সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বাংলাদেশের একদলীয় শাসনের অবিশ্বাস্য উত্থানের দিকেই এখন সারাবিশ্বের নজর

গতকাল সোমবার নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবিশ্বাস্য উত্থানের দিকেই সারাবিশ্বের নজর বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ২৯ ডিসেম্বর মিডনাইট নির্বাচনের পর বাংলাদেশের দিকে সারাবিশ্বের নজর এখন একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবিশ্বাস্য উত্থানের দিকে ভোট ডাকতির নির্বাচনে তথাকথিত নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও মাঝেমাঝে গণতান্ত্রিক পরিবেশের কথা বলে ফেলেন। তাদের মধ্যে মহাজোটের শরীক কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলছেন নির্বাচনী ব্যবস্থাকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশে এখন গণতান্ত্রিক কোন স্পেস নেই, গণতান্ত্রিক স্পেস তৈরী করতে হবে। এসময় রিজভী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, অমানবিকতা পরিহার করুন, এখনও সময় আছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, সুচিকিৎসার সুযোগ দিন। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ২৯ ডিসেম্বর মিডনাইট নির্বাচনের পর বাংলাদেশের দিকে সারাবিশ্বের নজর কাড়ছে এখন একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবিশ্বাস্য উত্থানে। আগের রাতে ভোট দেয়ায়, প্রার্থীদের বাধা দেয়ায়, মনোনয়ন পত্র ছিঁড়ে ফেলায়, উর্দ্ধ মহলের ক্লিয়ারেন্স আছে কি না প্রার্থীদের নিকট এমন প্রশ্নও করেছে পুলিশ, টাকা ছড়ানো হচ্ছে-এই হলো বর্তমান ভোটের অবস্থা, ভোটের প্রতি এখন মানুষের কোন আগ্রহই নেই। এই বক্তব্যগুলো বিএনপি বা জোটের কোন নেতার বক্তব্য নয়, এই বক্তব্য জাতীয় সংসদের আওয়ামী জোটের একজন বড় নেতার বক্তব্য। এখন প্রধানমন্ত্রী কি বলবেন? আমরা বারবার যে বলেছি-দুঃশাসনের কুয়াশা এসে ঢেকে দিয়েছে জনগণের শাসনকে-সেটি কি মিথ্যে? এখন আপনাদের ভেতর থেকেই কেউ কেউ বিবেকের তাড়নায় আসল সত্যটি প্রকাশ করে ফেলছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলন, আপনি বন্দুকের শাসনে সমগ্র বাংলাদেশকে হতভাগাদের বসতি বানিয়েছেন।  আপনার মতো নির্বাচনের স্টাইলগুলোকে এখন আন্তর্জাতিকভাবে বলা হচ্ছে-‘নির্বাচনী কর্তৃত্ববাদ’। অর্থাৎ জনগণকে ভোটাধিকারহীন, ত্যাজ্য ও বঞ্চিত করে যে নির্বাচন হয়, সেটিই নির্বাচনী কর্তৃত্ববাদ। আপনার সজ্ঞায়িত গণতন্ত্রের প্রধান উপাদান এই নির্বাচনী কর্তৃত্ববাদকে আপনি সুচারুভাবে দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে আপনার এই নির্বাচনী স্টাইল দেশে ও বিদেশে প্রত্যাখাত হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসন আর বেশীদিন স্থায়ী হবে না। ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণ অচিরেই সকল অপকর্মের উপযুক্ত জবাব দেবেই। তাদের অধিকার তারা পুনরুদ্ধার করবেই।
রিজভী বলেন, বানোয়াট, অসত্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এর কন্যা ও ফরিদপুর জেলা বিএনপি’র সদস্য নায়াব ইউসুফ আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিএনপি’র একজন মহিলা নেত্রীকে এভাবে মিথ্যা ও রাজনৈতিক হিংসা চরিতার্থের মামলায় কারান্তরীণ করার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং নায়াব ইউসুফ এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অসত্য মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
বেগম জিয়া খুবই অসুস্থ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে আপনজন, আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। আজ আমাদের হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছে কষ্টে। অবর্ননীয় কষ্টে আছেন ‘গণতন্ত্রের মা’। অবৈধ ক্ষমতার মদমত্ততায় বিনা চিকিৎসায় বেগম জিয়াকে পরিত্যক্ত কারাগারের পর্যাপ্ত আলো-বাতাসহীন স্যাঁতসেতে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী করে রাখা হয়েছে। ঘৃন্য ও হিং¯্র মিডনাইট মহাভোট কারচুপির সরকার শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য সত্তরোর্ধ একজন প্রৌঢ় মহীয়সী নারী, যিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়ে যাচ্ছেন, তাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় কারাগারে ফেলে রেখে চরমতম মানসিক ও শারীরিক শাস্তি দিচ্ছে।
রিজভী বলেন, আমরা প্রতিদিন নানাভাবে আহবান এবং দাবি করে আসছি-দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার পছন্দমতো বিশেষায়িত হাসপাতালে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তাকে জামিনে মুক্তি দিন। তাকে জেলে নেয়ার পর থেকে তিনি প্রচন্ড অসুস্থ। দেশবাসী জানেন তিনি হাঁটতে পারছেন না। পা ফুলে গেছে। হাত অবশ। পুরনো রোগগুলো বেড়ে গেছে। চোখেও প্রচন্ড ব্যথা। নির্যাতন সহ্য করতে গিয়ে তার পূর্বের অসুস্থতা এখন আরও গুরুতর রূপ ধারণ করেছে। সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিসের জন্য কাঁধে প্রচন্ড ব্যথা, হিপ-জয়েন্টেও ব্যথার মাত্রা প্রচন্ড। ঝুঁকিপূর্ণ শরীর। প্রতি মুহুর্তে আমরা তাকে নিয়ে আশংকায় থাকি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলবো-তিন বার সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শুধু প্রতিহিংসাবশত এমন নিষ্ঠুর বর্বরতম আচরণের অবসান ঘটান। তাকে মুক্তি দিন। জামিনে আর বাধা দিবেন না। ক্ষমতা মানুষের জীবনে স্থায়ী নয়। সময় অসময় হতে সময় নেয়না! আপনাদের ক্ষমতার দম্ভ চিরদিন থাকবে না। অমানবিকতা পরিহার করুন, এখনও সময় আছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, সুচিকিৎসার সুযোগ দিন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ