শনিবার ১১ মে ২০২৪
Online Edition

অধ্যক্ষ সিরাজের সহযোগীদের ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ

# মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা
ফেনী সংবাদদাতা : সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাদে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনা এখনো রহস্যাবৃত। দ্বগ্ধ রাফির দেয়া তথ্যানুযায়ী, এখনো হামলাকারিদের শনাক্ত করা যায়নি। তবে ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন আটককৃত দুইজনকে গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে। আটক করা হয়েছে আরো ৭ জনকে। রাফির ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দিয়েছেন। এদের মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাও রয়েছেন। অন্যরা তার ঘনিষ্ঠভাজন।
সরেজমিন অনুসন্ধানে স্থানীয়রা জানায়, মাদরাসার ভিতর ও বাইরে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা একটি বলয় তৈরি করেছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারীর পাশাপাশি বর্তমান ও সাবেক ছাত্র রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে মাদরাসা তহবিল থেকে নানা কায়দায় সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। একইভাবে প্রভাবশালী একটি মহলের সাথেও রয়েছে তার দহরম-মহরম। ফলে অত্র মাদরাসায় দায়িত্বকালীন সময়ে তহবিল তসরুপ, নারী কেলেংকারি সহ অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠলেও শেষপর্যন্ত তাকে কাবু করা যায়না। ২৭ মার্চ আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে নিজকক্ষে ডেকে এনে অগ্রিম প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভনে অনৈতিক প্রস্তাব ও যৌন হয়রানির ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগির মা শিরীন আক্তার। পরদিন গ্রেফতার হয়ে জেল-হাজতে যান সিরাজ। এ ঘটনায় সোনাগাজী মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও। তারা যখন সিরাজের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন কর্মসূিচ করেন তখন সিরাজের সাঙ্গরাও তার মুক্তি দাবিতে মাঠে নামেন পাল্টা কর্মসূিচ নিয়ে। এদের সঙ্গে সিরাজের পরিবারের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলেও তদন্তকারি সূত্রের কাছে তথ্য রয়েছে। শুধু তাই নয়, মামলাটি তুলে নিতে রাফি, তার মা ও ভাইকে বারবার হুমকি-ধামকি দেয়া হয়।
৬ এপ্রিল শনিবার এর ঘটনায় গতকাল সোমবার দায়ের করা মামলায় ৮ জনের নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এরা হলো অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলা, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নুর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের। বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানের ভাষ্য অনুযায়ী, অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার নির্দেশে উল্লেখিত আসামীরা পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে তার বোনকে হত্যার উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগ করে। ইতিমধ্যে পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও গণমাধ্যম কর্মীরা সোনাগাজীতে ঘটনার অনুসন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরলেও এ ব্যাপারে প্রকাশ্য কেউ মুখ খুলতে রাজি হননা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদরাসার একাধিক শিক্ষক জানান, সিরাজ উদদৌলা কারাবন্ধী থেকেও গ্রেফতার পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং যে কোন মূল্যে মামলা তুলে নেয়ার জন্য তার নির্দেশনা ছিল। ওই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে তার সাঙ্গরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। অব্যাহত চাপ প্রয়োগের পরও মামলা তুলতে রাজি না হওয়ায় রাফির এই ভয়ানক পরিণতি বলে তাদের ধারণা।
ওই শিক্ষক আরো জানান, ঘটনা সম্পর্কে তথ্য থাকলেও অজানা আতংকে কেউ মুখ খুলতে চায়না। একটি সূত্র জানায়, ঘটনার আগের রাতে মাদরাসার ছাত্রাবাসে বহিরাগতদের আনাগোনা ছিলো। সেখান থেকেই ঘটনার পরিকল্পনা হতে পারে বলে তাদের ধারণা। তারা মনে করছেন- ছাত্রাবাসে অবস্থানকারি শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ ব্যাপারে তথ্য মিলতে পারে। তারা আরো জানান, মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই অধ্যক্ষ সিরাজ কয়েকমাস আগে এই ছাত্রাবাস খুলেছেন। এখানে ছাত্রদের পাশাপাশি বহিরাগতদের আনাগোনা সবসময় দেখা যায়। এমনকি অধ্যক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অনেকেই ছাত্রাবাসের মেসে খেয়ে থাকেন।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশি হয়রানি কিংবা গ্রেফতার এড়াতে কেউ কেউ গা ঢাকা দিলেও সিরাজের লোকজন সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এমনকি থানাতেও তাদের আনাগোনা দেখা যায়। পরীক্ষা কেন্দ্রে সংরক্ষিত এলাকায় এমন বর্বর ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ওদের কেউ কেউ পুলিশ ও সাংবাদিকদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন।
এদিকে ঘটনা তদন্তে সোনাগাজী মডেল থানার পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম মাঠে রয়েছে। ওসি মো: রাশেদ খান চৌধুরী জানান, গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফেনী শহরের সদর হাসপাতাল এলাকা থেকে গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মাদরাসার নিরাপত্তা প্রহরী মো. মোস্তফা, মাদরাসা থেকে অফিস সহকারী ও অধ্যক্ষের ফুফা শ্বশুর নুরুল আমিনকে আটক করা হয়। এছাড়া আলাউদ্দিন, হোনা মিয়া ও সাইফুল নামের তিনজনকে বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করা হয়েছে। সন্ধ্যায় কুমিল্লা থেকে আটক করা হয় কেফায়েত উল্লাহকে।
পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার পিপিএম জানান, রাফির ভাই নোমান বাদী হয়ে থানায় মামলা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকৃত আসামীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ