বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

ভারতের লোকসভা প্রসঙ্গে

গত ২৩ মে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার পর থেকে শুধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে নয়, মিস্টার মোদির নেতৃত্বাধীন দল ও জোট তথা বিজেপি ও এনডিএ’র নানাদিক সম্পর্কেও দেশে-বিদেশে নানামুখি আলোচনা শুরু হয়েছে। এটাই স্বাবাবিক। কারণ, ভারতের মতো বিরাট দেশের লোকসভায় ৫৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি ও এনডিএ ৩৫৭টিতেই বিজয়ী হয়ে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে, যা একটি রেকর্ডও বটে। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতাসীন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে কোন ধরনের নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন তা নিয়ে যেমন আলোচনা জমে উঠেছে তেমনি আলোচনা চলছে তার সম্ভাব্য পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও।
এ প্রসঙ্গে একটি খবরকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। খবরটি হলো, প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সার্ক এবং মূলত ভারতের উদ্যোগে গড়ে ওঠা বিমস্টেক-এর সকল সদস্য রাষ্ট্রের সরকার প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও আমন্ত্রণ পাননি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। অথচ ‘প্রতিবেশি প্রথমে’ হচ্ছে নরেন্দ্র মোদির প্রধান একটি ঘোষিত নীতি। সে নীতির ভিত্তিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে কূটনৈতিক অঙ্গন অনেকাংশে নিশ্চিত ছিল। অন্যদিকে সার্ক-এর বাইরে থাইল্যান্ড ও মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও বিস্ময়করভাবে বাদ পড়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রথম সুযোগেই নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সে কারণেও আশা করা হয়েছিল, তাকে অবশ্যই ৩০ মে’র শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেটা হয়নি বলেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি আসলে এমন কোনো বিশেষ বারতা দিয়েছেন কি না, যার কারণে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্ববাসীকে ভীতি ও সংশয়ের শিকার হতে হবে?
ওদিকে খোদ ভারতের অভ্যন্তরেও মিস্টার মোদির দল ও জোটের বিরুদ্ধে কিছু বিষয়ে নিন্দা-সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। এসবের মধ্যে এমপি বা লোকসভা সদস্যদের চরিত্র ও নৈতিক অবস্থান এসেছে একটি প্রধান বিষয় বা প্রসঙ্গ হিসেবে। প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে, এবার যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের প্রায় অর্ধেকই নাকি বিভিন্ন মামলার আসামী! ভারতের নির্বাচন বিষয়ক পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বা এডিআর-এর এক রিপোর্টে গত ২৫ মে জানানো হয়েছে, ৫৪২ জন এমপির মধ্যে ২৩৩ জনের তথা প্রায় ৪৩ শতাংশের বিরুদ্ধেই রয়েছে গুরুতর বিভিন্ন অপরাধের মামলা। এদের মধ্যে ১২জন অতীতে দোষীও সাব্যস্ত হয়েছেন। এসব এমপির অপরাধও সাধারণ নয়। অন্তত ২৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার, ১৬ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের, চারজনের বিরুদ্ধে অপহরণের এবং ১২ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারিতা ও প্রতারণার মামলা রয়েছে।
কৌত’হলোদ্দীপক তথ্য হলো, বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে শুধু বিজেপির নয়, অন্য দলগুলোর নির্বাচিত এমপিরাও রয়েছেন। যেমন এডিআর-এর রিপোর্টে জানানো হয়েছে, উল্লেখযোগ্য দলগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল কংগ্রেসের ২৭ শতাংশ এমপি মামলার আসামী। এ ছাড়া ইএসআর কংগ্রেস পার্টির ৪০ শতাংশ, টিআরএস-এর ১৮ শতাংশ এবং বহুজন সমাজবাদী পার্টির ১৩ শতাংশ এমপির বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। অর্থাৎ তারা শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি বা ক্রিমিনাল অপরাধে দায়ের করা মামলার আসামী। এসব কারণে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনের চলমান আলোচনায় বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবার এমন এক লোকসভা পেয়েছেন, যার প্রায় অর্ধেক এমপিই বিভিন্ন মামলার আসামী। তাদের মধ্যে এমনকি এরই মধ্যে অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত ও দোষী হিসেবে শাস্তি পাওয়া বেশ কয়েকজনও রয়েছেনÑ বর্তমান লোকসভা চলাকালে আগামী পাঁচ বছরের যে কোনো সময় যাদের শাস্তি পর্যন্ত হতে পারে।
ওপরে সংক্ষেপে উল্লেখিত তথ্য ও পরিসংখ্যানের আলোকে বলা যায়, নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও এবারের মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষে নিশ্চিন্তে ও বাধাহীনভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। বৈদেশিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অবনতি ঘটানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরই পাশাপাশি রয়েছে অভ্যন্তরীণ আরো অনেক সমস্যা। বিশেষ করে ন্যাশনাল ও তৃণমূল কংগ্রেস এবং উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টির মতো দলগুলো যে মিস্টার মোদিকে শান্তিতে থাকতে দেবে না সে ব্যপারে ধারণায় কোনো অস্পষ্টতা রাখা হচ্ছে না। অতএব ধরে নেয়া যায়, প্রধানমন্ত্রী মোদিকে নানামুখি সমস্যা মোকাবেলা করেই তার নতুন মেয়াদ পাড়ি দিতে হবে। এখন দেখার বিষয়, মিস্টার মোদি কিভাবে এবং কোন ধরনের কৌশলে অগ্রসর হন এবং কোনো এক পর্যায়ে ভারতকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পথে এগিয়ে যেতে হয় কি না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ