রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

‘মরছে নদী ধুকছে দেশ : নিঃশেষ হচ্ছে পরিবেশ’

আখতার হামিদ খান : [তিন]
এখন নদী আছে কিন্তু নেই কোনো চঞ্চলতা। নদীর জলে আর হরহামেশা মাছ বা জলজ প্রাণী খেলা করে না। প্রত্যহ নির্গত শিল্প-কারখানার দূষিত বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশনের জলে নদী, খাল-বিলের জল দূষিত হচ্ছে। এক এক করে এসব কারণে জলের মাছ গেছে। জলের অন্যান্য প্রাণীর বংশ ধ্বংস হয়েছে। বিষাক্ত জলে যখন মানুষের নাভিশ্বাস, তখন ক্ষুদ্র এ প্রাণীর টিকে থাকার প্রশ্নই আসে না। মৎস্য অধিদফতরের সমীক্ষা বলছে, দেশের অনেক প্রজাতির মাছ আজ মহা সংকটে। অনেক প্রজাতি বিলুপ্তের তালিকায় চলে গেছে। শিল্প-কারখানা থেকে সরাসরি জলে আসছে ধাতব বর্জ্য, রঞ্জক পদার্থ, বিভিন্ন ক্ষতিকর এসিড ও অ্যারোমেটিক যৌগ। আবার পয়ঃপ্রণালীর মাধ্যমে আসছে ক্ষতিকর কপার, জিংক, ক্রোমিয়াম, নিকেল, লেড, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি ধাতু। ফ্যাট, ফ্যাটি এসিড, সাবান, ডিটারজেন্ট, এস্টার, অ্যামাইনো সুগার প্রভৃতি ছাড়াও অণুজীব দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাধ্যমে জৈব পদার্থকে ভেঙে ফেলে। এতে একদিকে যেমন দ্রবীভূত অক্সিজেন হ্রাস পায়, আবার এতে জল মারাত্মক দূষিত হয়। এতসবের সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার। মিষ্টি জলে হাতড়িয়েও পাওয়া যাচ্ছে না মিষ্টি মাছ। যে কারণে এখন জল মানেই মাছ বা জলজ প্রাণীর আবাসস্থল নয়। নির্বংশ হয়ে গেছে এরা। বিশেষ করে দাড়কিনি, মলা, ঢেলা, চাঁদা, টাটকিনি, টেংরা, বাইম, কাঁকিলা, চাপিলা বা খয়রা, বাঁশপাতা, ঘাঁরো, পুঁটি, তিনকাঁটা, বোয়াল, আইড়, ফোলই, কাতল, রুই, মৃগেল, ইলশে বাটা, কালিবাউশ, কুঁচে ও টেপাসহ বিভিন্ন রকমের চিংড়ি এখন হাট ঘুরে ভাঁড়ে মেলানো দুষ্কর। নদী আজ মরে গেছে। আমরা নদীকে স্তব্ধ করে দিয়েছি। ওরা কখনও বলতে জানে না। কাঁদতে জানে না। কখনও প্রশ্ন করে না। জানে না কোনো প্রতিবাদ করতে। তবে বুঝতে পারে। আমাদের পরম আত্মীয় নদী আজ আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।
বন্যার পানির সাথে বর্জ্য হালদায় দূষণে মরছে মাছ
হালদায় আবারো বর্জ্য পড়েছে। মারা যাচ্ছে রুই জাতীয়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। গত দুই দিনে নদী ও সংযুক্ত শাখা খালে বর্জ্যর কারণে প্রচুর পরিমাণে মরা মাছ ভেসে উঠে। মরা মাছ ধরতে গতকাল বুধবার নদীর দুই তীরেরাউজান, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির শতশত মানুষ হাতজাল নিয়ে নেমে পড়েন। তাদের জালে ধরা পড়ে বিভিন্নপ্রজাতির মাছ। ঘটনার তদন্ত করতে এসে মাছ ও জালসহ ১০ জনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন মেয়াদের সাজাদিয়েছে রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম হোসেন রেজা’র নেতৃত্বে মোবাইল টিম।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, হালদা নদীর শাখা হাটহাজারীর খন্দকিয়া, কাটাখালী, মাদারি, পোড়াকপালিএবং রাউজানের কাগতিয়া খালের মুখে মাছ মারা গেছে বেশি। গতকাল বুধবার নদী থেকে প্রচুর মাছ পান তারা।এর মধ্যে বেশির ভাগ মাছ মরা।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার থেকে হালদা নদীর পানি কালো রং ধারণ করতে থাকে।গতকাল বুধবার সকাল থেকে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নদীর ভাটি এলাকা রাউজানেরউরকিরচর, নাপিতের ঘাট, খলিফাঘোনা, মদুনাঘাট, আবুরখীল, আজিমের ঘাট, বিনাজুরি, কাগতিয়া, পশ্চিমগুজরার ডোমখালী, হাটহাজারী উপজেলার মাদার্শা, রামদাইশ্যা হাট, আমতুয়াসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নদীর পানি কালোদেখা গেছে। এছাড়া হালদা নদী সংযুক্ত হাটহাজারীর খন্দকিয়া, খাটাখালী খাল, মাদারি খাল, রাউজানের কাগতিয়াখাল, সোনাইরমুখ খালসহ বিভিন্ন উপ–শাখা খালেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বর্জ্য ও দুর্গন্ধময় পানি।
এ প্রসঙ্গে হালদা বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া  দৈনিকপূর্বকোণকে বলেন, ‘দুইটি কারণে হালদায় মাছ মরতে পারে। প্রথম, বন্যার কারণে নগরী ও রাউজান, হাটহাজারী ওফটিকছড়ির বিভিন্ন এলাকার বর্জ্য খালবিল হয়ে হালদা নদীতে পড়েছে। এসব বর্জ্য পচন ধরায় নদী ও খালেঅক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়। এ কারণে নদীতে মাছ মরে যাচ্ছে। দ্বিতীয়, হাটহাজারী, রাউজান ও বন্যায় বিপুল পরিমাণে পুুকুরদিঘি পানিতে ডুবে যায়। মাছ ছড়িয়ে পড়ে খাল–বিলে। কিছু অসাধু ব্যক্তি এসব মাছ ধরতে খালবিলে বিষ ঢেলে দিতে পারে। এ কারণেও মাছ মারা যেতে পারে।’
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি কালো রং ধারণ করেছে। তাতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।স্থানীয় লোকজন নদীতে ভেসে উঠা মরা মাছ ধরছে। কেউ কেউ জাল দিয়ে মরা মাছের পাশাপাশি দুর্বল হয়ে পড়া জীবিত মাছও ধরছে।
এদিকে রাউজান উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন রেজা গতকাল বুধবার বেলা ১২টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নদীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন।এ সময় তিনি ৬ হাজার মিটার জাল আটকসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেন। এ সময় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরাও স্পিড বোট চালানোর অপরাধে দশজনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেন তিনি।
রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুল জব্বার সোহেল দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বুধবারসকাল থেকে হালদা নদীর উরকিরচর ইউনিয়নের নাপিতের ঘাট, খলিফাঘোনা, আজিমেরঘাট, আবুরখীলসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুল পরিমাণ মানুষ নদীতে নেমে মরা মাছ ধরে। দূষিত বর্জ্যরে কারণে মাছ মরে গেছে বলে এলাকার লোকজন আমাকে জানিয়েছেন।’
কাগতিয়া গ্রামের নদী তীরবর্তী এলাকার আবদুল লতিফ বলেন ‘হালদা নদী ছাড়াও সোনাইরমুখ খাল, কাগতিয়াখাল ও বিনাজুরি ইউনিয়নের বিভিন্ন খাল দূষিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে চিংড়ি, রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন ছোট প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠছে। এলাকার লোকজন তা হাতজাল দিয়ে ধরেছে।’ তার মতে বন্যার পর বিভিন্ন মুরগির ফার্মের বিষ্ঠা, বর্জ্য, হালদা নদী সংযুক্ত খালগুলোর মাধ্যমে নদীতে প্রবেশ করায় হালদা নদীর পানিও দূষিতহয়ে পড়েছে। এ কারণে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পানি বিষাক্ত হয়েছে।’
রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমীনুল ইসলাম বলেন ‘বন্যার পানির সাথে বর্জ্য গিয়ে পড়ার কারণে নদীর পানি দূষণ হতে পারে। পাঙ্গাসসহ ছোট মাছ মারা যাওয়ার খবর পেলেও কোনো মা মাছ মারা যাওয়ার খবর আমাদের কাছে নেই।’
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন রেজা বলেন ‘নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরা ও স্পিডবোট চালানোর অপরাধে হালদা নদী থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সাজা দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন ‘নদীতে আমি একটি পাঙ্গাস মাছ মরা দেখেছি। তবে পরিদর্শনের সময় নদীর পানি আগের চেয়ে দূষিত বলে আমার মনে হয়েছে।’
দূষণে মরছে কুমার নদের মাছ : জেলার শৈলকুপার কুমার নদে একে একে মরে ভেসে উঠছে মাছ ও জলজ প্রাণী। নদের পানি দূষিত হওয়ার ফলে এমনটি ঘটছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে এ নদের পানি হঠাৎ করেই কালো বর্ণ ধারণ করে। এর পর থেকেই নদীটিতে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ মরে ভেসে উঠতে থাকে।
এদিকে মাছ ভেসে উঠতে দেখে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর নারী, পুরুষ ও শিশুরা জালসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে নদীটিতে নেমে পড়ে। বিশেষত উপজেলার গাড়াগঞ্জ এলাকায় এ দৃশ্য বেশি দেখা যাচ্ছে। গ্রামবাসীর জালে ধরা পড়ছে পুটি, চিংড়ি, টেংরা, ফলই, বাইমসহ বিভিন্ন দেশীয় মাছ।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার উপর দিয়ে মাগুরার মধুমতি নদীতে গিয়ে মিশেছে কুমার নদ।
এ খবরের সত্যতা স্বীকার করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র হাওলাদার জানান, নদীর পানি দূষিত হয়ে কালো হয়ে গেছে। পানিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে। এ কারণে মাছ ভেসে উঠছে ও মারা যাচ্ছে। তবে ঠিক কি কারণে পানি দূষণ হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
বিবর্ণ হালদা নদী: প্রয়োজন জরুরি উদ্যোগ
চট্টগ্রামের হালদা নদী শুধুই একটি নদী নয়, এটি একটি স্বর্ণ প্রসবিনী হাঁসের মতো অনেক মূল্যবান এবং দামি। কিছু অতিলোভীর কবলে পড়ে এবং প্রতিনিয়ত দখল, দূণষ, বিষাক্ত বর্জ্যে হলদার এই করুণ পরিণতি। একটি প্রবাদ আছে, এক মালিক তার স্বর্ণ প্রসবিনী হাঁসকে তার সব ডিম এক সঙ্গে পাওয়ার আশায় জবাই দেয়। জবাই দেয়ার পর দেখা গেল তাতে কোনো ডিম নেই।’ ঠিক তেমনি কিছু লোভী, দুবৃর্ত্ত, ভূমি দস্যু, মৎস্য শিকারের নামে অবলীলায় হামলে খেয়ে পড়ছে বেচারা হালদা নদীর ওপর। তাই এই বেহাল দশা, দৈন্য দশা আর বিপর্যস্ত হচ্ছে এর অস্তিত্ব। বিপযর্স্ত হচ্ছে হালদার পরিবেশ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য। হুমকির মুখে বিশ্বের অন্যতম মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় মা-মাছের বিচরণ ক্ষেত্রেও। এর সঙ্গে চলছে হালদা দখল, দূষণ, একশ্রেণির দুর্বৃত্তর কবলে পড়ে আজ বিপন্ন, বিপযর্স্ত এই নদীর কান্না শোনার কেউ নেই। সম্প্রতি এই নদীর করুণ অবস্থা, আহাজারি নিয়ে বেশ কিছু খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাতেও প্রশাসনের কতার্ ব্যক্তিদের টনক নড়েনি। সরকারের নীতি নিধার্রণী মহলেরও ঘুম ভেঙেছে বলে প্রতিয়মান হয়নি।
বিশ্বের অনন্য প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীর তুলনা শুধু হালদার সঙ্গে করা যায়। মূলত দুলর্ভ প্রাকৃতিক সম্পদের হালদা নদীকে বলা হয় দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র। জোয়ার-ভাটার এই নদীতে মিষ্টি পানির মাছের ডিম ছাড়ার ঘটনা পৃথিবীর এক বিস্ময়, মহান সৃষ্টিকতার্র এক অতিমূল্যবান দান। অথচ, এই দুলর্ভ সম্পদ আমরা অযতেœ, অবহেলায়, অব্যবস্থায়, আমরা নিজেরেই একে বিপদের মুখে, বিপযাের্য়র মুখে ঠেলে দিচ্ছি। আমাদের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর হঠকারিতায় হালদা এখন ক্লান্ত অবসন্ন এবং বিপন্ন বেচারা হালদা। এই অবৈজ্ঞানিক, অপরিকল্পিতভাবে নানান গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নদীর গতিপথ একবার বাঁকা করা, আবার সোজা করা, হালদার বুকে আত্মঘাতী রাবার ড্যাম বসানো, নদীর পাড়ে- তীরে অপরিকল্পিতভাবে কলকারখানা স্থাপনের অনুমতি দান, হাঁস-মুরগির খামার গড়তে দেয়া, পৌরসভার বর্জ্য ফেলা এবং নদীর বুক চিরে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য বহন ইত্যাদি কারণে হালদার অস্তিত্ব আজ বিপন্ন, বিপর্যস্ত।
এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, হালদায় গত মে মাসে কাপর্-জাতীয় মাছ ১০ হইতে ১২ বছরের মধ্যে সবচাইতে বেশি ডিম ছেড়েছিল। কেন্দ্রীয়ভাবে নদী সুরক্ষার অংশ হিসেবে চলতি বছরের শুরুতেই সরকারের নিেেদর্শ নদীর দু’পাড়ের অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের খবর বড় বড় হরফে অত্যন্ত গুরুত্বসহ স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়েছিল। এটা ছিল হালদার জন্য, আমরা যারা নদীপ্রেমী আমাদের জন্য সুখবর। অথচ এর অল্পদিনের মধ্যেই শিল্প, আবাসিক এলাকা ও পাহাড় হইতে নামিয়া আসা বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থে হালদা নদীকে আশঙ্কাজনকভাবে দূষিত করে তোলা হয়। কিছুদিন আগে প্রবল বষর্ণ ও পাহাড়ি ঢলে রাউজান, ফটিকছড়ি, হাটহাজারীতে বন্যা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কয়েক দিন ধরে হালদা নদীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, ডলফিনসহ জলজ প্রাণী মরে ভেসে ওঠেছে নদীর বুকে। অবশ্য পাহাড়ি ঢল, ফ্ল্যাশ ফ্লাড বা ঝটিকা বন্যা হালদা নদীর জন্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু অতীতে কখনো মাছ, ডলফিনসহ জলজপ্রাণীর এ রকম মৃত্যু হয়নি। এইবার কেন মরল? কারণ হচ্ছে হালদা নদীতে প্রতি লিটার পানিতে স্বাভাবিকভাবে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ থাকে অন্তত পাঁচ মিলিগ্রাম, অথচ সংগৃহীত পানির নমুনায় অক্সিজেনের মাত্রা পাওয়া গেছে শূন্য দশমিক ২১ হতে এক মিলিগ্রাম মাত্র! আর হালদার পাশের খন্দকিয়া খালে দ্রবীভূত অ্যামোনিয়ার পরিমাণ স্বাভাবিকের চাইতে ১০০ গুণ বেশি। দ্রবীভূত অক্সিজেন কম থাকার পাশাপাশি অ্যামোনিয়ার বিষক্রিয়াই মাছ, ডলফিনের মড়কের অন্যতম কারণ। একই কারণে সম্প্রতি উদ্বেগজনক হারে বিপন্ন প্রজাতির গাঙ্গেয় ডলফিন মারা যাবার ঘটনাও ঘটছে। গত জুন মাসের শেষ দিক থেকে জুলাইর প্রথম সপ্তাহের প্রায় দুই সপ্তাহের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে হালদা নদীতে উজান এলাকার কলকারখানা, পোলট্রি খামারসহ বিভিন্ন শিল্পের বিপুল পরিমাণ ক্ষতিকর বর্জ্য প্রায় ২০টি খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হালদাতে মিশে যায়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ