কুড়িগ্রামের দিগন্ত জুড়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে আমন ধান
মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম থেকে : কুড়িগ্রামের দিগন্ত জুড়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে উঠতি আমন ধানের ক্ষেত। চলতি আমন মৌসুমে পরিমিত পরিমানে বৃষ্টি না হওয়ায় আমন ফলনে কিছুটা হ্রাস পাওয়ার আশংকা কৃষকের মনে দানা বাধলেও মৌসুমী হাওয়ায় আমন ধানের সুঘ্রাণ মণ কাড়ে সবার। মঙ্গা নামে পরিচিত কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় আগাম জাতের আমন ক্ষেত সোভা পাচ্ছে মাঠ জুড়ে। ধানের শীষে কাঁচা-পাকা সোনা রং লেগেছে। চাষীগণ বুক ভরা আশা নিয়ে ধানের ক্ষেত পরিচর্যা ও দেখা-শুনা করছে প্রতি নিয়ত। পাখিরা কিচির-মিচির গান গাচ্ছে ধানের শীষে বসে আপন মনে প্রকৃতির টানে। তবে ইঁদুরের উৎপাত এতোই বেশী যে কৃষকের মন খুব খারাপ। তবুও কৃষকগণ আশা করছেন আর মাত্র ৫ থেকে ৭ দিনের মাথায় তাদের ঘরে তুলবে সোনালী রংয়ের আমন ধান। যদি আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নায়। আমন ধানের ওপর ভরসা করে কার্তিক ও অগ্রহায়নের অভাব জয়ের স্বপন দেখছে জেলার কৃষক ও খেটে খাওয়া দিন মজুর শ্রেণীর মানুষজন।
কুড়িগ্রামের অভাবী জনপদে আশ্বিন-কার্তিকের মঙ্গাকে জয় করছে আগাম জাতের ধানের উপর। স্বল্প মেয়াদি আবাদ যোগ্য বিআর-৩৩ ধান লাগানো হয়েছে ব্যপক। এ ধান উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউট (ব্রি)। অন্য জাতের যে কোন ধান চাষে সময় লাগে ১৪০ থেকে ১৫০ দিন আর ব্রি-৩৩ জাতের ধান রোপনের পর ১১০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে কাটা সম্ভব বলে জানা গেছে। ফলে ওই জমিতে আবার আগাম জাতের মিষ্টি কুমড়া, আলু সরিষা সোয়াবিন ভুট্টা সহ বিভিন্ন জাতের রবি শষ্য চাষ করে বাড়তি অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। প্রতি একরে বিআর-৩৩ জাতের ধান উৎপাদন হয় ৬০ থেকে ৭০ মন এবং অন্য জাতের ধান ফলে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ মণ। ফলে বিআর ৩৩ জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে এ জেলার কৃষকগণ। সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী এলাকার চাষী আবদুর রহমান জানান, তার আবাদ যোগ্য ২ একর জমির দেড় একরে বিআর ৩৩ ধান লাগিয়েছেন। ওই ধান কেটে তিনি উক্ত জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ করবে। জেলার উলিপুর উপজেলার বজরা এলাকার চাষী আবুল কাশেম জানান, তার মোট প্রায় আড়াই একর জমির মধ্যে দুই একরে ৩৩ ধান লাগানো হয়েছে। আর মাত্র ক‘দিন পর ওই ধান কেটে ৫০ শতকে আলু এবং বাকী জমিতে গম ও পিঁয়াজ চাষ করবে। এ ছাড়াও চিলমারী উপজেলার মাচাবান্দা এলাকার মশিউর রহমান জানিয়েছেন, তার আবাদের প্রায় আড়াই একর জমিতে ৩৩ জাতের ধান লাগিয়েছেন। ধান কেটে পুরো জমিতে টরি জাতের সরিষা ও উন্নত জাতের ভুট্টা চাষ করবেন। এতে তার জমির উর্বরা শক্তি বাড়বে এবং বাড়তি আয় হবে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কুড়িগ্রামের এর সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, জেলায় চলতি আমন মৌসুমে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বিআর-৩৩ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। একই সময় গতবছর এ জেলায় বিআর-৩৩ জাতের ধান চাষ করা হয়েছিল প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে। তার আগের বছর চাষ হয়েছিল মাত্র ৭ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষকদের সচেতনতার কারণে বিআর-৩৩ জাতের ধানের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জেলায় মোট আবাদযোগ্য ১ লাখ, ৬১ হাজার, ৮’শ, ৫৩ হেক্টর জমি। এরমধ্যে আমন ধান লাগানো হয়েছে ১ লক্ষ্য, ২১ হাজার, ৫৮৫ হেক্টর জমিতে। জলাবদ্ধতার কারনে জেলার উলিপুর, ফুলবাড়ী ও রাজারহাট উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমি আমনের সময় পতিত থাকে বলেও জানা গেছে।