রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

খুলনার স্বপ্নের শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স এখন দৃশ্যমান

খুলনা অফিস : খুলনায় শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স নির্মাণ হবে এমন স্বপ্ন দেখতেন এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কর্মী ও মুক্ত চিন্তার মানুষেরা। সেই স্বপ্ন আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ নিয়েছে। দৃষ্টিনন্দন চারতলা বিশিষ্ট শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স এখন দৃশ্যমান। যে কেউ সেখানে গেলে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকবেন এই কমপ্লেক্সের সৌন্দর্য দেখে। তবে এ কমপ্লেক্সটি পরিপূর্ণতায় শেষ মুহূর্তের কিছু কাজে বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চারতলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন খুলনা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সফলতার সাথে শেষ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেনজীন কনস্ট্রাকশন, দি আজাদ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইলোরা জয়েন্ট ভেঞ্চার (বিসিটিএই ইলোরা জেভি)। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নির্মিত কমপ্লেক্স সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সূত্র মতে, নকশা অনুযায়ী শিল্পকলা একাডেমীর নির্মাণ কাজ শেষ হলেও শেষ হলেও ওই কমপ্লেক্সে অ্যাকুইস্টিক সিস্টেমেরে অংশ হিসেবে মঞ্চ তৈরি, সাউন্ড, সাউন্ড কন্ট্রোলার, লাইট, ফিক্সড চেয়ার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এয়ার কুলার), অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার কাজ এখনো শুরু হয়নি। রুটস নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এ কাজ গুলো সম্পন্ন করার জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়। ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে এ কাজ গুলো শেষ করার শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত সময়ের আর এক মান বাকী থাকলেও কাজ শুরু না করায় নানা বিড়ম্বনা তৈরি হচ্ছে। ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠান রুটস তাদের কাজগুলো জুন মাসের মধ্যে শেষ করতে পারলে জুলাই আগস্ট থেকে নিজস্ব ভবনে শিল্পকলা একাডেমি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারতো। নিজস্ব কমপ্লেক্সে উঠতে না পারায় বর্তমানে প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে অফিস পরিচালনা করছে খুলনা শিল্পকলা একাডেমি। কাজের যে অগ্রগতি সেক্ষেত্রে কমপক্ষে আরও ৬ মাস অপেক্ষা করতে হতে পারে শিল্পকলা একাডেমীর নিজস্ব ভবন পরিপূর্ণভাবে ব্যবহারের জন্য। ফলে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের আগে কোনভাবেই শিল্পকলা একাডেমীর নিজস্ব ভবন ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে না। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রুটস একই সাথে খুলনা, মানিকগঞ্জ, বরিশাল, রংপুর ও নারায়ণগঞ্জে শিল্পকলা একাডেমীর অ্যাকুইস্টিকের কাজ পেয়েছে। তারা বর্তমানে মানিকগঞ্জে কাজ করছে। মানিকগঞ্জের কাজ শেষ হলে খুলনার কাজ শুরু করবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে খুলনা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্সে শীততাপ যন্ত্র স্থাপনে বৈদ্যুতিক লাইনের কাজ এবং কিছু কিছু স্থানে ফ্রেম লাগানো হয়েছে। এছাড়াও অন্য কোন অগ্রগতি নেই। তবে একটি সূত্র জানায়, প্রভাবশালীদের চাপে খুলনাকে রেখে অন্যান্য জায়গায় অ্যাকুইস্টিকের কাজ করার কারণে খুলনার শিল্পকলা একাডেমীর কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, খুলনার দৃষ্টিনন্দন শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স থাকছে মুক্ত মঞ্চ, ৪৯০ আসন বিশিষ্ট মিলনায়তন, প্রশাসনিক ভবন, রিহার্সেল রুম, সেমিনার রুম, ৫টি অতিথি কক্ষ, অফিস রুম, লাইব্রেরী, শিক্ষকদের রুম, আর্ট গ্যালারী, ক্যাফেটরিয়া, ডাইনিং রুম, ওয়েটিং রুম। তবে দৃষ্টিনন্দন এ শিল্পকলা একাডেমীর সবচেয়ে বড় সমস্যা প্রবেশ মুখে ছোট রাস্তা এবং গাড়ী পার্কিংয়ের জায়গার অভাব। রাস্তা প্রশস্ত করা এবং গাড়ী পার্কিংসহ কমপ্লেক্সটি প্রধান সড়ক থেকে দৃশ্যমান করতে কমপ্লেক্সের সামনে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাড়ীটি সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও পরে তা’ আর আলোর মুখ দেখেনি। খুলনার তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ গণপূর্তের ওই ভবনটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। কিন্তু তিনি ঢাকায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বদলী হওয়ার পর বিষয়টির আর অগ্রগতি হয়নি। খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কর্মী ও সুশীল সমাজের মানুষরা গণপূর্তের এ ভবনটি অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়ে শিল্পকলা একাডেমীর দৃষ্টিনন্দন রূপ রাস্তা থেকে দেখার সুযোগ এবং গাড়ী পার্কিংয়ের ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন। ২০১৫ সালের ৮০ শতক জায়গার ওপর ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে খুলনা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। এ কমপ্লেক্স নির্মাণে প্রথমে ২২কোটি ৭০লাখ এবং পরে ২৯কোটি টাকায় বর্ধিত করা হয়।
অ্যাকুইস্টিকের কাজ সম্পর্কে খুলনার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রতিফুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রুটস’র কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। বিদেশ থেকে তাদের কিছু বৈদ্যুতিক সামগ্রী আসতে দেরী হওয়া কাজ কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে দ্রুত অ্যাকুইস্টিকের কাজ যাতে শুরু করা যায় সে লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। অ্যাকুইস্টিকের কাজ দ্রুত শেষ করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতি ও খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, অ্যাকুইস্টিকের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ইতোমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রুটস’র কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। অ্যাকুইস্টিকের কাজ দ্রুত শেষ করার লক্ষ্যে ঈদ উল ফিতরের পর জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
খুলনা সাংস্কৃতিক উন্নয়ন লিয়াজোঁ কমিটির আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক স্বপন কুমার গুহ বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে দৃষ্টিনন্দন শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণ হওয়ার পর অ্যাকুইস্টিকের কাজ শেষ না হওয়া তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এটি কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। শিল্পকলা ভবনের সামনের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবন এখনও অপসারণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বসবাসকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নিজ দায়িত্বে রাষ্ট্রের অনুকূলে ওই ভবনটি ছেড়ে দিয়ে শিল্পকলা একাডেমীর সামনের জায়গা তৈরিতে সহায়তা করা উচিত।
খুলনা জেলা কালচারাল অফিসার সুজিত কুমার সাহা বলেন, অ্যাকুইস্টিকের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করা গেলে শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা যাবে। তিনি আশার করছেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে অ্যাকুইস্টিকের কাজ শেষ হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ