মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফলাফল ঘৃণাভরে প্রত্যাখান

গতকাল বুধবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : গাজীপুরের নির্বাচনের ফলাফল ‘ঘৃণাভরে’ প্রত্যাখান করে পুনরায় ভোট দাবি করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার রাতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার পর গতকাল বুধবার সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, গাজীপুরের নির্বাচন নির্বাচনের নামে শুধুমাত্র একটি তামাশা হয়েছে। ভোট ডাকাতির নতুন নতুন কৌশল আবিস্কার করে তা প্রয়োগ করা হয়েছে। আমরা গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফলাফল ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি। আমরা এই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছি। জনগনকে এই ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আহবান জানাচ্ছি।
স্বরণকালের ইতিহাসের ভোট ডাকাতির নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। ৪১৬ কেন্দ্রের ঘোষিত ফল অনুযায়ী, মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর পেয়েছেন ৪ লাখ ১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট। হাসান সরকারের চেয়ে দুই লাখ দুই হাজার ৩৯৯ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে ২০১৩ সালের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমতউল্লাহ খানকে এক লাখ ৩২ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন বিএনপি নেতা এম এ মান্নান। এবার দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাকে বাদে দিয়ে বিএনপি প্রার্থী করে প্রবীণ নেতা হাসান সরকারকে।
দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, খুলনায় নতুন কৌশলে ভোট ডাকাতি করে তারই ধারাবাহিকতায় গাজীপুর এই নির্বাচন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিয়েছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকার গাজীপুরের আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তারা আগের রাতেই অনেক ভোট দিয়ে দিয়েছে। এটা ভোটের পারসেনটেইজ দেখলে বুঝা যায় যে, ভোটের টার্ণ আউটা কত আর টোটালটা কত? তার থেকেই বুঝা যায় যে আগের রাতে ভোট দিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা দিনের মতো পরিস্কার হয়ে গেছে যে, এই সরকার গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে না।
তিনি বলেস, আমাদের অনেকে এজেন্টেদের কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি, অনেকে বাসা থেকে বের হতেই দেয়নি, অনেককে পথেই বাঁধা দিয়ে রুখে দেয়া হয়েছে। এসব দৃশ্য গণমাধ্যমের কর্মীরা গতকাল নিজেরাই দেখেছেন। এভাবে ষড়যন্ত্র করে গাজীপুরের নির্বাচনের ফলাফল পক্ষে নিতে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন এক হয়ে কাজ করেছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটা পরিস্কার হয়ে গেছে সরকার একটি নির্বাচনী প্রকল্প করেছে, তার অংশ হিসেবে খুলনায় যা ঘটিয়েছিলো, গাজীপুরেও তারা একই কাজ করেছে। নীল নকশার অংশ হিসেবে পুলিশের একটি অংশ যারা দলীয় পুলিশ, নির্বাচন কমিশন সকলে মিলে একের পর এক নির্বাচনকে কব্জা করছে তারা। গণতন্ত্র ফিরে পেতে হলে এই নির্বাচনী প্রকল্পকে ভেঙে দিতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলন, জনগণের আশা আকাঙ্খাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে স্বৈরাচার এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে সমাহিত করছে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি ভোটার বিহীন প্রহসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হতেই ধারাবাহিকভাবে প্রায় প্রতিটি উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নজীর বিহীন ভোট ডাকাতির মধ্যদিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে এবং প্রমান করেছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধীন মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিলের ফলে আওয়ামী সরকারের অধীনে নির্বাচন কখনই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনী, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিচ্ছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই গণগ্রেফতার, সাদা পোশাকের পুলিশ দিয়ে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, ভাংচুর, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকতে না দেওয়া, নির্বাচনের আগের রাত হতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে নৌকায় সীল মেরে ব্যালট বাক্স বোঝাই করা, নির্বাচনের দিন এজেন্টদের জোর পূর্বক বের করে দেওয়া সম্পর্কে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের প্রার্থী ও দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে ক্রমাগত অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন কোন কিছুই আমলে নেয়নি। বিশেষ করে গাজীপুরের পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব ও নির্যাতনের বিষয়ে বার বার অভিযোগ করেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন তাদের নিজেদের আইন কখনই প্রয়োগ করে নাই। নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকার গাজীপুরে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা রাষ্ট্রের সকল যন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে। এই নির্বাচন নির্বাচনের নামে শুধুমাত্র একটি তামাশা হয়েছে। ভোট ডাকাতির নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করে তা প্রয়োগ করেছে।
ভোট কারচুপির এরকম ঘটনার পরও রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ‘আন্দোলনের অংশ’ হিসেবে অংশ নেওয়ার দলের সিদ্ধান্তের কথাও জানান বিএনপি মহাসচিব। সরকারের নিলর্জ্জ গণবিরোধী চরিত্র উন্মোচনের জন্য ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছি আন্দোলনের অংশ হিসেবে। আসন্ন বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি একই কারণে। এই জনবিচ্ছিন্ন সরকাররের প্রকৃত চেহারা উন্মোচ, নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও পক্ষপাতিত্ব প্রমাণিত হচ্ছে এই নির্বাচনগুলোর মধ্য দিয়ে।
দলের কারাবন্দি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানান মির্জা ফখরুল। একই সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকার ‘নীল নকশার গল্প’ সাজিয়ে গ্রেপ্তার করেছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা জনগণের ভোটাধিকার মানবাধিকার সংরক্ষণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মুক্তগণ মাধ্যম ও সুশাসনের জন্য দীর্ঘকাল সংগ্রাম করছি। সরকারের নির্যাতন দমন নীতি খুন, গুম, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার এমন কি মিথ্যা মামলায় গণতন্ত্রের জন্যে যিনি সারা রাজনৈতিক জীবন সংগ্রাম করেছেন, জনগণের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ৩ বার প্রধানমন্ত্রী, এবং ২ বার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাকে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে কারাগারে আটক রেখে বাংলাদেশকে একটি স্বীকৃত স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সরকারের এই নিলর্জ্জ গণবিরোধী চরিত্র উন্মোচনের জন্য এবং গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্থানীয় সরকার গুলোতে অংশ নিচ্ছি আন্দোলনের অংশ হিসাবে।
গুলশানে দলের চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ