মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খুলনায় কেন্দ্র দখল করে নৌকায় সিল মেরেছে ক্ষমতাসীন আ’লীগ

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে কষ্ট দিয়েই সরকার আনন্দিত বলে মন্তব্য করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কষ্ট নিয়ে নিষ্ঠুর পরিহাস করছে এ অবৈধ সরকার এবং সরকারপ্রধান। নিষ্ঠুর রসিকতা করছে। তাকে কষ্ট দিয়ে তারা আনন্দিত। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি খুলনা সিটি নির্বাচনের নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, খুলনায় অধিকাংশ কেন্দ্রই ক্ষমতাসীনরা দখলে নিয়েছে। দুপুরের আগেই ভোট শেষ। লাইনে দাড়িয়ে থেকেও ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লিখার সময় ভোট গননা চলছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভোট গননা শেষেই তারা দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, দলটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াস উদ্দিন মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। তার পায়ে এবং হাতে প্রচ- ব্যথা। তিনি খুবই কষ্ট পাচ্ছেন। সরকারি ডাক্তাররা মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে যে পরামর্শ দিয়েছেন, আমরাও বারবার দাবি করেছি, তারপরও তাকে অর্থোপেডিকসের বিছানা, তার ফিজিওথেরাপি এবং উন্নতমানের এমআরআইয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। এ সপ্তাহে জ্বর হয়েছিল জানিয়ে রিজভী বলেন, তাকে নিয়ে যা-ই হচ্ছে সেটি সরকারের সার্কাস ছাড়া আর কিছুই না। আমি আবারও তার সুচিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি। তার যে কষ্ট, যে শারীরিক যন্ত্রণা তা লাগবে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার ব্যক্তিগত চিকিৎকরা পরামর্শ দিয়েছেন। সেটি নিশ্চিত করা হোক। তিনি বলেন, বারবার বলার পরও সরকারের নির্বাক প্রতিমূর্তি প্রমাণ করে যে, অন্যকিছু নয়, নির্দোষ দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বন্দি করা হয়েছে শুধু কষ্ট দেয়ার জন্য।
খুলনা সিটি নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, আমরা নানা সূত্রে জানতে পেরেছি খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বেলা আড়াইটা থেকে ৪ টায় ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রগুলোতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রহরায় নৌকা প্রার্থীর পক্ষে একচেটিয়া সীল মারার জন্য খুলনা পুলিশ কমিশনার নির্দেশ দিয়েছেন। ভোট এরকমই হবে বলে নৌকা মার্কার প্রার্থী নিশ্চিত ছিলেন বলেই নির্বাচনের দিনের দু’দিন আগে ভোটে জেতার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে পোষ্টার ছাপিয়ে দেয়ালে দেয়ালে সেঁটেছেন নৌকা মার্কার প্রার্থী।
তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনদিনই দুষণমুক্ত নির্বাচন হবে না। সরকার, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডার’রা একই নৌকার যাত্রী হওয়ার কারনে ভোট ডাকাতির নির্বাচনকেই আদর্শ নির্বাচন হিসেবে তারা প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে। অবৈধ সরকার জনগণ পরিত্যক্ত হলেই সেই সরকার বেআইনী কাজ করবেই এবং এর জন্য তাদের কোন লজ্জাবোধ নেই। নির্বাচন কমিশন সরকারেরই বিম্বিত কন্ঠস্বর। আওয়ামী সন্ত্রাসী ক্যাডার, প্রকাশ্য অদৃশ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গু-ামী এবং গত কয়েকদিনে ভোটারদের মনে ভীতি সৃষ্টির জন্য গ্রেফতার ও বাড়ীতে বাড়ীতে পুলিশের আগ্রাসন, আজ ভোটকেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের ঢুকতে না দেয়া, মহিলা এজেন্টদের হুমকি দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে না দেয়া সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত যা ভোট হয়েছে, তা প্রহসন। প্রহসনের আরও একটি নিদর্শন হচ্ছে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী একটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন গোটা ব্যালট বইটির প্রতিটি পেপার নৌকা মার্কার সীলে ভরা। আরও কয়েকটি কেন্দ্রে সাংবাদিকরা ঐরুপ ঘটনা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করেছেন। আওয়ামী লীগের সকল কাজই প্রকৃতপক্ষে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার রাজত্বে গণতন্ত্র এখন ছিন্নমুলে পরিণত হয়েছে। সরকার মুলত দেশবাসীর রক্ত পান করতে করতে সারাদেশকে ভাগাড়ে পরিণত করেছে। ভোটারবিহীন সরকারের নিরবচ্ছিন্ন ভোটাধিকার হরণের ধারায় জনগণের অন্তহীন আর্তি এখন আকাশে-বাতাসে ধ্বণিত হচ্ছে। ভোট সন্ত্রাসের ঘটনায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভোটাররা ব্যথিত, বঞ্চিত, অপমানিত।
এসময় খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তা-বের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরে বলেন, অধিকাংশ কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। শেখপাড়া আইয়ুব আলী ভোট কেন্দ্রে ধানের শীষের সকল এজেন্ট বেরকরে দিয়ে নৌকা মার্কায় সিল মারছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। দারুস সালাম থেকে সকল এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়েছে। বিএনপি’র কোন ভোটারদের ঢুকতে দেয়নি এছাড়া ময়লাপোতার সোনাপতা স্কুলের সামনে ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নির্বাচনী ক্যাম্প হামলা চালিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। ইউসেফ স্কুল ভোট কেন্দ্র থেকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ধানের শীষের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করে নিয়ে নৌকায় সিল মারছে। নতুন প্রা: স্কুল থেকে ধানের শীষের সকল এজেন্টদের জোরপূর্বক বের করে দিয়ে নৌকায় সিল মারছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। আবু হানিফ কেরাতুল কুরআন মাদরাসা ভোট কেন্দ্রে ধানের শীষের সকল এজেন্ট বের করে দিয়েছে এছাড়া জেলা স্কুল কেন্দ্রে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ধানের শীষের এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে এবং অয়ন নামে এক বিএনপি কর্মীকে ধরে নিয়ে স্থানীয় কাজী অফিসে আটক করে নির্যাতন চালিয়েছে। 
তিনি বলেন, ৩১ নং ওয়ার্ডের ১৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টি ভোট কেন্দ্রই দখল করে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছে। দেয়ানা দক্ষিণপাড়া কেন্দ্রে পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দখল করে নৌকা মার্কায় জাল ভোট দিয়েছে। ওয়ার্ড নং-১১, ওয়ার্ড নং-১৩, ওয়ার্ড নং-১৫, ওয়ার্ড নং-২৪, ওয়ার্ড নং-২৫ ও ওয়ার্ড নং-৩১ এর সকল কেন্দ্র দখল করে নৌকা প্রতীকে সিল মারে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।  ওয়ার্ড নং-২৮ এর ৪টি ভোট কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী।
রিজভী বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের-২৯৪টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে সবকটিতেই ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষমদদে নির্বাচনের ফলাফলকে নিজেদের পক্ষে নেয়ার জন্য সকল অপচেষ্টা চালিয়েছে।  প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে বেলা-১টা পর্যন্ত  আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসী দখল করে নেয়। তিনি এই নির্বাচন প্রহসনের বলেও মন্তব্য করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ