সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

কিছুক্ষণের বৃষ্টিতেই গলে পড়লো সব পোস্টার

ইবরাহীম খলিল : ঢাকার নির্বাচনী এলাকা গতকাল সোমবার কিছুক্ষণের জন্য পোস্টারমুক্ত হয়ে পড়েছিল। লোকজনের মধ্যে বলাবলি শুরু হয় যে, বৃষ্টির কল্যাণে হলেও লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি হয়েছে। দুপুরের দিকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সব পোস্টার ভিজে নষ্ট হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। ফলে নির্বাচনী এলাকা একেবারে পোস্টারমুক্ত হয়ে যায়। তখন সাধারণ মানুষ মন্তব্য করতে থাকেন যে, বৃষ্টিই লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করে দিয়েছে। অবশ্য বৃষ্টি থামার কিছুক্ষণ পর থেকেই আবার পোস্টার লাগানো শুরু হয়ে যায়।
গতকাল বৃষ্টির সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। গতকাল সকাল দশটার দিকে বৃষ্টির শুরু হওয়ার আগে ঢাকার কাকরাইল, শান্তিনগর এলাকা হয়ে রমনা এলাকায় দেখা যায় অলিগলিতে শুধুই রাশেদ খান মেননের পোস্টার। কিন্তু সাড়ে এগারটারদিকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সাদাকালো পোস্টারগুলো মোমের মত গলে গলে পড়তে দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকা পোস্টারমুক্ত হয়ে যায়। বেলা দুইটার দিকে লোকজনকে নতুন করে পোস্টার লাগাতে দেখা যায়।
ইস্কাটন, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, ফার্মগেট, সাতরাস্তা, মগবাজার, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন এলাকা ছেয়ে গেছে এই নেতার নির্বাচনী পোস্টার-ব্যানারে। ঢাকা-১২ আসনের বড় রাস্তা থেকে ছোট রাস্তা, উড়াল সড়কের দেয়াল ও স্তম্ভ, বড় গলি থেকে সরু গলি, হাট-বাজার- কোনো কিছুই বাদ যায়নি। কামালের নৌকার সাদা-কালো পোস্টার ঝুলছে সব জায়গায়। কিছু দূর পরপর স্থাপিত নির্বাচনী প্রচারণার অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোও সরব নৌকা মার্কার প্রচারণায়। এলাকাজুড়ে গণসংযোগ চালানোর পাশাপাশি বর্ণিল সাজে সজ্জিত ক্যাম্পগুলোতে ভরপুর চায়ের আড্ডাতেও মেতে রয়েছেন নৌকার সমর্থকরা। নৌকায় ভোট প্রার্থনার মাইকিংও আসছে কানে।
নির্বাচন ঘিরে প্রত্যেক ওয়ার্ডে প্রচারণা কমিটি করা হয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রার্থী নিজে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন। এলাকায় এলাকায় মতবিনিময় সভা করা হচ্ছে। সেখানে সরকারের সফলতা ও ১০ বছরে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। জনগণ নৌকার প্রচারণাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছে। আমরা শতভাগ আশাবাদী এ আসনে নৌকা মার্কা বিপুল ভোটে জয় পাবে।
সোমবার বিকালেও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকার সাত রাস্তার দিপিকার মোড়ে সভা করার কথা ছিল আসাদুজ্জামান খানের, কিন্তু বৃষ্টির কারণে সভাটি স্থগিত করা হয়। রাতে পশ্চিম রাজাবাজারে রণদা ফার্মেসির পাশে এক মতবিনিময় সভায় থাকার কথা রয়েছে আওয়ামী লীগের এই নেতার। তবে ধানের শীষের পোস্টার দেখা যায়নি। দেখা গেছে বাম নেতা জুনায়েদ সাকির কিছু পোস্টার দেখা গেছে। অন্যদিকে ঢাকা-১২ আসনে বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনী পোস্টার লাগানোর সময় মারধর করে তেজগাঁও থানা বিএনপিকর্মী আবুল হোসেন, সাইদ, শিফুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া শেরেবাংলা নগর থানা কৃষি কলেজ থেকে জামাল, সেলিম, অলি, শামিমকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ৩৬ নং ওয়ার্ড বিএনপি সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম খানের শ্যামলীর বাসায় পুলিশি তল্লাশী ও ভাংচুর করা হয় এবং সেই সাথে নির্বাচন পর্যন্ত এলাকায় না আসার জন্য হুমকিও দেয়া হয়।
‘আওয়ামী লীগের মিছিল দেখি, বিএনপির একটা মিছিলও দেখলাম না’ এই মন্তব্য করায় কাওরান বাজারে তেজগাঁও বয়েস মসজিদের খাদেম মো. তছলিমকে আওয়ামী যুবলীগের কর্মীরা মারধর করে এবং পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
এদিকে সোমবার সকাল ৯টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের সঙ্গে দেখা করে গণসংযোগ করেন রাশেদ খান মেনন। এ সময় তিনি ডাক্তারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং নৌকার পক্ষে ভোট চান। এরপর বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানী, সহযোগী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী রূপমসহ অন্যরা।
ঢাকা-১৫ আসনে সোমবার সকালে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য মুহাম্মাদ আতাউর রহমান সরকার ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সালাহ্উদ্দিন আইউবীর নেতৃত্বে ২০দল ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা-কর্মীরা শেওড়াপাড়া, ইষ্ট ওয়েস্ট স্কুল থেকে সিটি বাজার, ওলিমিয়ার টেক, পীরের বাগ, ৬০ ফিট পাকা মসজিদ পর্যন্ত ব্যাপক গণসংযোগ, প্রচার মিছিল ও লিফলেট বিলি করে।
এদিকে ঢাকা-৬ আসনে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি প্রচার দেখা গেল মহাজোটের প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশীদের। অন্য প্রার্থীরা সেভাবে মাঠে না নামলেও ফিরোজ নেমেছেন, প্রচারও চালাচ্ছেন। আর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন পাওয়া গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলছেন, তিনি মাঠে নামতে পারছেন না। ‘দৌড়ের ওপর’ আছেন।
ঢাকা-৬ আসনে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি প্রচার দেখা গেল মহাজোটের প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশীদের। অন্য প্রার্থীরা সেভাবে মাঠে না নামলেও ফিরোজ নেমেছেন, প্রচারও চালাচ্ছেন। আর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন পাওয়া গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলছেন, তিনি মাঠে নামতে পারছেন না। ‘দৌড়ের ওপর’ আছেন।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছিল। বৃষ্টি বিড়ম্বনায় অনেক পোস্টার নষ্ট হয়ে গেলেও অক্ষত থাকে তাপসের পোস্টার। ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস এবারও ঢাকা-১০ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। যেদিন থেকে প্রচার প্রচারণা শুরু হয়েছে সেদিন থেকেই তিনি মাঠে নেমেছেন। একই সঙ্গে তার নির্বাচনী এলাকার রাস্তা এবং অলিগলিতে পোস্টার ঝুলানো হয়েছে। যে পোস্টারগুলো শোভা পাচ্ছে তার সবগুলো লেমেনেটিং পোস্টার। ফলে আজকের বৃষ্টিতেও পোস্টারগুলো নষ্ট হয়নি। বাতাসে কোনো পোস্টার ছিঁড়েনি এবং পড়েনি।
তবে বৃষ্টির কারণে সকালে তাপস এবং তার স্ত্রীর প্রচারণায় নামার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে দুপুর ২টা পর্যন্ত তারা নামতে পারেননি। এই বৃষ্টির কারণে রাজধানীর অন্যান্য আসনের প্রার্থীর অনেকেই নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারেনি বলে জানা গেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ