বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

চট্টগ্রাম বন্দরে ভয়াবহ কন্টেনার জট

নুরুল আমিন মিন্টু, চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি আইসিডিগুলোতে ভয়াবহ কন্টেনার জট সৃষ্টি হয়েছে। অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে বন্দরের বহির্নোঙরে। এতে দেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্য বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে ব্যবসায়ীরা। বন্দরের ক্রেন অচল হয়ে যাওয়ায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বন্দরে অন্তত ১২টি গ্যান্ট্রি ক্রেনের প্রয়োজন রয়েছে। সেখানে আছে মাত্র চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেনের। একই সাথে দুইটি ক্রেন অচল হয়ে যাওয়ায় সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে।
বন্দরে কন্টেনার ধারণ ক্ষমতা ৩৬ হাজার ৩৫৭ টিইইউএস। শনিবার বন্দরে কন্টেনার ছিল ৪০ হাজারের বেশি। বেসরকারি আইসিডিগুলোতে কন্টেনার ধারণ ক্ষমতা ৫২ হাজার টিইইউএস। সেখানে কন্টেনারের পরিমান ৫৫ হাজার ছিল। এরমধ্যে রফতানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার রয়েছে ১১ হাজার ৫৮০ টিইইউএস।
বিকডার সেক্রেটারি মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, প্রতিটি আইসিডিতে কন্টেনার নিয়ে ভয়াবহ রকমের সংকট রয়েছে। বন্দরের ক্রেন অচল হয়ে যাওয়ায় এই সংকট আরো তীব্র হবে।
বন্দর সূত্র জানায়, ১৬ জুন চট্টগ্রাম বন্দরের বহিনোঙরে মিশরীয় পতাকাবাহী জাহাজ এক্সপ্রেস সুয়েজ নোঙ্গও করে। সেখান থেকে বন্দরের দুই পাইলট ওই জাহাজকে ২৫ জুন চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) নিয়ে আসছিলেন।  ওইদিন বেলা আড়াইটার টার দিকে এক্সপ্রেস সুয়েজ’র ধাক্কায় সিসিটি ৩ নং গ্যান্ট্রি ক্রেন বিধ্বস্ত হয়। একই সঙ্গে ৪ নং ক্রেনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্যান্ট্রি ক্রেন রেললাইন থেকে স্থানচ্যুত হয়ে গেছে। দুর্ঘটনার পর থেকে গ্যান্ট্রি দুইটি অকেজো পড়ে আছে। এঘটনায় বিশাল আর্থিক ক্ষতির আশংকা করা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। দুইটি ক্রেন বিকল হয়ে যাওয়ায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে জাহাজের নির্ধারিত শিডিউলে।
এসময় এক্সপ্রেস সুয়েজ-এরও ক্ষতি হয়েছে। ঘটনার পরপরই বন্দরের প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ক্রেনগুলোর প্রস্তুতকারক জাপানের মিতসুবিসি কোম্পানির সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছে। শিগগিরই কোম্পানির বিশেষজ্ঞ দল এসে পৌঁছবে। দলটি পয়েন্ট টু পয়েন্ট স্টাডি করে ক্ষয়-ক্ষতি এবং মেরামতের বিষয়ে জানাবে। এরপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট পাওয়ার পর্যন্ত জাহাজটিকে বন্দর ত্যাগের ছাড়পত্র দেয়া হবে না বলে স্থানীয় এজেন্টকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ২৭ জুন স্থানীয় এজেন্ট এজেন্ট সী কনসোর্টিয়ামকে এ কথা জানানো হয়েছে। এক্সপ্রেস সুয়েজ থেকে কন্টেইনার খালাস বন্ধ রয়েছে।
বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) গোলাম সরোয়ারকে প্রধান করে এ দুর্ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অপর দুই সদস্য হলেন যান্ত্রিক বিভাগ এবং মেরিন বিভাগের। বন্দরের পাইলটের অবহেলা বা অদক্ষতা, না অন্য কোন কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে তা নিরুপণ করবে। এছাড়া, ক্ষতির পরিমাণও নির্ণয় করবে। ভবিষ্যতে যাতে অনুরূপ ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে কমিটি সুপারিশ পেশ করবে।
বন্দরের সদস্য (এডমিন এন্ড প্ল্যানিং) মোহাম্মদ জাফর আলম জানান, জাহাজটিকে আটক করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। খুবই স্পর্শকাতর। তদন্ত হলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করা যাবে। জাপানের মিতসুবিশিকে জানানো হয়েছে। জাহাজের মালিক থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করবো। এখন আপাতত যেভাবে ঘটনা ঘটেছে সেভাবে রেখে দিয়েছি।
তিনি বলেন, দুইটি ক্রেন অচল হয়ে যাওয়ায় বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছে। গিয়ারলেস (যেসব জাহাজের ক্রেন নেই) ভ্যাসেলকে চট্টগ্রাম বন্দরে না পাঠানোর জন্য শিপিং এজেন্টদের অনুরোধ করেছি। আপাতত জাহাজের ক্রেন দিয়ে কন্টেনার উঠানো-নামানো করা হবে।
প্রসঙ্গত গিয়ারলেস (যেসব জাহাজের ক্রেন নেই) ভ্যাসেল থেকে থেকে গ্যান্ট্রি ক্রেনের সাহায্যে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়। জাহাজে ক্রেন থাকলে গ্যান্ট্রি ক্রেন ছাড়াই কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা যায়। আধুনিক শিপিং বাণিজ্যে গিয়ারলেস ভ্যাসেলের বেশি। এসব জাহাজে বেশি কন্টেনার ধারণ করতে পারে। জাহাজের ক্রেন থাকলে কন্টেনার ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। জাহাজের ক্রেন দিয়ে ঘন্টায় ১০ থেকে ১২ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা যায়। বন্দরের গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে ঘন্টায় অন্তত ৩০ থেকে ৩২ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে ৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেন সংগ্রহ করা হয়েছিল। এসব ক্রেন বসানো হয়েছে সিসিটিতে। গ্যান্ট্রি ক্রেনের মেয়াদ ধরা হয় ২০ বছর থেকে ২৫ বছর।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ