বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

বেশি দামি পোশাকের ক্রেতা নেই বিদেশে যাচ্ছেন অভিজাত শ্রেণি

ইবরাহীম খলিল : ঈদের কেনাকাটা করতে এক শ্রেণির মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যান। তারা একইসাথে কেনাকাটার পাশাপাশি ঘুরাফেরা এবং বেড়ানোর কাজটাও সেরে আসেন। বিশেষ করে যাদের খরচ করার হাতটা একটু লম্বা তারা দেশে ঈদ বাজার করার আগে পার্শ্ববর্তী দেশে কেনাকাটার কথা চিন্তা করেন। এজন্য দেশে বিদেশী দামি পোশাকের বিক্রি কিছুটা কমে গেছে। এমনটাই মনে করছেন দেশে নামী দামি ব্র্যান্ডের দোকানীরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, রমজান মাসের ১৫ দিন চলে গেছে। অথচ দামি পোশাকের দোকানে তেমন একটা ভিড় নেই।
রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলের এলিট শ্রেণির দোকানগুলোতে গতকালও তেমন একটা ভিড় দেখা যায়নি। শপিংমলের দিল্লি ফ্যাশন, মুনা কালেকশনসহ বেশকয়টি দোকান ঘুরে দেখা গেল একই দৃশ্য। ‘শাড়ি সেন্টার’ এর দায়িত্বরত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ১৫ রমজানেও তুলনামূলক কম ক্রেতা। এ ইসময়টা যথেষ্ট জাঁকজমক থাকা উচিত ছিল। এসব দোকানগুলো অথচ তেমন ক্রেতা নেই। এমনও হয়েছে বেচা-বিক্রি ভালো না থাকায় অনেকে বিক্রয় কর্মীদের ছুটি দিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, এখন অনেকেই ভারত গিয়ে শপিং করে নিয়ে আসে। আমারা ভালো কোয়ালিটির শাড়ি বিক্রি করি, কিন্তু এবার তেমন ক্রেতা পাচ্ছি না। আমাদের এখানে এবার কালেকশনে রেখেছি চেন্নাই কাতান, গুজরাটি কাতানসহ নামীদামি সব শাড়ি। এগুলো ১০ হাজার টাকা থেকে ৩৫/ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা মনে করেন, মানুষ আসলে ইন্ডিয়ায় বেশি যাচ্ছে, সেখানে হয়তো-বা তুলনামূলক কম দামে কিনতে পারছে যে কারণে ঈদের কেনাকাটার পাশাপাশি ঘুরেও আসতে পারছে। তাই আমাদের দামি ড্রেস বিক্রি কিছুটা কমে গেছে।
ঈদ উপলক্ষে শপিং মলটির সব দোকানই সেজেছে ঈদের আমাজে। সবাই নিজের দোকানের জন্য রেখেছে লেটেস্ট কালেকশনগুলো, নিত্যনতুন বাহারি সব পণ্য থরে থেরে সাজানো আছে এখানকার দোকানগুলোতে। বসুন্ধরা সিটির বিভিন্ন ফ্লোর ঘুরে দেখা গেছে- ইজি, দর্জিবাড়ি, ম্যানস ওয়ার্ড, জেন্টেল পার্ক, রিচ ম্যান, লুবনান, প্লাস পয়েন্ট, এক্সটেসি, ইয়োলো, ইনফিনিটি, দেশি দশ ওয়েস্টিশ, আড়ং, ফ্রিল্যান্ডসহ ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতেই ক্রেতের সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল। শো-রুম গুলোতে ক্রেতেদের উপস্থিতিতে বিক্রেতাদের দম নেয়ার সময় নেই। এই দোকান বা শো-রুমগুলোতে ক্রেতাদের যেমন ভিড় তেমনি ভিড় ছিল দর্শনার্থী বা বিভিন্ন পণ্যের দাম যাচাই করতে আসা মানুষেরও ভিড় ছিল বেশ। দোকানগুলোর সামনে যেতেই বিক্রেতাদের চিরচেনা হাক-ডাক। দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে গারারা বা সারারা-গারারা, ফ্লোর টাস, গাউন, লং ফর্গ, বিভিন্ন ধরনের নামীদামি সব শাড়ি। অথচ এই দোকানের ঈদের কেনাকাটা তেমন একটা জমে ওঠেনি। নেই ক্রেতাদের ভিড়।
এস ফ্যাশন দোকানের দায়িত্বে থাকা সেলস অ্যাসোসিয়েট দিপু আহমেদ বলেন, পুরো বসুন্ধরা সিটিতে মেয়েদের ড্রেস-শাড়ির প্রচুর দোকান। অথচ আজ ১৫ রোজা চলছে এখনও আমাদের ঈদের বেচা বিক্রি জমে ওঠেনি।
গারারা বা সারারা-গারারা, ফ্লোর টাস, গাউন, লং ফর্গসহ মেয়েদের প্রচুর ড্রেস আমাদের কালেকশনে আছে। এসবের দাম ৪ হাজার থেকে ২২ হাজার বা তার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করছি।
তিনি আরও বলেন, ক্রেতার এখনও বেতন-বোনাস পায়নি, তারা বেতন-বোনাস পেলে হয়তোবা ঈদের আগে জমজমাট হবে বেচা-বিক্রি।
সানজিদা তাসলিম নামের একজন ক্রেতা দুই বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বসুন্ধরা শপিং মলে। তিনি বলেন, আসলে কালেকশনগুলো ঘুরে দেখতে এসেছি। এখানে অনেক দাম, তবে ভালো কালেকশন আছে। মূলত সাধারণ ক্রেতারা শাড়ি, ড্রেস বাইরের দোকান থেকেই বেশি কেনে। এখান থেকে মূলত উচ্চবিত্ত বা বিয়ের বাজার মানুষ বেশি করে। এছাড়া অনেকেই আছে যারা নিজেরাই ভারত বা কলকাতা থেকে শপিং করে ঈদের সময় পাশাপাশি এখন অনলাইন শপেও লেটেস্ট সব কালেকশন পাওয়া যায়। যে কারণে হয়তোবা এখানে শাড়ি- ড্রেস তুলনামূলক কম বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, নামি-দামি অনেক ভারতীয় পোশাকের পসরা নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। এসব পোশাকের নাম যেমন ব্যতিক্রমী, তেমনি দামেও রয়েছে বৈচিত্র্য। বিক্রেতারা মনে ধারণা কাজ করে ভারতীয় পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের আলাদা নজর থাকে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের বাজারের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ চাহিদা বিদেশী কাপড়ের, যার মধ্যে ভারতের কাপড় সবচেয়ে বেশি। ভারতীয় জনপ্রিয় সিরিয়ালের চরিত্রের কাপড় বাজারে দিয়ে তারা মানসিকভাবে তরুণ-তরুণীদের বিজ্ঞাপন ছাড়াই দখল করতে পারে। কাজেই বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবেই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ