বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

যুক্তরাষ্ট্রে মরু এলাকায় ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভোগা ১১ শিশু উদ্ধার

৬ জুলাই, বিবিসি, এবিসি নিউজ : যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্য থেকে ক্ষুধায় আক্রান্ত হয়ে অপুষ্টিতে ভোগা ১১ শিশুকে উদ্ধার করেছে দেশটির পুলিশ। মরুভূমির মধ্যে একটি আবাসিক ভবনে নোংরা পরিস্থিতির মধ্যে তাদের রাখা হয়েছিল। স্থানীয় শেরিফের  কার্যালয় জানিয়েছে, ছেঁড়া পোশাক পরা এক থেকে ১৫ বছর বয়সী এসব শিশুদের জুতা পর্যন্ত ছিল না। তাদের ‘তৃতীয় বিশ্বের শরণার্থীদের মতো’ দেখাচ্ছিল বলেও জানানো হয় শেরিফের অফিস থেকে।  ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ককে পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে দুইজন ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ছিল।

অস্থায়ী সেই আবাসিক ভবনের ছবি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ

‘আমরা ক্ষুধায় আক্রান্ত, খাবার ও পানির দরকার’ লেখা একটি বার্তা পেয়ে পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালিয়ে এসব শিশুদের উদ্ধার করে। তবে আমালিয়ার ওই আবাসিক এলাকায় ওই গ্রুপটি কিভাবে তাদের কাজ চালাচ্ছিল তা এখনও জানা যায়নি। ওই এলাকার বর্ণনায় পুলিশ জানিয়েছে, মাটির নিচে প্লাস্টিকে ঢাকা সুড়ঙ্গ ছিল। ছিল না কোনও পানি ও বিদ্যুৎ।  টাওস কান্ট্রি শেরিফ জেরি হগরেফ জানিয়েছেন, শিশুরা ক্ষুধার্ত, পিপাসার্ত ও চরম নোংরা পরিস্থিতিতে ছিল। তিনি বলেন, ‘পুলিশে ৩০ বছর ধরে কাজ করছি। কখনও এরকম কিছু দেখিনি, অবিশ্বাস্য। তারা চর্মসার, হাড় দেখা যাচ্ছিল। ’

ঘটনাস্থলে কোনও বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, সেখানে খাবার বলতে শুধু কিছু আলু ও অল্প পরিমাণ চাল পাওয়া গেছে। সেখান থেকে দুই সশস্ত্র ব্যক্তি সিরাজ ওয়াহাজ ও লুকাস মার্টিনকে আটক করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তিন নারীকে আটক করা হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হগরেফ এবিসিকে বলেছেন, মনে হচ্ছে ওই নারী ও শিশুদের ‘ব্রেনওয়াশ করা হয়েছে আর ওই পুরুষেরা তাদের ভয় দেখিয়ে বলেছে তারাই এই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে।’

স্থানীয় সামাজিক সুরক্ষা বিভাগ ওই শিশুদের হেফাজতে নিয়েছে। নিজের তিন বছর বয়সী ছেলেকে অপহরণের অভিযোগে আগে থেকেই সিরাজ ওয়াহাজকে খুঁজছিল পুলিশ। তবে উদ্ধার হওয়া শিশুদের মধ্যে তার ছেলে নেই বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলো।

প্রসঙ্গত, গত মে মাসে আমেরিকাজুড়ে ৪০ দিনের এক কর্মসূচি পালন করে ‘পুওর পিপল ক্যাম্পেইন' নামের একটি উদ্যোগ। মানবাধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের অনুসরণে সংগঠিত ওই আন্দোলন তাদের 'দ্য সোলস অব পুওর ফোক' শীর্ষক গবেষণায় দেখিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারিত দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে ৪ কোটি ১০ লাখ মানুষ। আর নিম্ন আয় অথবা দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছেন ১৪ কোটি মার্কিনি, যারা মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি (৪৩.৫ শতাংশ)। শিশুদের ১০ জনের মধ্যে চারজন সেখানে অন্তত এক বছর দারিদ্র্যের মধ্যে কাটাতে বাধ্য হয়। প্রতিবছর আড়াই লাখ মানুষ দারিদ্র্যের কারণে মারা যায়।

এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে মিলে যায় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর হালনাগাদ করা ‘ইউএস সেনসাস ব্যুরোর’ পরিসংখ্যানও। এই সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৮ জনে ১ জন অন্তত দরিদ্র। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪ কোটি দরিদ্র মানুষ মোট জনসংখ্যার ১২.৭ শতাংশ। এদের মধ্যে ১ কোটি ৮৫ লাখ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন, যাদের পারিবারিক আয় দারিদ্র্য সীমার অর্ধেকের কম। যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্য ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, দেশটিতে দিনকে দিন ধন বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। দিনে ২ ডলারেরও কম অর্থে জীবন ধারণ করতে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ