বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

দর্শনা কেরুজ চিনিকলের নামে ১৯৭ কোটি টাকার ইক্ষুঋণ নিয়ে অন্যকে প্রদান

এফ, এ আলমগীর, চুয়াডাঙ্গা : এক সময় দেশের বৃহত্তম শিল্প কমপ্লেক্স দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর চিনিকলের নামে দর্শনা জনতা ব্যাংক শাখা থেকে ১৯৭ কোটি টাকা ইক্ষুঋণ নিয়ে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের  আওতাধীন বিভিন্ন চিনিকলে সে টাকা ইক্ষুঋণ হিসাবে দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীরা সেই ঋণ পরিশোধ না করায় এখন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে কেরুজ চিনিকলের। কেরুজ চিনিকলের নামে এই বিশাল অংকের টাকা ঋণ নিয়ে বিভিন্ন চিনিকল সুবিধা ভোগ করলেও সুদসহ ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষকে।  বর্তমান বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠেছে এর দায়ভার কে নেবে? কার স্বার্থে করা হয়েছিলো এ ঋণ? জানা গেছে, প্রতি বছরই দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর ৪টি ইউনিটের মধ্যে চিনি উৎপাদন ইউনিটটি প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনে থাকলেও চিনি উৎপাদন উইনিটের লোকসান ডিস্টিলারী ইউনিট পুষিয়েও বিরাট অংকের টাকা মুনাফা করে থাকে। লাভ ও লোকসানের এই দোলাচলে কেরুজ চিনিকলের সম্পদ মটগেজ রেখে চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন চিনিকলের আখ চাষিদের ঋণ দেবার অযুহাতে ১৯৭ কোটি দর্শনা জনতা ব্যাংক শাখা থেকে ঋণ নেওয়া হয়। যে ঋণের একটিও টাকা কেরুজ চিনিকলের কর্মকর্তা, শ্রমিক, কর্মচারী কিংবা দিন হাজিরার লেবার পর্যন্ত ভোগ করেনি। অথচ এ ঋণের বিপরীতে প্রতিবছর কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ ১৭ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করে থাকে। এমনিতেই প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের বোঝা ভারী হচ্ছে। তার উপর অন্যের ঋণের মূলধনসহ সুদের টাকা পরিশোধ করার দায়ভার বহণ করতে গিয়ে এ ঋণ এখন কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে।
একটি সূত্র বলেছে, এ ইক্ষুঋণটি করা হয় চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেনের আমলে। কিভাবে ঋণ বিতরণ হলো আর কোন কোন প্রতিষ্ঠানের চাষিরা ঋণ পেলো তার কোন হিসাব নেই কেরুজ কর্তৃপক্ষের নিকট। অথচ সম্পূর্ণ দায়ভার বহণ করে চলেছে কেরুজ কর্তৃপক্ষ। ভবিষ্যতে বিতরণকৃত ঋণ আদায় না হলে তাও পরিশোধ করতে হবে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষকে। সূত্র আরও জানায়, তৎকালীন চেয়ারম্যান উপর মহলে সখ্যতা বজায় রেখে নিম্নের কর্মকর্তাদের রক্তচক্ষু প্রদর্শন করে নিজের আখের গুছিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কারনে অকারনে প্রতি মাসে কেরু কোম্পানীতে এসে কোম্পানীর বিপুল পরিমান টাকা খরচ ও টিএডিএ নেবার বিষয়টি তদন্তের দাবী উঠেছে। যদিও তার নামে দুর্নীতি দমন কমিশনে লম্বা অভিযোগ রয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশের শিল্প স্থাপনাগুলোর মধ্যে কেরু এ্যান্ড কোম্পানী (বাংলাদেশ) লিমিটেড একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৮ সালে এ চিনিকলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, বর্তমানে এর বয়স ৮১ বছর। চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্তবর্তী জনপদ দর্শনায় চিনিশিল্প, ফার্মাসিটিউক্যাল, ডিষ্টিলারী ও বানিজ্যিক খামারের সমন্বয়ে এ বৃহৎ শিল্প কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠিত। প্রাথমিকভাবে দৈনিক ১ হাজার টন আখ মাড়াই করার মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করন করা হয় এবং তখন থেকে অদ্যবদি এটি কেরু এ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিঃ নামে বাংলাদেশ সুগার এ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। এখানে চিনি, রেকটিফাইড স্পিরিট, দেশীমদ, বিলাতী মদ (জিন, হুইস্কি, রাম, ব্রান্ড, ভদকা) ও ভিনেগার এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত মূল পণ্য। অপরদিকে চিটাগুড়, ব্যাগাস ও প্রেসমাড অন্যতম উপজাত দ্রব্য। এ প্রতিষ্ঠান শুধু চিনি উৎপাদন ও মদ তৈরী করেই থাকে না পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। সবকিছু মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এলাকায় আর্থসামাজিক উন্নয়নের চালিকা শক্তি হিসেবে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীর দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দায়িত্ব অবহেলার কারনে প্রতিষ্ঠনটি পড়ে বিব্রতকর অবস্থায়। এ ব্যাপারে বর্তমান কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদ আলী আনছারী বলেন, ঋণের কোন সুবিধা কেরুজ চিনিকলের কেউ ভোগ করলো না অথচ বছর বছর ১৭ কোটি টাকার সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠনকে। তার পরও রয়েছে ঋণের মূলধনের টাকা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ