রবিবার ০৫ মে ২০২৪
Online Edition

রাহাতের কুরবানি

আসমা আফরিন : ভাদ্র মাস। থোকা থোকা মেঘের কণা দেখা যাচ্ছে আকাশে। সাদা কাশফুলে ছেয়ে গেছে মাঠ। কখনো বা বৃষ্টি নামছে আবার রোদ উঠছে। এখন বৃষ্টি নেই। রাহাতের হোমওয়ার্ক কাজ শেষ। তাই সে নদীর ধারে বন্ধুদের সাথে খেলছে। পাশের বাড়ির অন্তু এসে খবর দিল, তোদের ছাগলটার বাচ্চা হয়েছে। রাহাত জিজ্ঞেস করলো কি বাচ্চা হয়েছে রে? অন্তু বললো, তা জানি না বলেই ভোঁ দৌড়। রাহাত এবার দৌড়ে এলো বাড়ি। এসেই দেখে খাশি হয়েছে। ওর আনন্দ দেখে কে। যেন ওর ছোট কোন ভাই হয়েছে। কারণ, আগে থেকেই বলা ছিল খাশির বাচ্চা হলে তাকেই দিতে হবে। সারা বাড়ি মাথায় করে তুললো রাহাত। মাকে বললো, মা আমার ছাগলের আকিকা দিয়ে একটি ভালো নাম রাখব। মা একটু হেসে বলে, পাগল ছেলে আমার। ছাগলের আবার আকিকা করতে হয় নাকি? একটা নাম রেখে দিলেই হবে।
দিনটি ছিল সোমবার। তাই অনেক ভেবেচিন্তে নাম রাখল সম্রাট। সম্রাটকে ঘিরেই তার সব স্বপ্ন। সপ্তাহে তিন দিন তাকে শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করায়। তারপর সারা গায়ে হালকা করে সরিষার তেল মাখায়। তাতে সম্রাটের পশমগুলো চিকচিক করে। বাবার কাছ থেকে টোষ্ট, বিষ্কুট, পাউরুটি, পটেটো, লাড্ডু কিনে নিয়ে নিজে না খেয়ে সব সম্রাটকেই খাওয়ায়।
রাহাত এবার ক্লাস টু তে। ও স্কুল থেকে ফেরার পথে সম্রাটের জন্য ঘাস কেটে নিয়ে আসে। রাহাতের আদর যত্নে খুব দ্রুই নাদুস নুদুস হয়ে উঠলো সম্রাট। স্কুল থেকে এসেই ছুটে যায় তার পাশে। সম্রাটও রাহাতের কোলের মধ্যে গিয়ে গিয়ে বসে পড়ে। আর আস্তে আস্তে ম্যাঁ ম্যাঁ করে ডাকে। রাহাত আলতো ভাবে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তারপর কত রকম কথা বলে তার সাথে। আমাকে মিস করছিলে তাই না ? এই তো আমি এসে গেছি। আজ সারাদিন তুমি আমার পাশে থাকবে। ধীরে ধীরে সম্রাট হয়ে উঠল তার খেলার সাথী।
আর মাত্র কয়েকদিন বাকি আছে ঈদুল আযহার। কুরবানির গরু-ছাগল কেনার হিড়িক পড়ে গেছে। রাহাত তার মাকে জিজ্ঞেস করছে। মা এভাবে কেন গরু-ছাগল জবাই করা হয়। ওদের কি কষ্ট হয়না। অথচ আমরা ঈদের দিন কত মজা করি। তুমি বাবাকে নিষেধ করবে, তিনি যেন কোন পশু জবাই না করেন।
মা রাহাতকে বলল, রাহাত তোমাকে আজ রাতে স্ন্দুর একটি গল্প শোনাব। যদিও গল্পটি তোমাকে অনেক আগেই শোনানো উচিত ছিল।
রাতে ঘুমানোর সময় মা গল্পটা বলা শুরু করলেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর পুরো ঘটনাটি বললেন। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কিভাবে একজন পিতা তার কলিজার টুকরা সন্তানকে কুরবানি করতে পারেন এবং সন্তান বিনা দ্বিধায় কিভাবে তরবারির নিচে মস্তক অবনত করেন।
গল্পটি শুনে রাহাতের কচি হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করল। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। আগামীকাল ঈদ কিন্তু রাহাতের মনটা খুব খারাপ। সম্রাটের দিকে তাকালেই মনটা হু হু করে কেঁদে ওঠে। আবার নিজেই মনকে সান্তনা দিচ্ছে ইব্রাহিম (আঃ) তো এভাবে কাঁদেনি। তাহলে আমি আবার আল্লাহকে কেমন ভালোবাসলাম? না! না! আমি আর কাঁদব না।
ঈদের দিন সবার মনে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে বিশেষ করে ছোট্ট ছেলেমেয়েদের। কিন্তু রাহাতের মনে বার বার দোলা দিচ্ছে সম্রাটকে নিয়ে তার দীর্ঘ দিনের স্মৃতি। গত বছর সম্রাটকে নিয়ে সে ঈদের মাঠে গিয়েছিল। আর হয়তো সেটা কখনো হবে না। পারবে না গায়ে স্নেহের পরশ বোলাতে। পারবে না খেলার সাথী হতে। ভাবতে ভাবতে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। চোখ মুছে ধীরে ধীরে সম্রাটের কাছে গেল। গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে তাকে মায়ের সামনে নিয়ে আসলো। মাকে বলল, মা আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার সম্রাটকে কোরবানি দিব। মা অবাক হয়ে রাহাতের দিকে চেয়ে থাকলো। চোখের পানি ধরে রাখতে পারল না। রাহাতকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলো। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, আমি নিজেও কখনো সম্রাটকে কোরবানির কথা ভাবিনি। অথচ আল্লাহর ভালোবাসার ক্ষেত্রে তুমি অনেক দূর এগিয়ে গেছ বাবা। আমি দোয়া করি মহান আল্লাহ যেন তোমাকে পুরোপুরি মুমিন হওয়ার তাওফিক দেন। শামিল করেন তার প্রিয় বান্দাদের কাতারে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ