বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

‘সাইক্লোট্রন’ ফিউচার অব সাইকেলিং

শাহরীয়া: আধুনিক যুগে যেখানে মানুষ হাঁটাও ভুলে যাচ্ছে। কেননা বিজ্ঞানীরা এখন হাঁটার পথকেও ডিজিটাল করে ফেলার চিন্তা করছে। অর্থাৎ কেবল বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলেই হবে, আপনাকে অটোমেটিকভাবেই গন্তব্যে নিয়ে যাবে অনেকটা চলন্ত সিঁড়ির মতো। যদি এমনটি হয় তাহলে পরিশ্রমসাধ্য বাহন কে পছন্দ করবে?
বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই সাইকেলের উম্মাদনা বেড়েই চলেছে। ইদানীং মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা যেমন বেড়েছে তেমনি স্টাইলের প্রতিও মনোযোগী হয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য সচেতনতার সঙ্গে স্টাইলের সমন্বয় করে আজকাল সাইকেলে করে মানুষকে অফিসে যেতেও দেখা যায়। অন্যদিকে সাইকেলের নতুন করে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে সাইকেল নিয়ে হচ্ছে বিস্তর গবেষণা। কেউ গবেষণা করছেন এর গতি বাড়াতে। কেউ গবেষণা করছেন এর ওজন কমাতে। কেউবা আরামে সাইকেল চালানোর উপায় খুঁজছেন। কেউ চেয়েছেন এসব কিছুর বাইরে সম্পূর্ণ বিবর্তন। সেই বিবর্তনের ফসল হচ্ছে ‘সাইক্লোট্রন’। যা আপনাকে সাইকেল সম্বন্ধে নতুন করে ভাবতে শেখাবে। যা আপনাকে সাইকেলের ঘোরে নিয়ে যাবে। সাইকেল, যা কোনো মোটরের স্পর্শ ছাড়াই আপনাকে দেবে মোটর সাইকেলের চেয়েও উন্নত অভিজ্ঞতা। এটিকে ঠিক সাইকেল বললে হয়তো আপনাকে বোঝানো যাবে না। তার চেয়ে বরং একে বলা ভালো সাইকেলের মতো দেখতে ‘বহুমুখী বাহন’।
সাইকেল নিয়ে গবেষণা অনেক হয়েছে। তবে সাইক্লোট্রন নিয়ে গবেষণা হয়েছে টানা তিন বছর। শুধু এটি স্পোক ছাড়া একটি সাইকেলই নয়। অথবা এর টায়ার তথাকথিত শুধু বায়ু ছাড়া টায়ার বলেই নয়। এর প্রতিটা পদক্ষেপে আপনি পাবেন গবেষণার ছোঁয়া। এটির মূল কাঠামো তৈরি হয়েছে সবচেয়ে আধুনিক কার্বন প্রযুক্তিতে, যাতে এটা হালকা এবং মজবুত হয়। এর সবচেয়ে উন্নত ভার্সনের ওজন হবে মাত্র ১১.৮ কেজি! এটি চলার পথে বাতি না থাকলে নিজস্ব আলোর ব্যবস্থা দ্বারা নিজেকে আলোকিত করে, এমনকি নিজের জন্যে তৈরি করে লেজার ‘আলোক পথ’। মানে হল, এর টায়ার তো আলোকিত হয়ই একই সঙ্গে সাইক্লোট্রোনের দুইদিকে লাল লেজার আলো দিয়ে করা হয় আপনার জন্যে আলাদা লেন। যাতে অন্ধকার পথে আপনার গতিপথ সম্বন্ধে অন্য বাহনগুলো ধারণা পায়। তাছাড়া এর চাকায় আছে আরো বিস্ময়। আপনি এর চাকাকে বাস্কেট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এখানে আপনার বাজার বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বহন করতে পারবেন!
এতসব সুবিধা শুনে ঘোরের ভেতর থেকে থাকলে সহসাই তা কাটানোর উপায় নেই। কারণ এই সাইক্লোট্রন আপনাকে এমন কিছু সুবিধা দেবে যা শুনলে আপনার ঘোর আরো বাড়বে। যেমন শুধু পণ্য নেয়াই নয়। আপনি আপনার বাচ্চাদেরও সুন্দরভাবে বহন করতে পারবেন। একে আপনি বেবি কেরিয়ারে পরিণত করতে পারবেন। অনেকটা শোলে ছবির মোটর সাইকেলের মতো।
সাইক্লোট্রন বিশ্বের একমাত্র সাইকেল যা সম্পূর্ণ তার মুক্ত। এর না আছে কোনো চেইন অথবা কোনো তার। লাইট জ্বালাতে কিংবা চাকা ঘোরাতে লাগবে না কোনো তার কিংবা চেইন। তবে এটা একেবারেই ক্যাবলবিহীন। ক্যাবল আছে তবে সেটা কাঠামোর ভেতর। এই সাইকেল দুই মুডে চালানো যায়। স্পোর্টস মুড এবং কমফোর্ট মুড। সম্পূর্ণ ডিজিটাল ফর্মে আপনার রাইডিং ডাটা এটা সংরক্ষণ করে। আপনার স্মার্টফোনের সঙ্গে অ্যাপের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে স্মার্ট ফিচার প্রদান করে। জিপিএস থেকে শুরু করে সকল আধুনিক ব্যবস্থা আছে এতে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল এর আরামের বিষয়। এটি এমন ডিজাইনে করা হয়েছে যাতে সাইকেল চালানোকে আপনার জন্যে যাতে পরিশ্রমের কাজ মনে না হয়। আউটলুকই এর চমকে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট। যেমন বৈচিত্র্য আছে আর কাঠামোয় তেমনি বৈচিত্র্য আছে চাকায়। তাই একে বলা হয় ফিউচার অব সাইকেলিং।
আসলেই তাই, প্রথাগত সাইকেলের মতো চাকায় স্পোক নেই। নেই কোনো চেইন কিংবা তার। ডিজাইনে আছে শিল্পের ছোঁয়া। কালো আর সাদার অপরূপ মিশ্রণ। রাতে এর রুপ যেন আরো ঝড়ে পরে। চাকায় থাকা বাতি চাকাকে করে তোলে অন্য জগতের বাহনের মতো। তাছাড়া এর লেজার বিমগুলো সাইকেলের আলোকপথ নির্দেশ করে, যা এই ধরনের বাহনের জন্যে সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। এক কথায় বলতে গেলে সাইক্লোট্রনের ভাষার সঙ্গে সহমত পোষণ করতে হয়, এটা ভবিষ্যতের সাইকেল। সাইক্লোট্রন আসলেই সাইকেলের জগতে সাইক্লোন সৃষ্টি করেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ