রবিবার ০৫ মে ২০২৪
Online Edition

সৈয়দপুরের রেলওয়ে জমিতে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ না করার দাবিতে মতবিনিময় সভা

সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা : দেশের রেলওয়ে শহর নামে খ্যাত নীলফামারীর সৈয়দপুরের রেলের জমিতে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ না করার দাবিতে মত বিনিময় সভা করেছে সৈয়দপুর পৌর পরিষদ। ২ মে বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায় শহরের আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান পৌর মেয়র অধ্যক্ষ মো: আমজাদ হোসেন সরকার। বক্তব্য রাখেন, পৌর প্যানেল মেয়র-১ জিয়াউল হক জিয়া, প্যানেল মেয়র-২ শাহিন আক্তার শাহিন, প্যানেল মেয়র-৩ কাজী জাহানারা বেগম, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর জোসনা বেগম, মিনারা বেগম, কনিকা রানী সরকার ও সাবিহা বেগম। ওয়ার্ড কাউন্সিলর এরশাদ হোসেন পাপ্পু, আবিদ হাসান লাড্ডান, তারিক আজিজ, সৈয়দ মঞ্জুর আলম, কাজী মনোয়ার হোসেন হায়দার, আসগার আলী, শাহিন হোসেন, গোলাম মোস্তফা, শেখ মোহন, আল মামুন সরকারসহ জেলা বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. জহুরুল হক, বাস্তুহারা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম ওয়াদুদ রহমানের ছেলে জুয়েল প্রমুখ। সভায় বক্তারা বলেন, সৈয়দপুর শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ জমিই রেলওয়ের। এসব জমি রেলওয়ের কোন কাজে আসেনা। এর মধ্যে কিছু জমি রেল বিভাগ থেকে লীজ নিয়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা। বাকি জমি ও কোয়ার্টার রেলওয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ট্রেড ইউনিয়ন সমুহের নেতারা পতিত জমিগুলো বিক্রি করে দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে বর্তমানে বাস্তুহারারা সেখানে মাথা গোজার ঠাঁই করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ প্রক্রিয়ায় রেলওয়ে পতিত জমিগুলোতে আবাসন গড়ে উঠেছে পুরো সৈয়দপুর শহর জুড়ে। দীর্ঘদিন থেকে রেলজমিতে বসবাসকারী এসব মানুষদের প্রায় সময়ই উচ্ছেদের নামে চলে আসছে ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার খেলা। পতিত জমি ও কোয়াটার দখল করে বিক্রিকারী একটি চক্র এ খেলার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছে। বর্তমানে পতিত জমির পরিমান নেই বললেই চলে। তাই তারা এবার কোয়ার্টার ও জায়গা কিনে নিয়ে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের মাধ্যমে নতুন করে জায়গা ও কোয়াটার দখলের পাঁয়তারা শুরু করেছে। এর মাধ্যমে তারা উচ্ছেদ থেকে রক্ষার দোহাই দিয়ে বাস্তুহারা প্রায় ৮০ হাজার মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় রেল মন্ত্রণালয় বা রেলওয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বিভাগীয় লিখিত কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই স্থানীয়ভাবে একটি সিন্ডিকেট রেলজমিতে বসবাসকারীদের হাল নাগাদ তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। এজন্য তারা শহরজুড়ে মাইকিং করে এবং রেল জমিতে বসবাসকারীদের বাড়ি-ঘর বৈধ ও অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করছে। এতে উচ্ছেদ আতংক ছড়িয়ে পড়েছে এবং সে আতংককে পুঁজি করে কতিপয় ব্যক্তি মাঠে নেমেছে। বাস্তুহারাদের রক্ষার পরিবর্তে তারা নিজেদের ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি করতে ইতোপূর্বে যারা বাস্তুহারাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে দীর্ঘদিন থেকে উচ্ছেদ চেষ্টার বিরুদ্ধে আইনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং বাস্তুহারাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের দাবি জানিয়ে আসছে তাদের পাশ কাটিয়ে নতুন করে কমিটি গঠনের দুরভিসন্ধি চালাচ্ছে। কিন্তু এবার তাদের আর কোন বাণিজ্য করতে দেয়া হবেনা। বরং রেলওয়ের জমিতে বসবাসকারীদের মধ্যে যার যার দখলে থাকা জমির দাম কিস্তিতে পরিশোধের মাধ্যমে বিক্রি তথা স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দেয়া বা লীজের মাধ্যমে বরাদ্দ দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা এ সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান করতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সৈয়দপুর পৌর পরিষদ। এজন্য সার্বিক খরচাদীসহ সকল প্রকার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পৌর পরিষদের এ সিদ্ধান্তের সাথে একমত হয়ে বাস্তুহারাদের প্রকৃত অধিকার আদায়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তারা। এতে উপস্থিত হাজার হাজার রেলওয়ে জমিতে বসবাসকারী নারী-পুরুষ, নবীন-প্রবীণ সমস্বরে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। এসময় পৌর মেয়র সকলকে সর্তক থাকার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা কেউ আতংকিত হবেন না। কাউকে কোন প্রকার টাকা-পয়সা দেবেন না। দাবি আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকুন, দেখবেন এবার আমাদের আর কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবেনা। তার প্রমান, আমরা আজ আদিবা কনভেনশন হলে এ মিটিং করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তুহারাদের সমস্যা নিয়ে ব্যবসাকারী স্বার্থান্বেষী কুচক্রি মহলটি আমাদের সভা নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র করে প্রশাসনের সহযোগিতায় বাধার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু তারপরও মাত্র ১ ঘন্টার নোটিশে হাজার হাজার মানুষ যখন এখানে সমবেত হয়েছে তখন আমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠে নামার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আগামীতে প্রয়োজনে রাস্তায় নামতে প্রস্তুত সৈয়দপুর পৌর পরিষদ। আপনারা কেউ আপনাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে যাবেন না। কোথাও একটি ঘর ভাঙ্গা হলে কেউ কারো সাথে ঝগড়া না করে এবং আইন হাতে তুলে না নিয়ে আমাদের খবর দেবেন। মুহূর্তে পৌর পরিষদ আপনাদের পাশে দাঁড়াবে। কারণ এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এবার আমাদের সে দায়িত্বের সর্বাত্মক কার্যকারিতা দেখতে পারবেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ