বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

পাসওয়ার্ড সমস্যার যত সমাধান

মোজাহেদুল ইসলাম : নানা ধরনের অ্যাকাউন্টের জন্য আমাদের ব্যবহার করতে হয় নানা পাসওয়ার্ড। ভার্চুয়াল জগতেও যেন পৃথিবীর বাস্তবতার সমান্তরাল একটি বিশ্ব। এসব গ্যাজেট আর অনলাইন লাইফস্টাইলের সাথে অবশ্যম্ভাবীভাবে জড়িয়ে গেছে ‘পাসওয়ার্ড’ শব্দটি। কোনো ডিভাইসকে কিংবা অনলাইন-অফলাইন অ্যাকাউন্টকে সুরক্ষিত রাখতে পাসওয়ার্ডের কোনো বিকল্প নেই।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড : প্রাথমিক কথা : পাসওয়ার্ডকে শক্তিশালী করার প্রথম উপায় হচ্ছে পাসওয়ার্ডের দৈর্ঘ্য বাড়ানো। ওয়েবসাইট সমর্থন করলে ন্যূনতম ১৪ অক্ষরের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। ৬, ৭ বা ৮ অক্ষরের পাসওয়ার্ড তুলনামূলকভাবে সহজে ভাঙতে পারে হ্যাকাররা। সেক্ষেত্রে ১৪ বা তার বেশি অক্ষরের পাসওয়ার্ড ভাঙাটা একটু কষ্টকর। এই কষ্টটা আরও বাড়িয়ে দেওয়া যায় অক্ষরগুলোর মধ্যেকার কয়েকটি বড় হাতের ব্যবহার করে। এ ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ডের শুরুতে, মাঝে বা শেষে ব্যবহার করুন সংখ্যা। সেক্ষেত্রে একাধিক অক্ষরের সংখ্যা আপনার পছন্দ হলে সেটাকে ভেঙে দুই বা তিন ভাগে ভাগ করে কোনো একটি অংশ আগে জুড়ে দিন, কোনোটি মাঝে বা শেষে জুড়ে দিন। এর সাথে কিবোর্ড যে স্পেশাল ক্যারেক্টারগুলো রয়েছে, সেগুলোকেও ব্যবহার করতে পারেন অ্যাকাউন্ট সমর্থন করলে। এতে করে মোটামুটি নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন।
চুরি হয়ে যাচ্ছে পাসওয়ার্ড : প্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলে থাকেন, কোনো ওয়েবসাইটের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা যতটা শক্তিশালী, সেই সাইটের অ্যাকাউন্টগুলোর পাসওয়ার্ড তার চাইতে বেশি শক্তিশালী নয়। অর্থাৎ আপনি যত শক্তিশালী পাসওয়ার্ডই দিন না কেন, ওয়েব সাইট থেকে সেটি চুরি হয়ে গেলে তা কোনো লাভ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে এরকম কয়েকটি ঘটনা টনক নড়িয়ে দিয়েছে প্রযুক্তি বিশ্বের। ওয়ার্ডপ্রেস, টুইটার, অ্যাপলসহ বেশকিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ পাসওয়ার্ড চুরি গেছে এই সময়ে। তবে এনক্রিপশন ব্যবস্থা শক্তিশালী হলে কিছুটা নিরাপদ বোধ করতে পারেন। সেক্ষেত্রেও আপনার পাসওয়ার্ড কতটা শক্তিশালী, সেটা নিয়ামক হয়ে দাঁড়াবে।
জমা রাখুন পাসওয়ার্ড : অনলাইন বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের জন্য যেসব পাসওয়ার্ড রয়েছে, সেগুলো একটা আরেকটা থেকে আলাদা হওয়া প্রয়োজন। এটাই কিন্তু একটা বড় মুশকিলের কথা। কারণ একেকজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর এখন অসংখ্য অ্যাকাউন্ট থাকে। ইয়াহু, জিমেইল, আউটলুক, ফেসবুক, টুইটার, লিংকএডইন, ড্রপবক্স-এমন শত শত সাবিংসে রয়েছে হাজারো অ্যাকাউন্ট। আর প্রতিটির জন্যই রয়েছে পাসওয়ার্ড। তথ্যের সুরক্ষায় প্রতিটি অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড আলাদা হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এত অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড মনেই বা রাখবেন কীভাবে? এই ক্ষেত্রে আপনার প্রথম সহায় হতে পারে আপনার ওয়েব ব্রাউজার। প্রতিটি ওয়েব ব্রাউজারেই পাসওয়ার্ড সংরক্ষণের ফিচার রয়েছে। গুগল ক্রোম, ফায়ারফক্স, অপেরা, ইন্টরনেট এক্সপ্লোরারসহ সব ব্রাউজারেই পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করা যায়। আবার সরাসরি ব্রাউজারে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ না করে আলাদা অ্যাড-অন বা এক্সটেনশন ব্যবহার করেও পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করা যায়।
মোবাইলেও পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ : কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মতো মোবাইল ডিভাইসেও এখন পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করা যায়। স্মার্টফোনগুলোতেও ওয়েব ব্রাউজারে রয়েছে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণের সুবিধা। এ ছাড়া স্মার্টফোনের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণের আলাদা অ্যাপ্লিকেশনও রয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস কিংবা উইন্ডোজ প্ল্যাটফর্মের স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট পিসির জন্য রয়েছে এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি বিনামূল্যের অ্যাপ্লিকেশনের নাম ‘কিপাস’। এটি নিজে ওপেন হওয়ার জন্য একটি পাসওয়ার্ড চায়। সেটি প্রদান করেই এর মধ্যে জমা রাখতে পারেন সব ধরনের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড। সেক্ষেত্রে ‘কি-পাসের’ পাসওয়ার্ডটি কাজ করবে মাস্টার পাসওয়ার্ড হিসেবে। https://keepass.info সাইট থেকে বিনামূল্যের এই টুলটি নামিয়ে নিতে পারবেন।
যেভাবে সংরক্ষিত হয় পাসওয়ার্ড : বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে সাইন-আপ বা রেজিস্ট্রেশন করার সময়েই একটি পাসওয়ার্ড দিতে হয়। প্রতিবার ওই অ্যাকাউন্টে পাসওয়ার্ড দেওয়ার পর ওই পাসওয়ার্ড সংরক্ষিত হয় সংশ্লিষ্ট সার্ভিসের সার্ভারে। প্রতিবার পাসওয়ার্ড প্রবেশ করানোর সময় সার্ভারে সংরক্ষিত পাসওয়ার্ডের সাথে মিলিয়েই অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। তবে সার্ভারে সংরক্ষণের সময় বিশেষভাবে এনক্রিপশন করা হয় পাসওয়ার্ডগুলো। ফলে সাধারণভাবে এই পাসওয়ার্ড কেউ দেখতে পেলেও সরাসরি সেটা থেকে মূল পাসওয়ার্ড জানা যায় না।
তবে পাসওয়ার্ড ক্র্যাকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনেক সময়েই মূল পাসওয়ার্ডটি বের করে ফেলা যায়। সেক্ষেত্রে সফটওয়্যারগুলো সেকেন্ডে লক্ষ-কোটি পাসওয়ার্ড অনুমান করতে পারে। সাধারণভাবে ইংরেজি বর্ণ থেকে ৬টি অক্ষর দৈবচয়নভিত্তিতে নিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করলে ৩০ কোটি পাসওয়ার্ড তৈরি করা যায়। মানুষের জন্য এতগুলো পাসওয়ার্ড হিসেব করা বের করা কষ্টকর হলেও সফটওয়্যারের জন্য তা সেকেন্ডের বিষয়। তাই পাসওয়ার্ড তৈরির ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব বেচিত্র্য নিয়ে আসা প্রয়োজন।  -ইন্টারনেট থেকে

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ