বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

আবরারের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল বুয়েট ॥ সারাদেশে বিক্ষোভ

গতকাল মঙ্গলবার বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে বুয়েট ক্যাম্পাস। গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নামে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফাহাদ হত্যার বিচারে আট দফা দাবি জানিয়েছেন তারা। হত্যা ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। অবরোধের মুখে সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন ভিসি। এ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবরারের গায়েবানা জানাযা ও কাফন মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, সারাদেশেই বিক্ষোভে ফেটে পরে শিক্ষার্থীরা।
ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে গতকাল সকাল থেকে ক্যাম্পাসে জড়ো হন আবরারের সহপাঠীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টায় বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে ‘বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে একটি মিছিল শুরু করেন তারা। মিছিলটি শহীদ মিনার হয়ে শেরে বাংলা হলের ভেতরে প্রদক্ষিণ করে আহসান উল্লাহ হল, কাজী নজরুল ইসলাম হলের সামনের চত্বর ঘুরে ফের শহীদ মিনারে আসে। সেখানে শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের জানান, বুয়েট ভিসি বিকাল ৫টার মধ্যে ক্যাম্পাসে এসে জবাবদিহিতা না করা পর্যন্ত তারা শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান করবেন।
এসময় ‘খুনীদের ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না’, ‘ফাঁসি ফাঁসি, ফাঁসি চাই’, ‘প্রশাসনের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘ভিসি তুই নীরব কেন, জবাব চাই, দিতে হবে’ এসব স্লোগান দিতে শোনা যায় শিক্ষার্থীদের।
অবরুদ্ধ ভিসি: আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের সামনে এলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। বেঁধে দেয়া সময় শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির হন ভিসি। এসেই শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন ভিসি। এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভিসি বলেন, তোমরা যা দাবি দিয়েছ তোমাদের দাবির সঙ্গে আমি একমত পোষণ করছি। আমরা নীতিগতভাবে সব দাবি মেনে নিচ্ছি। তিনি জড়িতদের বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারেরও ঘোষণা দেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ভিসিকে দাবিগুলো পড়ে শুনিয়ে ঠিক কোন কোন দাবি মানা হল- তা জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে চলে যেতে চান ভিসি। একপর্যায়ে ভিসিকে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করেন, আবরার হত্যার ঘটনার পর তিনি কেন ক্যাম্পাসে আসেননি? জবাবে ভিসি বলেন, আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন।
কিন্তু আবরার হত্যার ৩৬ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যেও কেন ভিসি ক্যাম্পাসে আসেননি, কেন তাকে আলটিমেটাম দিয়ে ক্যাম্পাসে আনতে হল? ভিসির কাছে এর জবাব চেয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের এসব প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, আমি সারাদিন মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, মিটিং করেছি। এগুলো না করলে দাবিগুলোর সমাধান হবে কীভাবে। সব তো আমার হাতে নেই। সরকারকে কনভিন্স করে আমাকে চলতে হয়।
ভিসি শিক্ষার্থীদের বলেন, তোমাদের দাবির সঙ্গে আমি একমত। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের উপায় বের করা হচ্ছে। আমি কাজ করে যাচ্ছি।
স্যার আপনি কী কাজ করছেন? এক শিক্ষার্থীর এ প্রশ্নের উত্তরে ভিসি বলেন, তোমাদের এই ব্যাপারটি নিয়ে কাজ করছি। আমি রাত ১টা পর্যন্ত কাজ করেছি।
শিক্ষার্থীদের আলাদা ডেকে নিয়ে কথা বলার প্রস্তাব দিলে ভিসির সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এ সময় আবারও শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিকাল ৫টার মধ্যে ভিসিকে ক্যাম্পাসে আসার আলটিমেটাম দেন। তিনি না এলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলেও শিক্ষার্থীরা জানান।
এদিকে রোববার গভীর রাতে হত্যাকাণ্ড হলেও গত ৩৬ ঘণ্টায় ঘটনাস্থল শেরেবাংলা হলে আসেননি ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বারবার ভিসির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বললেও তা আমলে নেননি হল প্রাধ্যক্ষ। এমনকি সোমবার রাতে ক্যাম্পাসে আবরারের জানাযায়ও তিনি ছিলেন না তিনি। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র খুন হওয়া এবং এরপর উত্তাল ক্যাম্পাসে প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তির অনুপস্থিতি তাদের অবাক করেছে।
এর আগে সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল থেকে আবরারের লাশ বুয়েট ক্যাম্পাসে আনা হয়। এরপর রাত ১০টার দিকে পরিবারের স্বজন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সহপাঠীদের উপস্থিতিতে বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিতে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বুয়েটের অ্যাম্বুলেন্সে স্বজনরা আবরারের লাশ কুষ্টিয়াতে দাফন করাতে নিয়ে যান।
শিক্ষার্থীরা জানান, আবরারের জানাযায় পরিবারের সদস্যরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সহপাঠীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রায় দুই হাজার মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। জানাযার পর বুয়েটের শেরে বাংলা হলের সামনে শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়ে খুনিদের ফাঁসি চেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ স্মৃতি হল, কেন্দ্রীয় মসজিদ, তিতুমীর হল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলসহ কয়েকটি হল প্রদক্ষিণ করে তারা বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন।
প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।
হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলেট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।

ভিসিকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আরবার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ৩৬ ঘন্টার পর ক্যাম্পাসে আসেন। এ সময়ের মধ্যে কয়েক দফা জানাজা শেষে লাশ দাফনও হয়ে গেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম এখনও পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আসেননি। আবরারের দাফনেও অংশ নেননি। দেখা তো দূরের কথা, কথা বলেননি আবরারের অভিভাবক, স্বজন বা সহপাঠিদের সঙ্গে। তাকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছিল না।
যদিও শুরুতে বলা হয়েছিলো তিনি অসুস্থ। তাই তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। কিন্তু সময় গড়িয়েছে, আর হত্যার লোমহর্ষক সব কাহিনী বেরিয়ে এসেছে, পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানীর গন্ডি পেরিয়ে আবরার রাষ্ট্র হয়ে গেছে। দলমত নির্বিশেষে ফুঁসে ওঠেছে সারাদশের ছাত্রসমাজ। দেশ ছাড়িয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। সামাজিক মাধ্যমজুড়ে আবরার বন্দনা আর ভালোবাসায় শোকাভিভূত, ক্ষুব্ধ, প্রতিবাদ মুখর মানুষ। ঘৃণার বিষবাষ্প ছুঁড়ে দিয়েছে খুনীদের প্রতি। অথচ তখনও নিবর ভিসি সাইফুল ইসলাম।
স্বয়ং ছাত্রলীগ খুনের ঘটনায় জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, বহিষ্কার করেছে, শাস্তি চেয়েছে, কিন্তু সাড়া মেলেনি ভিসির। তখনও চুপ, নির্লিপ্ত তিনি। প্রয়োজন মনে করেননি ঘটনাস্থলে যাওয়ার, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার, আবরারের অভিভাবক-স্বজনদের সান্তনা দেয়ার। ফোন করে খোঁজ-খবর নেয়ার সাধারণ সৌজন্যবোধটুকুও নেই তার। ধরেননি ফোনও।
প্রশ্ন ওঠেছে তাহলে তিনি কোথায় আছেন? আর কেনই বা তার এই নির্লিপ্ততা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, একজন ভিসি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবক। শিক্ষার্থীরা বিপদে-আপদে তার কাছেই যাবেন। তিনিও ছুটে আসবেন তাদের দুঃসময়ে। সমাধান দিতে না পারেন, অন্তত: সান্তনার বাণী শুনাবেন, সহানুভূতি জানিয়ে ছাত্রদের পাশে থাকবেন, ব্যথিত হবেন। কিন্তু তিনি যেনো একেবারে অজ্ঞাত কোন স্থানে চলে গেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে। আর এসেই তোপের মুখে পড়েন শিক্ষার্থীদের। প্রশ্নবানে জর্জরিত হন। ভিসিকে না পেয়ে শিক্ষার্থীরা সকল রাগ-ক্ষোভ উগরে দেন তার ওপর। শিক্ষার্থীরা জানতে চান, আপনি কোথায় ছিলেন? হলে পুলিশ আসলো কি করে? ইত্যাদি। এর সঠিক জবাব তিনি দিতে পারেননি। এরপরই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীদের জেরার মুখে ভিসি কোথায় আছেন তা জানেন না বলে জবাব দেন।
ভিসিকে ফোন দেন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক। কয়েকবার ফোনে বিজি পান। এরপর তার (ভিসি) ফোন বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া বলে আওয়াজ তোলেন। তবে মিজুনুর রহমান সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্র রাজনীতি থাকার প্রয়োজন নেই। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের আশ্বাসও দেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের ৮ দফা দাবি: আট দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারীরা। আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের ফাঁসিসহ সাত দফা দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে তারা সাতটির বদলে আটটি দাবির কথা জানান।
শিক্ষার্থীদের আট দফা দবি হলো−খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করতে হবে, আবাসিক হলগুলোতে র্যাগের নামে এবং ভিন্নমত দমানোর নামে নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে, ঘটনার ৩০ ঘণ্টা পরও ভিসি কেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি, মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যে ভিসিকে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে এর জবাব দিতে হবে, হত্যা মামলার খরচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে, এর আগের ঘটনাগুলোর বিচার করতে হবে, ১১ অক্টোবরের মধ্যে শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করতে হবে এবং ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। এছাড়া, আগামী সাত দিনের মধ্যে বুয়েটে সব ছাত্র রাজনীতি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেন তারা।
অভিভাবক হিসেবে ব্যর্থ হয়েছি: ছাত্রলীগের মারধরে নিহত তড়িৎ কৌশল বিভাগের ছাত্র আবরার ফাহাদের কথা বলে কাঁদলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ কে এম মাসুদ।
গতকাল বুয়েট শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমরা অভিভাবক হিসেবে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা- শিক্ষকরা বলি, প্রশাসন বলি, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি। আবরারকে হারানোর শোক সঙ্গে করে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারে অবস্থান নেয় বুয়েটের একদল শিক্ষার্থী। তাদের কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।
অধ্যাপক মাসুদ বলেন, আমাদের এক ছাত্রকে এভাবে পিটিয়ে মারা হল... আমাদেরও অনেকের এই বয়সী সন্তান আছে। আমরা আমাদের নিজের সন্তানদের মতো করে বিষয়টিকে ফিল করছি। আবরার ফাহাদের কথা বলতে গিয়ে অনেক শিক্ষক কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। এই হল এখন আমাদের অবস্থা।
অতীতের বিভিন্ন র‌্যাগিং এর ঘটনায় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় আবরারকে প্রাণ দিতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে এই শিক্ষক নেতা বলেন, একটা ছেলেকে এভাবে পিটিয়ে মারা হবে, এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। খুনিরা আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে, আমরা সবাই এটা চাই।
বুধবার সকালে শিক্ষকদের সাধারণ সভা থেকে আবরার হত্যার প্রতিবাদে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান শিক্ষক সমিতি সভাপতি। আমরা চাইব, আবরার হত্যার বিচার হবে এবং বুয়েট তার সুনাম অক্ষুণœ রেখে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে আসবে,বলেন অধ্যাপক মাসুদ।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে কোনো শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাবে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অ্যাকাডেমিক ভবন, হলসহ সমগ্র ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। আবরার ফাহাদের হত্যার ঘটনা প্রমাণ করছে যে কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সোমবার রাতে শিক্ষক সমিতির সভায় গৃহীত বিবৃতি এসময় পড়ে শোনান তিনি।
ঢাবিতে গায়েবানা জানাযা: ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের গায়েবানা জানাযা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুরুসহ আন্দোলনরত হাজার হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন।
জানাজার পর আবরারের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। এসময় শিক্ষার্থীদের মোনাজাত হয়ে উঠে আন্দোলনের ভাষা।
মোনাজাতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলা হয় ‘হে আল্লাহ, আবরার ফাহাদের কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে তাকে তুমি মাফ করে দাও।
মাবুদ, তার যে আকাক্ষা ছিল, সেই আকাঙ্ক্ষাকে তুমি কবুল করে নাও। তার সেই আকাক্ষার পথে আরও শত শত আবরার ফাহাদ তৈরি করে দাও।
মাবুদ, যে যে জায়গায় মানুষ নির্যাতিত আছে তাদের তুমি মুক্তির ব্যবস্থা করে দাও। আমাদের সকলকে একত্রিত হয়ে সমস্ত অন্যায়ের, নির্যাতনের প্রতিবাদ করার শক্তি দান করুন।
মাবুদ, আবরার ফাহাদের বাবা-মা, আমাদের বাবা-মা সবাই চিন্তার মধ্যে আছে। আমাদের কাছে বার বার ম্যাসেজ আসছে আমরা যেন ফেসবুকে আর কিছু না লিখি। তারা অত্যন্ত চিন্তাগ্রস্ত আছেন। মাবুদ, আমাদের পিতামাতাকে এসব পেরেশানি থেকে মুক্তি দাও।
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি ছাগিরা, রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি ছাগিরা।’
পরে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি টিএসসি থেকে পলাশি মোড় অতিক্রম করে। এ সময় বুয়েট থেকে আরেকটি মিছিল বের হয়। হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে ঢাবি, বুয়েট ও আশপাশের এলাকা।
ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ করতে হবে: ভিপি নুর; আজকের তরুণ সমাজ অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শিখে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুর।
গতকাল দুপুরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের গায়েবানা জানাযার পর এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ভিপি নুর বলেন, আপনারা জানেন, আবরারকে কী নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্রলীগের গুন্ডারা বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে আজ সবাই আবরারের জানাজায় অংশ নিয়েছেন। নুর বলেন, হলে হলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলেজ কিংবা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতিত হওয়া এ আজ নতুন নয়। ছাত্রলীগের এই নির্যাতন দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। কিন্তু আমরা দেখি, যখন কোনো ঘটনায় ছাত্রসমাজ উত্তপ্ত হয়, ছাত্রসমাজ ন্যায়বিচারের দাবিতে রাজপথে নেমে আসে, তখন হয় তো সেই ঘটনার কিছুটা ন্যায়বিচার হয়, কিংবা সেই ঘটনার বিচারকে কালক্ষেপণ করা হয়। যখন ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ থেকে সরে যায় তখন সেই ঘটনাগুলো আড়ালেই রয়ে যায়।
এ সময় ডাকসু ভিপি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনু হত্যা ও সাম্প্রতিক ফেনীর নুসরাত হত্যাকা-ের ঘটনাও আন্দোলনকারীদের স্মরণ করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, যখন দেশের ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে, তখন দেখা যায় তড়িঘড়ি করে একটা ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু তারপরই ছলে-বলে-কৌশলে অপরাধীদের বাঁচিয়ে দেয়ার একটা প্রবণতা থাকে।
ফাহাদ হত্যার ঘটনায় বুয়েট প্রশাসনের সমালোচনা করে নুর বলেন, ছাত্ররা হলের সিসিটিভির ফুটেজ দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রশাসন তাদের দেখতে দেয়নি। আপনারা চিন্তা করেন, কেন তা দেখতে দেয়নি। হত্যাকারীদের আড়াল করতেই সিসিটিভির ফুটেজ দেখতে দেয়নি প্রশাসন। যখন আপনারা রাজপথে নেমে এসেছেন, আমরা প্রতিবাদ করেছি, তখন প্রশাসন চাপে পড়ে। রাতেও ছাত্ররা এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বাকবিত-া করেন। অবশেষে বাধ্য হয়ে প্রশাসন সিসিটিভির ফুটেজ প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, আজকের তরুণ সমাজ সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শিখে গেছে। তারা প্রতিবাদ করছেন।
ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভিপি নুর আরও বলেন, গতকাল (সোমবার) বুয়েট ক্যাম্পাসে আন্দোলনের সময় পুলিশ ছাত্রদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে। ফেনীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিলেন ছাত্ররা, তখন সরকারের পেটোয়ো বাহিনী পুলিশ ছাত্রদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে, হামলা করেছে। এমনি নোয়াখালীতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ডাকসু ভিপি বলেন, পুলিশের এ হামলা নতুন নয়। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের সন্ত্রাসীরা হেলমেট পরে হাতুড়ি দিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা করেছিল। এই পেটোয়া বাহিনী পুলিশ তখন বলেছিল, হেলমেট-হাতুড়ি বাহিনীকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু যখন ছাত্রসমাজ ঘরে ফিরে গেল তখন আদৌ কি বিচার হয়েছে? বরং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য ভাই-বোনকে মামলার শিকার হতে হয়েছে।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনো হুজুগে প্রতিবাদ নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চেতনা থেকে ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিটি অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ   : বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দোষীদের ফাঁসি এবং ভারতের সাথে দেশবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
গতকাল দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেট এবং পুনরায় জয় বাংলা গেট থেকে প্রধান ফটক পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভ মিছিলে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।
চবি: কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের ষোলশহরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, চট্টগ্রাম। গতকাল বিকেল চারটায় ষোলশহর রেল স্টেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানারে করা এ মানববন্ধনে নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এক ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আবরার হত্যার বিচার না দেখে ছাত্র সমাজ ঘরে ফিরবে না। আবরারের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে দায়িত্ব অবহেলার কারণে বুয়েটের প্রভোস্ট ও ভিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপস্থিত ছিলেন চবি শিক্ষার্থী আমির হোসেন জুয়েল, নিজাম উদ্দিন, জাহেদুল ইসলাম, রাইসুল ইসলাম, নাছির উদ্দিন, কামরুল হাসান, ইমতিয়াজ ইমতু, রিয়াজ উদ্দিন, কামরুন নাহার, লুবনা নূর প্রমুখ।

উত্তাল রাবি: শিক্ষার্থী আবরার হত্যার বিচার চেয়ে মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে রাস্তার দু’পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এদিকে অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
সরেজমিন দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকের সামনে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এতে রাস্তার দু’পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে বিকল্প রাস্তা হিসেবে বিনোদপুর গেট ও কাজলা গেট দিয়ে গাড়ি চলাচল করে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, সন্ত্রাসীরা শুধু আবরারকেই হত্যা করেনি, তারা সব শিক্ষার্থীর বিবেককে হত্যা করেছে। তাদের মনে রাখতে হবে ছাত্রসমাজ জেগে উঠলে দেশে কোথাও তাদের ঠাঁই হবে না। ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে অত্যাচার করে যাচ্ছে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছে না। তাই ছাত্রলীগমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. লুৎফর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে যাই। তাদের উচ্ছৃঙ্খল না হয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বললে তারা সেখানে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে।
মতিহার থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করতে চাইলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পাসে আন্দোলন করার পরামর্শ দেয়। পরে পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে জোরপূর্বক মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ