শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪
Online Edition

ড্রেজার জুনিয়র হাইস্কুলটি বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ

তমিজউদ্দিন আহমদ নারায়ণগঞ্জ, ২ ফেব্রুয়ারি: পহেলা জানুয়ারী সরকার বই উৎসব পালন করলেও ড্রেজার জুনিয়র হাইস্কুলটি বন্ধ করে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার পরিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। এতে প্রায় তিনশ’ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া ও ১০ শিক্ষককের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার পথে বসেছে। ৩৫ বছরের প্রতিষ্ঠিত এ স্কুল চালু রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহ বিভিন্ন মহলে আবেদন জানিয়েছে শিক্ষকরা। বরাদ্ধ না থাকায় বিদ্যায়লটি বন্ধ করা হয় বলে জানান কর্তৃপক্ষ আর বিস্ময় প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক বললেন চালুর উদ্যোগ নিবেন।
নারায়ণগঞ্জ শহরের কিল্লারপুল এলাকায় নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার পরিদপ্তরে ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের পড়ালেখার জন্য বিদ্যালয়টি চালু হলেও পরে আশপাশের শিক্ষার্থীরাও এ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। শিক্ষার্থী বৃদ্ধি ও পারিপার্শ্বিকতায় ১৯৮৬ সালে প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান চালু করে ড্রেজার জুনিয়র হাইস্কুল নাম করণ করা হয়। বিদ্যালয়ে প্রায় তিনশ’ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত ছিল। পহেলা জানুয়ারী সরকারী ঘোষণা মতে, বই উৎসব পালনে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে বই সংগ্রহ করে প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। এ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার পরিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহমদ ড্রেজার জুনিয়র হাইস্কুলটি বন্ধ করার ঘোষণা করেন। এমন ঘোষণায় বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অধ্যয়নরত প্রায় তিনশ’ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের অনেকে টাকা দিয়ে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও অনেকে তা পারছে না বলে জানান।
আর্থিক সংকটের কারণে অনেকে তাদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে পারছে না। তারা কর্তৃপক্ষের বিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিদ্যালয়ে ১৫ জন শিক্ষক থাকলেও কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মতে এখন আছে ১০ শিক্ষক ও একজন পিয়ন। বর্তমান সরকার শিক্ষাখাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিলেও নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার পরিদপ্তর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিদ্যালয়টি বন্ধ হওয়ায় ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
স্কুল বন্ধ ঘোষণা করলেও ব্যাপারটি মেনে নিতে পারছেন না স্কুলের শিক্ষকরা। তাই এর প্রতিকার খুঁজতে প্রায় রোজই স্কুলে এসে একত্রে বসে আলোচনা করছেন তারা। বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা পারভীন আক্তার মালা বলেন, ৩৩ বছরের একটি পুরোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে না। আমরা যেসব শিক্ষার্থীকে এতোদিন বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছি। আজ আমাদের চোখের সামনেই ওদের স্বপ্নগুলোর মৃত্যু ঘটছে। এটার প্রতিকার খুঁজতেই প্রতিদিন একত্রে বসি। প্রকৌশলীর মৌখিক নির্দেশে স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হয়েছে। এখনো লিখিত নির্দেশনা পাইনি।
কথা হয় এই স্কুলের এক শিক্ষার্থীর মা আমেনা বিবির সাথে। তিনি জানান, অন্য স্কুলে লেখাপড়ার খরচ বেশি হওয়াতে বাধ্য হয়ে মেয়েকে কাজে দিয়ে দিয়েছেন। কিশোরী মেয়ের বিয়ের কথাও ভাবছেন তিনি।
কথা হয় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, গত ২০১৬ সাল পর্যন্ত ড্রেজার পরিদপ্তরের নিজস্ব অর্থায়নে চলতো এই স্কুল। ২০১৭ সালে ড্রেজার পরিদপ্তর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নীট বেইস সেট আপে অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু সেখানে এই স্কুলটি অন্তর্ভুক্ত না করায় ড্রেজার পরিদপ্তর বিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিবিএ নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখানে ড্রেজার কর্মচারীদের সন্তান ও বাইরের কিছু হতদরিদ্র শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তাদের অন্য কোথাও পড়াশোনার সুযোগ নেই। স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মতো একটি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। স্কুলটি বন্ধ না করতে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন জানিয়েছি। তারা ব্যয় বহন করতে না পারলে সরকারি ভাবে যেন বিদ্যালয়টি পরিচালনা করা হয় সে জন্য আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন জানাবো। নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার পরিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহমদ জানান নীড বে সেটাপ এর অধিনে বরাদ্দ না থাকায় বোর্ডের সিদ্ধান্ত মতে বিদ্যায়লটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যালয়টি বন্ধের খবরে বিস্ময় প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া বলেন, নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা করে বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু বা নতুন আঙ্গিকে স্থাপন করার উদ্যোগ নিবেন বলে জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ