মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

শাহজাদপুরে তাঁত শিল্পের দুর্দিন

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : ডায়া গ্রামে তাঁত কারখানায় কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিক

এম,এ, জাফর লিটন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে : রং, সূতা ও রাসয়ানিক দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধির ফলে তাঁত সমৃদ্ধ জনপদ শাহজাদপুর উপজেলার কয়েক হাজার তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বেকার হয়ে গেছে হাজারও শ্রমিক। তাঁতীদের তাঁতে তৈরি বস্ত্র সুষ্ঠ বাজারজাত করণের অভাবে পন্যের নায্য মূল্য থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে লোকসানের মুখে পড়ে বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে তাঁত। আর এতে তাঁতীরা অনেকেই জীবন জীবিকার জন্য চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁত শিল্পের ভূমিকা অনেক। হস্ত চালিত তাঁতে প্রায় বছরে ৭০ কোটি মিটার বস্ত্র উৎপাদিত হয় যা অভ্যান্তরীন চাহিদার ৪০ ভাগ মিটিয়ে থাকে। বাংলাদেশের তাঁত সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিতি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় রয়েছে হাজার হাজার তাঁতী পরিবার। শাহজাদপুরের তাঁতীদের তাঁত কারখানায় উৎপাদিত বস্ত্র দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশী বাজারে ভারতীয় কাপড়ে ছয়লাব হওয়া আর রং, সূতা ও রাসনায়িক দ্রব্যাদীর অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধিতে যুগের সাথে টিকে থাকতে না পেরে পুঁজি ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক শত শত তাঁতীর কয়েক হাজার তাঁত। হাটে বাজারে আশানুরূপ বিক্রি না থাকায় সময়মত এসব তাঁতীরা তাদের শ্রমিকের মূল্য ও রং সূতার মহাজনের কাছে বকেয়া টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। তাঁত চালাতে গিয়ে অনেক তাঁতীই পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে। অন্যত্রে বিক্রি কিম্বা তাঁত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে তাঁতীরা। জীবন জীবিকা চালাতে তারা বেছে নিচ্ছে অন্য পেশা। সরে জমিনে ঘুরে উপজেলার তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা খুকনী, কৈজুরী, জামিরতা, ডায়া, রূপপুর, হামলাকোলা, পুঠিয়া, পোরজনা, পাড়কোলা, এলাকায় বন্ধ থাকা দেখা গেছে শত শত তাঁত। তাঁত বন্ধ হওয়ায় ধীরে ধীরে থুমকে যাচ্ছে শাহজাদপুর উপজেলার অর্থনীতি। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীর অববাহিকায় তাঁত শিল্পের বিকাশ ঘটে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এ শিল্পের সংখ্যা। লাভজনক পেশা হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রসার ঘটতে থাকে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প। আর এই তাঁত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে এ অঞ্চলের হাজার হাজার বেকার নারী-পুরুষ। ঘরে বসে না থেকে কেউ তাঁতে কাপড় বুনিয়ে, কেউ চরকায় সূতা কেটে, কেউ সূতা প্রসেসিং করে, কেউ ড্রাম মাষ্টারী করে, নির্বাহ করতে থাকে জীবন জীবিকা। ধীরে ধীরে তাঁত শিল্পের সুবাদেই পাল্টে যেতে শুরু করে এ জনপদের অর্থনীতি। অনেক গার্হাস্থ্য পরিবারের লোকজনও তাঁত কারখানা বসিয়ে জড়িয়ে পরে এ পেশার সাথে। এ উপজেলার তাঁতে তৈরী শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, ধুতি, চাদর বিক্রির জন্যই শাহজাদপুর শহরে গড়ে উঠে উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম কাপড়ের হাট। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা শাহজাদপুর হাটে আসে কাপড় ক্রয় করতে। শাহজাদপুরের তাঁতীতের তৈরি কাপড় সাধারণত ৪০০টাকা থেকে ১০,০০০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু তাঁত শিল্পের এই দুর্দিনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় দরিদ্র তাঁতীদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা । সংসার চালাতেই হিমসিম খাচ্ছে তাঁতীরা, ফলে স্ত্রী, পুত্র নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এমতবস্থায় তাঁতীরা সরকারের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে ঋণ, বিদেশ থেতে উন্নত মানের সূতা, বিতণের ব্যবস্থা করলে তাঁত শিল্পকে রক্ষা করা যাবে। এ ছাড়াও নায্যমূল্যে তাঁতীদের উৎপাদিত কাপড় বিক্রির জন্য সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। আর তবেই রক্ষা হতে পারে এই উপজেলায় বন্ধ হওয়া হাজার হাজার তাঁত।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ