মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

কণ্ঠরুদ্ধ গণতন্ত্রে জনগণ ক্ষমতাহীন হয়ে যাচ্ছে

* নির্বাচন কমিশনের উচিত অভিভাবক হয়ে কাজ করা -এম সাখাওয়াত
* দলহীন গণতন্ত্র চাইছে নির্বাচন কমিশন -আবুল মকসুদ
* গণহীন গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে দেশ -পঙ্কজ ভট্টাচার্য
* নির্বাচন কমিশন সরকারের তোতা পাখির ভূমিকা পালন করছে -মান্না
* সরকারকে স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা দেয়া হয়েছে -সাকি
স্টাফ রিপোর্টার : রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া, নির্বাচন ও সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অধিকার শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, সংবিধানে বলা হয়েছে জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। কিন্তু বর্তমানের কণ্ঠরুদ্ধের গণতন্ত্রে জনগণ ক্ষমতাহীন হয়ে যাচ্ছে। গণহীন গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে দেশ। নির্বাচন কমিশন হয়তো দলহীন গণতন্ত্র চাইছে। এ জন্য নির্বাচন কমিশন সরকারের তোতা পাখির ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে সরকারকে স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অভিসন্ধি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত অভিভাবকের ভূমিকা পালন করা।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া, নির্বাচন ও সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অধিকার শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনেরা এ সব কথা বলেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদ, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, নাগরিক ঐকের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ব্যরিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়া, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বাসদের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান প্রমুখ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখ্তার।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন নতুন রাজনৈতিক চিন্তা ও দলের বিকাশকে রুদ্ধ করার ভূমিকা পালন করছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আইন যে কারণে করা হয়েছে, বর্তমানে তার বিপরীতে একে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা ও দল নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমান আমলে এর শর্তগুলোকে এতগুণ কঠিন করা হয়েছে যে, এর লক্ষ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। যেমন ভোটার সমর্থক থাকার কথা পুরনো আইনে ছিল না, লক্ষ্য ছিল কর্মী সমর্থকের প্রমাণ হাজির করা। নির্দিষ্টসংখক জেলায় কার্যালয় রাখার কথা ছিল না। নির্বাচন কমিশন কেন স্বেচ্ছাচারিতার ভিত্তিতে যখন খুশি তখন নিবন্ধনের জন্য আহ্বান করবে, তার যৌক্তিকতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। সারা বছর রাজনৈতিক দলগুলোর আবেদন গ্রহণ করার জন্য মুক্ত রাখার গণসংহতি আন্দোলনের দাবির সমর্থন করে তিনি বলেন, এই উদ্দেশ্যেই আমাদের সময়ে নির্বাচন কমিশনের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের নৈতিক দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর অভিভাবক হিসেবে কাজ করা, সাহায্য করা।
অপরদিকে বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, নির্বাচন কমিশন হয়তো দলবিহীন গণতন্ত্র চাইছে বলে নতুন কোন রাজনৈতিক দলকে আর নিবন্ধন দিচ্ছে না। তিনি বলেন, অধিকাংশ নিবন্ধিত দলের চাইতে গণসংহতি আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি সক্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত রাজনতৈকি দলকে তারা নিবন্ধন দিচ্ছে না। অথচ প্রতিদিন এই দলগুলো নানান কর্মসূচিতে আছে। নির্বাচন কমিশন আসলে একটা আতঙ্কে আছে, কেন না এদের জনমুখী রাজনীতি বিকশিত হলে অগণতান্ত্রিক শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। কিন্তু সেই জনগণকেই ক্ষমতাহীন করা হচ্ছে। গণহীন গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে দেশ। কণ্ঠরোধের গণতন্ত্র চলছে। এর জ্বলন্ত উদাহরণ খুলনার পর গাজীপুরের নির্বাচন। তিনি বলেন, জনগণকে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। আনা হচ্ছে বন্দুকের আওতায়। নিবন্ধন ছাড়াই জেল খাটলাম, মামলার শিকার হলাম, মুক্তিযুদ্ধ করলাম... আজকে নিবন্ধন দিয়ে আমাদের খেলো করা হচ্ছে।
বদিউল আলম মজুমদার রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি করে বলেন, নিবন্ধনের আইনটি করা হয়েছিল নামসর্বস্ব কর্মসূচিহীন দল যেন নির্বাচনে ব্যবহৃত না হয়।
ইতিহাসবিদ আহমেদ কামাল বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র আইনের বেড়াজালে নাগরিকদের বন্দী করে ফেলার ফিকির করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামই এর বিপরীত স্রোতের তৈরি করতে পারে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ভোট মানুষ দেবে কি না সেটা ভোটারদের প্রশ্ন। নির্বাচনে দাঁড়ানো রুদ্ধ করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনকে কে দিল? ১% ভোটার সমর্থকের স্বাক্ষর লাগার যে আইন করেছেন, রাতের বেলা সেই ভোটারের বাড়িতে যে পুলিশ বা মাস্তানরা ভয় দেখাবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে আইন শেখাবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার আমলারা? নির্বাচন কমিশন কাদের কাছে জবাবদিহিতা করছে? তাদের সিদ্ধান্ত যে সঠিক, সেটা কি আমাদের যাচাই করার এখতিয়ার আছে? নির্বাচন কমিশন সরকারের তোতা পাখির ভূমিকা পালন করছে।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, নির্বাচন কমিশন যে প্রক্রিয়ায় গণমাধ্যমে জানাচ্ছেন কোন কোন দলকে নিবন্ধন দেয়া হচ্ছে বা প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে, তা বিধিবিধানের চরম লঙ্ঘন।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, গণতন্ত্রকে বন্দী করার জন্য এই আইনগুলো শাসকশ্রেণি করেছে।
আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম যাচাই করার অধিকার নির্বাচন কমিশনের থাকতেই পারে না। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-মার্কসবাদী)র কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, গণআন্দোলন ছাড়া হারিয়ে যাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা যাবে না।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা শুধুমাত্র কোন একটি দল নিবন্ধন পেল বা পেল না, তার মধ্যেই আলাপটাকে সীমিত রাখতে চাই না। আমরা বরং চাইছি এই সকল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কিভাবে জনগণকে ক্ষমতাহীন করা হচ্ছে, সরকারকে স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, সেটা তুলে ধরতে। যেমন, এই আইনে আছে যে, পরপর দুই বার নির্বাচনে অংশ না নিলে একটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ