট আর উঁচু দালান ধ্বংস হয়ে গেলেও পুনরায় তা নির্মাণ করা যায়। কিন্তু নারীর ইজ্জত একবার লুন্ঠিত হয়ে গেলে তা হাজার চেষ্টা করেও ফিরিয়ে আনা যায় না। যে সমাজে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নেই, মানুষের মর্যাদা নেই, ন্যায়বিচার নেই, মিথ্যের ওপরে সত্যের স্থান নেই, সে সমাজ ব্যবস্থাকে কী নামে অভিহিত করা যায় তা পাঠকেরাই বিবেচনা করবে। ধর্ষণের বীভৎসতা কেন বেড়েছে সে বিষয়টি আলোচনা করাই নিবন্ধনের মূল উদ্দেশ্য।  

দন্ডবিধির ধারা নং ৩৭৫ এ ধর্ষণের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আর শাস্তির কথা দন্ডবিধির ৩৭৬ ধারাতে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ধারাটিতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ধর্ষণের অপরাধ করে, তবে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম অথবা বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবে এবং অর্থ দন্ডে দন্ডিত হবে। আইন থাকার পরও কেন ধর্ষণের বীভৎসতা বেড়েই চলেছে সে বিষয়টি রাষ্ট্রের খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আমরা অনেকে ধর্ষণকে ঘৃণার চোখে দেখি। এটা সত্য কথা। কিন্তু ধর্মীয় দিক থেকে ধর্ষণ যে বড় ধরনের জঘন্যতম একটি পাপ তা অনুধাবন করছি না। এমনকি ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবে যে ধর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাও আমরা বলতে পারছি না। আইনের দৃষ্টিতে সম্মতির ভিত্তিতে যৌনসঙ্গম ধর্ষণ না হলেও ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিতে স্ত্রী ব্যতিত অপর কোন নারীর সঙ্গে যেকোনো ধরনের যৌনসঙ্গম হচ্ছে গুরুত্বর অপরাধ। মহান আরশের অধিপতি আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগে আল কুরআনের সূরা বনী ইসরাঈলের ৩২ আয়াতে বলে দিয়েছেন, তোমরা জেনার ধারে কাছেও যেয়ো না, নিঃসন্দেহে এটি হচ্ছে একটি অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পথ। 

একটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানতুল্য নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। রাষ্ট্র সেই দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেই তো ধর্ষণের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষিতার চেয়ে রাষ্ট্রের বেশি লজ্জা পাওয়া উচিত। ধর্ষণ বৃদ্ধির কারণে রোমান সা¤্রাজ্যের পতন হয়েছিল। আমরা হয়ত অনেকে লুক্রেসিয়ার কথা ভুলে গেছি। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের কথা। রোমান সা¤্রাজ্যের পতনের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে লুক্রেসিয়ার নাম। রোমান সা¤্রাজের শেষ রাজার গুণধর পুত্র লুক্রেসিয়াকে ধর্ষণ করেছিল। কিন্তু লুক্রেসিয়া বিচার প্রার্থনা করেও বিচার পায়নি। অবশেষে একটা ছুরি নিজের বুকে বসিয়ে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনায় জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শুরু হয় রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, রাজনৈতিক বিপ্লব। রোমান সেনাবাহিনীও জনগণের বিদ্রোহকে সমর্থন জানায়। পতন ঘটে রোমান সা¤্রাজ্যের। সুইডেনের বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্ট্রম জাতিসংঘ মহাসচিবের যৌন সহিংসতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি হিসিবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১০ সালে তিনি একবার আফ্রিকার দেশ কঙ্গো সফরে যান। সফরের বিস্তারিত বিবরণ নিরাপত্তা পরিষদকে বর্ণনা করার সময় ওয়ালস্ট্রম বলেন, বিশ্বে ধর্ষণের রাজধানী হলো আফ্রিকার দেশ কঙ্গো। সেখানে নারীরা অব্যাহতভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তবে এটা এই কারণে নয় যে তাঁদের রক্ষা করার জন্য পর্যাপ্ত আইন নেই। বরং আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবে এসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ওয়ালস্ট্রম যখন কঙ্গো সফরে যান তখন দেশটি গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। ১৯৯৮ সালে এ গৃহযুদ্ধ শরু হয়ে ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলেও এর জের ছিল বহুদিন। অর্থাৎ একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সেই সময় প্রতিদিন গড়ে ১১শত নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতি ঘন্টায় ধর্ষিত হয়েছে ৪৮ জন। আমাদের দেশে প্রতিদিনই কোনো না কোনো ভয়াবহ বা অমানবিক ঘটনা ঘটিয়াই চলিয়াছে। এই সকল ঘটনা এমনই মর্মান্তিক যে ঘটনাটি শুনিলে যে কাহারও হৃদয় রক্তাক্ত না হইয়া পারে না। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশ আফ্রিকার মঙ্গোলিয়া বা রোমান সা¤্রাজ্য না হলেও ধর্ষণের পরিসংখ্যানের চিত্রটা মোটেও সুখকর নয়। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো। 

ফেনীতে মা-মেয়েকে এক সাথে ১৪ জন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ১৭ এপ্রিলে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ১৩ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীর শ্যামলীর আদাবরে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন এক গৃহবধূ। সিলেটের জৈন্তাপুরে ১২ মে মা-মেয়েকে ধর্ষণ করে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র মুঠোফোনে ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ১৩ মে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার দানপাড়া ইউনিয়নের আলিয়াপাড়া শেখ নবিনপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসা দুলাভাইরে লালসার শিকার হয়ে শিশু রোসেনা জীবন দিলো। দুলাভাই শ্যালিকাকে ডেকে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন করবে তা ভাবতে গা শিউরে উঠে। গত ১৫ মে আশুলিয়ায় অস্ত্রের মুখে গণধর্ষণের শিকার এক তরুণী ধর্ষকদের প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আশুলিয়া থানায় মামলা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। আমরা অনেকে হয়ত ভুলে গেছি ১৯৯৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা দুর্ধর্ষ ক্যাডার জসীম উদ্দীন মানিকের কথা। এই নরপশু ১০০ ছাত্রীকে ধর্ষণের “সেঞ্চুির উৎসব” পালন করেছিল। এ ঘটনা প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে জাবি’সহ দেশের সর্বমহলে নিন্দা ও ধিক্কারের ঝড় উঠে। (সূত্র, আগষ্ট, সেপ্টেম্বর ৯৮ ইত্তেফাক, মানবজমিন, ডেইলী স্টার) ১৯৯৬ সালে সীমা চেীধুরী নামে এক মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। সে তাঁর বন্ধুর সাথে চট্টগ্রামের রাউজানে সন্ধ্যার পর পথ ধরে হাঁটছিল। রাউজান থানার পুলিশ তাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়, তিনজন পুলিশ তাকে ধর্ষণ করে। ৯৬ সালের ৯ অক্টোবর রাতের ওই বর্বরতা গোটা দেশকে নাড়া দিয়েছিল। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি বরিশালের গৌরনদী থানার সুন্দরদী গ্রামের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ডালিয়াকে ছাত্রলীগের একদল সশস্ত্র কর্মী যাত্রীবাহী লঞ্চ থেকে অপহরণ করে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পবিত্র রমযান মাসে এ অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছিল। (১৮ জানুয়ারি ৯৭ ইনকিলাব) ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি.এস.সিতে ছাত্রলীগ নেতা রাসেল, মামুন কর্তৃক মডেল কন্যা বাঁধনকে বিবস্ত্র ও ধর্ষণের চেষ্টা করছে। সে ঘটনায় সারাদেশে ধিক্কার ও নিন্দার ঝড় ওঠেছিল। (১জানুয়ারী ২০০০, ইনকিলাব, মানবজমিন, প্রথম আলো, সংগ্রাম)২০০০ সালের ২৮ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর এলাকায় এক তরুণীকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে ধর্ষণ করে সূর্যসেন হলের ৪জন ছাত্রলীগ ক্যাডার। (৩০ জুন ২০০০ প্রথম আলো, সংবাদ) ২০০০ সালের ৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের এক ছাত্রলীগ ক্যাডারের কক্ষ হতে জন্ম নিরোধক বড়ি, ওড়না, লিপষ্টিক, পারফিউম ও লেডিস ঘড়ি উদ্ধার। জানা গেছে, জৈনক বান্ধবী নিয়ে ছাত্রণীগ ক্যাডার এমদাদ তার কক্ষে অপকর্ম চালাত। (৬ জুলাই ২০০০, ইনকিলাব) ২০১২ সালের ১ জুন হাতিরপুলের নাহার প্লাজার ১৩ তলায় ১৩০৮ নম্বর কক্ষে সোনালি ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের মালিক সাইদুজ্জামান এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে হত্যা করেন। ওই কিশোরীর লাশকে ২৬ টুকরা করে ফেলে দেন। নিকট অতীতে রাজধানীর খিলগাঁও তিলপাপাড়ায় এক নারী পুলিশ কনস্টেবলকে ধর্ষণ করেছে পুলিশের এস আই কলিমুর রহমানসহ ৪ জন। ওই নারী তুরাগ থানার কনস্টেবল আর এসআই কলিমুর রহমান খিলগাঁও থানায় কর্মরত ছিলেন। ২ এপ্রিল গৌরীপুর থানার ব্যারাকে নিজ কক্ষে শরীরে আগুন দেন কনস্টেবল হালিমা। ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনাটির পেছনে লুকায়িত রহস্য ২৫ এপ্রিল সকল জাতীয় দৈনিকে মুদ্রিত হয়েছে। যার সারমর্ম হচ্ছে, ‘আমার মরে যাওয়ার একমাত্র কারণ এসআই মোহাম্মদ মিজানুর ইসলাম আমাকে ধর্ষণ করেন। ১৭/০৩/১৭ ইং রাত ২.০০ ঘটিকায়। আমার অভিযোগ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গ্রহণ করেন না। ডায়েরিতে এ রকম কথা লিখে গেছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার কনস্টেবল হালিমা। 

“নারী অধিকার বিষয়ক সংস্থা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের হিসাব মতে, দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে প্রায় দেড় হাজার ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৫৮টি ধর্ষণ ও ৫৫টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১৫ জনকে। ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটে ৬০টি। ২০১৭ সালের প্রথম চার মাসে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু পাচার, যৌন নিপীড়ন, আত্মহত্যা, বাল্যবিয়ে, অপহরণ ছাড়াও বিভিন্নভাবে এক হাজার ৫৬৬ নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জানুয়ারিতে ৫৮, ফেব্রুয়ারিতে ৬২, মার্চে ৭১ ও এপ্রিল মাসে ৬৭ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। অন্যদিকে গত বছর ৮৪০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। এর মধ্যে বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) ২৮০জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়। এ ছাড়া এ বছরের জানুয়ারি মাসে ১৪, ফেব্রুয়ারিতে ১৩, মার্চে ১৪ ও এপ্রিলে ১৪ নারী গণধর্ষণের শিকার। ২০১৬ সালে মোট গণধর্ষণের ঘটনা ছিল ১৬৬টি।” 

ধর্ষণ বৃদ্ধির সব কারণ উল্লেখ করলে সমাপ্তি টানা যাবে না। সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ একটু বেশি। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ভাবে ধর্ষণের যে রুট রয়েছে তা বন্ধ করতে হবে। একটা সময় তো আমাদের পারিবারিক বন্ধনে মিলন মেলার সুবাতাস বইত। এখন আর তেমনটা দেখা যায় না। ভিনদেশীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনে পারিবারিক বন্ধন ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যাচ্ছে। পরকীয়ার কারণে অবাধ যৌনাচার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।  

অন্যদিকে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অশ্লীল ছায়াছবি, অশ্লীল গান, অশ্লীল বিজ্ঞাপন, অশ্লীল নাটক, ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফি, অশ্লীল বই ও তরুণ তরুণীর অবাধ মেলামেশাকে ধর্ষণের দিকে ধাবিত করছে। এই বিষয়গুলো ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে অনুধাবন করতে হবে। ভারত মিয়ানমার থেকে আসা যৌন উত্তেজক ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক সামগ্রী কঠোর হস্তে বন্ধ করতে হবে। তবে শুধুমাত্র আইন করে ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব হবে না। ধর্ষণ বন্ধ করতে হলে প্রয়োজন চৌদ্দশত বছর আগে নাযিলকৃত মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সান্নিধ্যে যাওয়া। মানুষের জীবনে যা যা প্রয়োজন তা সবই এই কুরআনে সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা এই কুরআনের শিক্ষা বাস্তব জীবনে গ্রহণ করিনি। সূরা আন নূর এর ২ নম্বর আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন জেনার শাস্তি কী হবে তা উল্লেখ করেছেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, (এ বিধানসমূহের একটি হচ্ছে) ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ (সংক্রান্ত, এদের ব্যাপারে আদেশ হচ্ছে) তাদের প্রত্যেককে তোমরা একশটি করে বেত্রাঘাত করবে, আল্লাহর দ্বীনের (এ আদেশ প্রয়োগের) ব্যাপারে ওদের প্রতি কোনো রকম দয়া যেন তোমাদের পেয়ে না বসে, যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের ওপর ঈমান এনে থাকে! 

বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা আগেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও হয়তো তা পরিপূর্ণভাবে দূর করা কতটুকু সম্ভব হবে, তা আমার বোধগম্য নয়। তবে আমরা আশাবাদী কয়েকটি পদক্ষেপ যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে নেয়া যায় তাহলে ধর্ষণের ঘটনা কমবে। একজন মানুষ কখন ধর্ষণের পথে পা বাড়ায় সে প্রশ্নের উত্তর আগে খুঁজে তারপর সমাধানের দিকে যেতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে যদি ধর্ষণের রুটকে আটকিয়ে ইসলামী অনুশাসন সমাজ বা রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করা যায় তাহলে কেবল ধর্ষণের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব।  

উদাহারণ হিসেবে আমরা বলতে পারি রাষ্ট্র যদি ব্লুফিল্ম, পর্ণসাহিত্য, অশ্লীল ম্যাগাজিন, অশ্লীল ছায়াছবি, অশালীন পোশাক, ভারতীয় আকাশ সংস্কৃতির নামে বেহায়াপনা বন্ধ করে ছেলেমেয়ের অবাধ চলাফেলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার উপর মনোনিবেশ হওয়া প্রয়োজন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ