রবিবার ১২ মে ২০২৪
Online Edition

রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় ফেরি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে : ভোগান্তির শেষ নেই!

নাজমুল হুদা, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ): নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদে চলাচলরত দু’টি ফেরি যানবাহন চালক ও যাত্রীদের কাছে এখন নিত্যদিনের ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। ফেরি দু’টির মধ্যে একটি বছর জুড়েই থাকে বিকল। অন্যটি চলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। অদক্ষ চালকের কারণে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ফেরি দু’টি দিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তবে ফেরি কর্তৃপক্ষ বলছে নানা সমস্যা আর সঙ্কটের কারণেই তাদের এ দুরবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা-লেখি হওয়ার পর লোক দেখানো মেরামত করা হয়। দু’দিন পর থেকেই আবার আগের অবস্থা। গত কয়েক দিন ধরেই তেলের অভাবে প্রায় সময়ই ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার অভিযোগ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ফেরি দিয়ে চলাচলরত হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তবে এ ব্যপারে ফেরি চালক আব্দুল মজিদ বলেন, মাঝে মাঝে তেল আনতে সময় লাগায় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে।
জানা গেছে, তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার (৯৭’ সাল) রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদের দু’পাড়ের সঙ্গে সহজে সেতুবন্ধনের জন্য ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করেন। ঐসময় প্রাথমিক অবস্থায় একটি ফেরি দেওয়া হলেও পরে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে ৯৯ সালের শেষের দিকে আরো একটি ফেরি বাড়ানো হয়। কিন্তু দু’যুগের বেশি সময়েও ফেরি দু’টির লোক দেখানো মেরামত ছাড়া আর কোনো বড় ধরণের পরিবর্তন করা হয়নি। যার ফলে জরাজীর্ণ ও ঝূঁকিপূর্ণ ফেরিতে প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে , প্রতিনিয়ত ঝূঁকি নিয়ে ফেরি দিয়ে পারাপার হচ্ছে ছোট-বড় সব যানবাহন। অদক্ষ চালক দিয়ে ফেরি চলাচলের কারণে প্রায় সময় ঘটে দুর্ঘটনা। ক্ষতি হচ্ছে যানবাহনের। দুটি ফেরির মধ্যে একটি বছর জুড়েই থাকে বিকল। অন্যটিও চলে লক্করঝক্কড় অবস্থায়। এটির ইঞ্জিনও প্রায় সময় বিকল হয়ে যায়। এসময় ঘন্টার পর ঘন্টা আটকা পড়ে থাকতে হয় যাত্রী সাধারণের। দেশের উত্তর-পুর্বাঞ্চলের প্রায় ১৭টি জেলার যানবাহন ও যাত্রীরা এ ফেরি দিয়ে চলাচল করে।
জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্রগ্রাম সড়ক যোগে আসা প্রায় ১৭টি জেলার  যাত্রীরা মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ফেরি যোগে পারাপার হয়ে এয়ারপোর্টসহ রাজধানীতে প্রবেশ করছে। সিলেট, কুমিল্লা, দাউদকান্দি, চাঁদপুর, মতলব, নোয়াখালী, ফেনি, চট্রগাম, হবিগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, আশুগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ ১৭ জেলার যাত্রীরা এ রুট ব্যবহার করে থাকে।
ভুলতা ফ্লাইওভারের কাজ চলাচলের কারণে অনেক যানবাহন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে না গিয়ে এ ফেরি ব্যবহার করছে অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীতে প্রবেশ পথ হিসেবে যাত্রীসাধারণ শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ফেরি যোগে চলাচল করে থাকেন। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে এ পথ দিয়ে। এ কারনেই সড়ক ও জনপদ বিভাগ মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ফেরিগুলো প্রতি বছর ইজারা দিয়ে থাকেন বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। ফেরি দুটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকেন সড়ক ও জনপদ বিভাগ। চলতি বছর ৫৭ লাখ ৭২ হাজার ৫’শ টাকায় ইজারা পায় সুমন এন্টার প্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ফেরির এ নাজুক অবস্থার কারণে ফেরির দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছেন না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদের দুই পারের রাস্তার প্রস্থ কম থাকার কারণে রাস্তাটি দিয়ে বড় ধরনের যানবাহন চলাচল করতে সমস্যা হয়। বিভিন্ন সমস্যার কারণে ফেরি দিয়ে এসব যানবাহন সময় মতো পারাপার করতে না পারায় বেশির ভাগ সময়ই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। নদীর দুই পারের ফেরি লাগানো গ্যাংওয়ে ও পল্টুনের বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ষ্টীলের সিটগুলো খসে পড়ছে। পল্টুনের তলায় পানি প্রবেশ করে ডুবে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সেলু মেশিন দিয়ে সেচেও পানি কমাতে পারছেন না। এছাড়া বর্ষার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তার সঙ্গে লাগানো গ্যাংঅয়ে বেশির ভাগ অংশ ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া অংশ ও ভাঙ্গা স্থান দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহন। ফেরির উপরের পিচ উঠে গিয়ে স্টীলের সিট বের হয়ে গেছে। এতে যানবাহন গুলো স্লিপ করে।  দুটি ফেরির মধ্যে একটি ফেরি প্রায় ২৮ বছর আগের, অপরটিও একই সময়ের। ইঞ্জিন ও ফেরির বডি মেরামত করে এখন পর্যন্ত চালানো হচ্ছে ওই দুটি ফেরি। ওই ফেরিতে ইঞ্জিন পাল্টানো হলেও কোন কাজে আসছেনা। যানবাহন নিয়ে ফেরি ছাড়লে সময় মতো তীরে না পৌছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রবল স্রোতে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। পড়ে অপর ফেরির সহযোগিতা নিয়ে টেনে আনতে হয়।
অপর যেই ফেরিটি রয়েছে, সেটির তলার অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। বেশ কয়েক স্থান দিয়ে পানি ঢুকে পড়ে। অতিরিক্ত পানি ঢুকে ফেরি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা হয়ে যায়। যাত্রীরা সব সময় আতঙ্কে থাকেন। এসব বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ যানবাহন চালকদের।
অভিযোগ রয়েছে, আব্দুল মজিদ, নুর হোসেন ও আব্দুল আলীম ফেরি দুটির ইঞ্জিন ধোয়া-মোছার দায়িত্বে রয়েছেন। অথচ তাদেরকেই ফেরির চালক হিসেবে ব্যবহার করছে সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষ। 
ভোগান্তির শিকার বেশ কয়েকজন যানবাহন চালক বলেন, সরকারী নিয়মানুযায়ী ফেরির ভাড়া দিচ্ছি, আমরা ভোগান্তির শিকার হবো কেন ?
কলামিস্ট ও গবেষক লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, ফেরির পরিস্থিতি খুব খারাপ। লক্করঝক্কর ফেরি পাল্টিয়ে দ্রুত নতুন ফেরি দেয়ার দাবি জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, ফেরির সমস্যার বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন ফেরি মেরামত করা হয়েছে। বিষয়টি আবারোও দেখছি।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদের ম্যাকানিকেল বিভাগের (ফেরি) নির্বাহী প্রকৌশলী সুভাষ বাবু বলেন, সমস্যাগুলো অতি শীঘ্রই সমাধান করা হবে। নতুন ফেরির ব্যপারে কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ