শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪
Online Edition

ভারতের উপগ্রহবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এক মাস আগে ব্যর্থ হয়েছিল

৩ এপ্রিল, এনডিটিভি : মহাশূন্যে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সফলভাবে একটি ক্রিয়াশীল উপগ্রহকে ধ্বংস করার একমাস আগেও ভারতের একইরকমের আরেকটি পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছিল বলে দাবি করেছেন ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের এক বিশেষজ্ঞ।

নির্বাচনী প্রচারণার মাঝামাঝি সময়ে গত ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে মহাকাশের নিচের দিকের কক্ষপথে উপগ্রহবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারিতেও ভারত একইরকম একটি পরীক্ষা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল বলে মার্কিন সরকারের বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনে লেখা এক নিবন্ধে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞ অঙ্কিত পান্ডা।

সেবার ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র পৃথিবী থেকে কম দূরত্বের কক্ষপথে ৩০ সেকেন্ড ওড়ার পরও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।

ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) ফেব্রুয়ারির পরীক্ষাটিও সকল লক্ষ্য অর্জন করে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছিল।

বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা ডিআরডিও-র এ ভাষ্য খারিজ করে দেয়।

উপগ্রহবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা বেশ জটিল। ক্ষেপণাস্ত্রকে উড়ন্ত অবস্থায়ই কক্ষপথে ঘুরতে থাকা লক্ষ্যকে শনাক্ত করে সেদিকে ছুটতে হয়; কক্ষপথের ঘূর্ণনগতির নানা হিসাবনিকাশও এক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হয়।

“মার্কিন সরকারের সূত্র ও সামরিক গোয়েন্দাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের একটি উপগ্রহবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যর্থ পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করেছে,” ডিপ্ল্যোম্যাটে লেখা নিবন্ধে বলেছেন অঙ্কিত পান্ডা।

পরীক্ষাটি ব্যর্থ হলেও ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে এ সংক্রান্ত ‘ভুয়া সফলতার তথ্য’ জানিয়েছিল বলেও মন্তব্য এ বিশেষজ্ঞের।

ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখে উৎক্ষেপিত ক্ষেপণাস্ত্রের সব ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এটি যে উপগ্রহবিধ্বংসী অস্ত্রের পরীক্ষা ছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।

ক্ষেপণাস্ত্রটি ৩০ সেকেন্ড ওড়ার পর পরীক্ষাটি ব্যর্থ হয় বলে ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এর আগে ভারতের প্রতিরক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে দ্য নিউ ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেস ১২ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষাটি সফল হয়েছে বলে দাবি করেছিল।

“পরীক্ষা কেন্দ্রের কমপ্লেক্স-৪ উৎক্ষেপণ প্যাড থেকে মসৃণভাবে এটি যাত্রা করে। লক্ষ্যবস্তুকে পাশ কাটিয়ে এটি থামে। সত্যিকারের লক্ষ্যবস্তুর বদলে একটি বৈদ্যুতিক লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হয়েছিল; লক্ষ্যবস্তুকে পাশ কাটানোর ভেতর দিয়ে পরীক্ষার সঠিকতা যাচাই হয়,” এমনটিই জানায় ভারতীয় ওই গণমাধ্যমটি।

নয়া দিল্লির এ ভাষ্য সেসময়ই প্রত্যাখ্যান করেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পারমাণবিক বিস্তার ও কৌশল বিষয়ক গবেষণা অধ্যাপক ভিপিন নারাংয়ের মতে, দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে উপগ্রহবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার বিষয়ে যা ছিল, তা আসলে আগে থেকে তৈরি করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির খসড়া।

ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখের ওই পরীক্ষাটি ব্যর্থ হয়েছিল বলেই দাবি করেন তিনি।

অঙ্কিত পান্ডা জানান, ফেব্রুয়ারির ওই প্রথম পরীক্ষার সময় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গোপসাগরে একটি ‘এক্সক্লুসন জোনের’ ব্যাপারে সতর্ক করেছিল।

এর মাধ্যমে ওই এলাকায় একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনার কথা বিশ্বকে জানান দেয়া হয়েছিল।

মার্চের ২৭ তারিখের পরীক্ষার সময়ও ওই একই এলাকাকে ‘এক্সক্লুসন জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।

উপগ্রহবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার দিন ভারত যে মাইক্রোস্যাট-আর উপগ্রহটি ধ্বংস করেছিল, ফেব্রুয়ারির পরীক্ষার দিনও কক্ষপথের একই এলাকা দিয়ে উপগ্রহটি উড়ে গিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।

এর অর্থ- ফেব্রুয়ারিতেও ভারত একই ক্ষেপণাস্ত্রকেই লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল, যদিও তা সফলতার মুখ দেখেনি।

ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত নিবন্ধ নিয়ে ডিআরডিও-র প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েও প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ