শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪
Online Edition

ছড়া/কবিতা

বিষাদের বাঁশি
কে জি মোস্তফা

সুহৃদ,
তোমরা আমাকে
প্রাণবন্ত সজীব দেখতে চাও
যদিও আকাশে এখন
যাবতীয় অশুভ চিহ্ন-
সাইক্লোন,বন্যা, ভূমিকম্প , সুনামি।
মোটের ওপর যা ঘটছে
যতটুকু বুঝতে পেরেছি
এক জায়গায় যেখানে
আজও বেঁচে আছি আমি
কেবল তোমরাই
স্পর্শ করছো স্থবির এ জীবন।
মাংসকাটা বটির মতো
সময় তো গলে যাচ্ছে
চূর্ণাকারে ক্ষয়ে যাচ্ছে
প্রবীণ পৃথিবী;
তবুও আমরা এগিয়ে যেতে চাই,
এগিয়ে যেতে চাই
সময়ের চিহ্ন থেকে
পূর্ণতার দিকে
অথবা শুরুর দিকে
যার কোন শেষ নেই!


পিঁয়াজ
শেখ এনামুল হক

পিঁয়াজ নিয়ে নজিরবিহীন কাড়াকাড়ি
পিঁয়াজ নিয়ে হুলুস্থূল বাড়াবাড়ি
এসব দৃশ্যের শেষ হবে
কবে কোথায় কে জানে
এমনতরো দৃশ্য কেউ কোনদিন
শুনেছে কারো পড়ে মনে?
সেঞ্চুরী হয় ক্রিকেট মাঠে
পিঁয়াজের দাম সেঞ্চুরী ছেড়ে
আলোচনা এখন মাঠে ঘাটে।
সরকারি দলের মন্ত্রী নেতারা
মুখে এঁটেছেন কুলুপ
চারদিকে আজ উদাস প্রকৃতি
গন্ধ-বিধুর-ধুপ॥


অনাগত প্রজন্ম
হেলাল আনওয়ার

কিভাবে করেছি পার সুখতারা বয়সের সিঁড়ি
সবুজ চারণগুলো উনুনের প্রজ্জ্বলন
ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন রঙিন আকাশ।
শান্ত আকাশ দেখে যে চোখ একদা শীতল হতো
সে চোখে এখন কেবল স্বপ্নহীন অগ্নিপ্রপাত
মৃত্যুঞ্জয়ীরা তো চলে গেছে হেঁটে হেঁটে বর্ণিল পথে
এখন কেবলই মেধাহীন পর্বত ছুঁয়ে বসে আছি-
নি:সম্বল পথিকের মতো।
এভাবে গৌরবহীন সময়ের গলুই ধরে
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখে দেখে আবিরহীন সন্ধ্যার মতো
শোকাহত মায়ের দুচোখ।
ফাঁটা বেলুনের মতো চুপসে যায় স্বপ্নের স্বপ্নের বাতিঘর
কার্তিকের খরা যেন তার বুকের জমিন।
মা-মাগো! আপাতত শান্ত হও-
অনুজ্জ্বলতার মাঝে উজ্জ্বল প্রদ্বীপ হাত
এগিয়ে আসে অনাগত প্রজন্ম।


জয় জয়ন্তি
আজিজ ইবনে মুসলিম

ষোলোই ডিসেম্বরের  বিজয় স্মৃতিটা
আজো স্পষ্ট হয়ে আছে মনের মুকুরে,
এ দেশ ও জাতি ছিলো ডুবে আস্তাকুড়ে।
রক্তের স্রোতে সূচিত স্বরাজ প্রীতিটা।

এখন বসন্তকালে কোকিল ডাকে না
কারণ দৈত্য দানবে লোকালয় ঘেরা,
আরো রয়েছে রাঘব বোয়াল মাছেরা।
পেঁয়াজ রসুন সব্জি কিছই থাকে না।

এখন পণ্যের জয়জয়ন্তী শ্লোগানে,
সাধারণ মানুষেরা কষ্টে অপমানে-
পরাভূত প্রবঞ্চিত রুষ্ট ভাগ্যহত,
ক্রয়ক্ষমতা বিঘ্নিত প্রাপ্ত পণ্য যত।

আজি বিজয় দিবসে পরিতৃপ আঁখি,
সনেটের ফ্রেমে বেঁধে সযতনে রাখি।


জীবনের অংক
মোহা: আবদুর রহমান

পাটিগণিতের  সহজ  প্রশ্নের  উত্তর মিলাতে  পারি না।
মনের খাতায়  বার বার করেছি কাটাকাটি।
শুধু পাই একই উত্তর যা উত্তর মালায় নেই।
তবুও হাল  ছাড়িনি।
কখনো  কখনো নিজের উত্তরকেই সঠিক বলে মনে করি।
তবে আবারও মনে হয় আমিতো আর বিশেজ্ঞ নই।
 
সেই জীবনের সুদের অংকটা।
জীবনের একটা সময় এসে দেখা যায় সুদের সাথে হারিয়ে যায় মূলধন।
মূলধন পরিণত ঋণে।
তাহলে কি সুদের হার ঋণাত্মক ছিল
যা বুজতে ভুল করেছি।
তাহলে তো এবার  উত্তর মিলে যাবে।
মিলে গেল মা কেন বৃদ্ধাশ্রমে।


মহাবিস্ময়ের ভেতর দিয়ে
মোশাররফ হোসেন খান

মহাবিস্ময়ের ভেতর দিয়ে এক সময় এসেছি একা!

জাগতিক সকল বিত্ত -বৈভব মহাশূন্যে তোলপাড় করছিল। 
যে সম্পর্কে আমি ছিলাম সম্পূর্ণ বেওয়াকিফহাল।

আমি তো ভূ-পৃষ্ঠে আসার পর থেকেই কেবল আগুনের দরিয়া সাঁতরে চলেছি!
জন-মানব নির্বিঘ্নে  চলাচলপথ হিসাবে আমাকে  ব্যবহার করে আসছে।

আমি নিরুত্তাপ, উদ্বেগহীন মৃত্তিকার মতো !

অথচ মানুষ তো বটেই -----
 নদী-সমুদ্র কষ্ট পায় যদি
পাহাড় - পর্বত দুঃখ পায় যদি
লতা-গুল্ম কাঁদে যদি-----
এই ভেবে সতর্ক থেকেছি সচকিত  হরিণের মতো !

অথচ আমাকে ভূ-পৃষ্ঠ বা পথ হিসাবে ব্যবহার করতে একটি বুদ্বুদও ওঠে না!

আজ চারপাশে তাকিয়ে দেখি----
জন-মানবহীন এক উত্তপ্ত ধূসর মরুভূমিতে
বালুর ভেতর মুখ লুকিয়ে পড়ে আছি একা,
                                    কেবলই একা!.........

মানুষ এখন আর কোথায় যাবে, কার কাছে?
জানি না আরও কতোটা  বিস্ময়  অপেক্ষায় আছে?

সেদিন প্রত্যুষে দেখি ----
রেল লাইনের পাশে পড়ে আছে তিনটি দ্বিখন্ডিত লাশ!
যাদের  খবর জানে না কেউ।
যে যার মতো ছুটছে নিজের কাজে,
        তখন সকাল ছয়টা বাজে!

আমি বিস্ময়ে নির্বাক!
এ কেমন মৃত্যু?
এ কেমন জীবন?
এ যেন এশিয়া নয়, সিরিয়া কিম্বা ফিলিস্তিন,
অকস্মাৎ ফেটে দু'ভাগ হয়ে  যায় আমার বুকের আস্তিন!

অথচ একটি কাকের বিপদেও শত শত কাক ছুটে আসে নি:স্বার্থে!

হায়রে হতভাগ্য মনুষ্য-জীবন!
ঘৃণা ও হতাশায় আমি মহাশূন্যের দিকে চেয়ে থাকি,
ভাবি ---এ পৃথিবী ধ্বংস হতে আর কতো বাকি? 
                 কতোটা বাকি!.....


আমি প্রকান্ড
আমিন আল আসাদ

আমার অবস্থান ও স্থিতি এক পরিপূর্ণ মূলের ভেতর
এতে নেই কোন সংশয়
তবে আমি আমার মূলের উপর দাঁড় করিয়েছি সূদৃঢ় কা-
এবং তাকে বাড়িয়ে দিয়েছি ক্রমাগত উপরের দিকে।
শত শত ডালপালা করেছি বিস্তার
মেলে দিয়েছি প্রশাখা, উপশাখা
সবুজ পত্রগুচ্ছ ছড়িয়ে দিয়েছি স্বতঃস্ফূর্তভাবে

আমার বেড়ে উঠার স্বাধীনতায় কোন
কৃত্রিম হস্তক্ষপ আমি মানি না
সূদৃঢ় মূলের উপর দন্ডায়মান আমি
এক প্রকা- অবয়বে
আমার মাথার উপরে বিস্তৃত আঁকাশ
আমার পাদদেশ স্পর্শ করেছে বিশাল পৃথিবী


অজ্ঞাত উত্তর
জাফর পাঠান

জানিনা বাগানে এখন- ফুটে না কেন ফুল
গায় না আর- সুরেলা গান- পাখি বুলবুল,
কোথায় হারিয়ে গেছে- বন থেকে বনফুল
মৌমাছি পায় না মৌটুসি, যাতে ফোটাবে হুল।

ঋতুরা বৈচিত্র নিয়ে মেটাতে আসে না মন
দোলে না এখন আর- পুঞ্জ পুঞ্জ কাশবন,
নেই কিষাণ-কিষাণির, মনোভোলা বাঁধন
নেই আউল-বাউলের- সেই গীত সাধন।

খোলামনে হাসি নেই, হাসি যেন কাষ্ঠহাসি
প্রতিবেশীরা হয়েছে আজ- দূর পরবাসী,
মুছে দিয়ে জোছনা- পূর্ণিমা হয় অমানিশি
মনের সাথে মন মিলিয়ে- নাই মিলামিশি।

চাঁদ-তারা-গগনের কাছে - প্রশ্ন যদি রাখি
মুখ লুকিয়ে অঝরে কাঁদে ¯্রােতস্বিনী আঁখি,
আলোকে করলে প্রশ্ন- নিভায় সমস্ত আলো
দিবে নাকি উত্তর- গুটাইলে মনের কালো।


প্রিয় স্বদেশ
মোহাম্মদ ইসমাইল
 
প্রিয় স্বদেশ আমার ,
তুমি আমাদের কাছে একটি পূর্ণিমার চাঁদ।
আলোকের আলোক ভান্ডার!
তাই কখনো কোন অশুভ রাহুশক্তির সেই চড়ক চক্ষুর ঐ-গূঢ় অন্ধকার
ইচ্ছে করলেই তোমারে গ্রাসিবে(?)
না গ্রাসিতে 'সে' দেবো না;
না নষ্ট হতে দেবো না;
তোমারই চকচকে উজ্জ্বল আলোর কোন প্রতিভাত ;
আর আমাদের সোনার বাংলার সেই সোনার সংসার।


মায়ের কদমবুচি
হাসান আলীম

জননীর কথা ভুলে যাই
ভুলে যাই নাড়ীছেঁড়া যন্ত্রণার চিৎকার-
বাবার উল্লাসে আমার কান্নার তরঙ্গ জমে যায়
বরফের মত সাদা চাঁই
জমে আছে বুুকের সমুদ্রে।
একটু আগুন দেবে তোমরা ?
হে বিপ্লবী বহ্নি শিখা!
আমার ধমনী ব্যপে রক্ত সঞ্চালন কর-
আমাকে শিশির ভেজা উঠোনে একটু শ্বাস
ফেলতে দাও !
মায়ের কদমবুচি করিনা অনেক দিন


বিজয় আসবে
আশরাফ জামান

এ বিজয় কার কোন মানুষের?
যারা সম্পদ, বৈভব গড়ে, লুটে নেয় সর্বস্বের ধন
নতুন শোষক সেজে টাকার পাহাড় গড়ে
শক্ত করে পুঁজিপতি হায়েনার হাত।
বারবার বাংলার সবুজ ঘাসে কৃষক মজুরের রক্ত ঝরেছিল।
একটি কিষাণী নারী সমস্ত সখ-স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়ে
কপালের রেখাগনে সাদা থান কাপড় ধরেছিল
নতুন প্রভাত আসবে বলে স্বাধীনতা পাবে বলে।
এ বিজয় কার বলো কোন মানুষের?
পাপের মদদ জোগায় লাখো মানুষের খাবার কেড়ে নেয়
যারা ভ্রান্তির আড়ালে থেকে শান্তির খোয়াব দেখে
যারা স্বপ্নিল বাসর সাজায় কোটি মানুষের বুকে পা রেখে।
ষোল কোটি হতভাগা মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি এলে
সঠিক বিজয় আসবে স্বাধীনতা স্বাধিকার পাবে জমীন।


চন্দ্রভাগা
রহমাতুল্লাহ খন্দকার

চন্দ্রভাগা নদীর পাশেই আমাদের বাড়ি
কত কত খাল চুয়ে এখানে জমেছে ইতিহাস গ্লানি এসে।
পচা পচা পানি খায় হার্দ হরিণেরা তৃষ্ণায় কাতর
অথচ সুন্দর কত চির হরিতের বনে ঝুলে থাকে
আঙুর-দাড়িম্ব ফল।
কাকে খায় ফল কিছু, আর সব খাজ্না নেয় শ্বাপদ-শেয়াল।

চন্দ্রভাগা নদী তীরে আমাদের বাড়ি
জল তবে আমাদের নয়, স্থল তবে আমাদের নয়
নয় ফল অবশেষ আমাদের কিছু।
শূন্যতা যা কিছু তিলে তিলে এই করেছি সঞ্চয়
তার বুকে চঞ্চু ঠোকে চিল, কাঠফাটা রোদে
কাটে কাঠ কাঠঠোকরা শেষে।

হায়! চন্দ্রভাগা তুমি হয়ে গেছ ভাগ
এপারে খ-িত চাঁদ, ওপারে সূর্যগ্রহণ।

স্বর্গপুরী পোড়ায় আগুনে কোন রাবণের দল
হার্মাদ-হালাকু নষ্ট করে স্বর্গ-মর্ত-তল।
এই শরতের কালে আসে কোন কাঁশফুল দেবী,
দেবতার দল, কার হাতে অসুরের জীবন-মরণ?


গুই ও শালিক
শাহিদ উল ইসলাম

ডাকাত গুইয়ের আক্রমণে হঠাৎ
রাতের নীরবতা ভেঙ্গে পড়শি
শালিকেরা চিৎকার করে উঠে।
বাঁচাও বাঁচাও- শালিকের আর্তনাদ
বড্ড কানে বাজে।
অথচ নির্বাক নিশ্চুপ আমি চোরের ন্যায়
আত্মগোপন থেকে জাতীর উদ্দেশ্যে
ফেসবুকে লগ ইন হয়ে স্ট্যাটাস দেই
নিজেকে একজন আদর্শ মানুষ রূপে
উপস্থাপন করি।
ওদিকে গুই ; শালিকের ডিম নিয়ে
প্রতিদিন প্রতিরাত কেটে পড়ে!
আমারা যারা শালিক আছি; তাদের
কষ্ট বাড়ে, স্বপ্নগুলো মেলে
না ডানা আর
ভবিষ্যতের আকাশে বাতাসে!
দিন দিনান্তে গুই মোটা তাজা হয়
এবং ঘূণ ধরে মানচিত্রে।
আটষট্টি হাজার গ্রাম জুড়ে এখন
শুধুই গুইয়ের উৎপাত
কেবলই আমার ও আপনার ন্যায় ভণ্ড
শালিকেরা নিশ্চুপ আছি বলে।


হে অতৃপ্ত কারিগর
সায়ীদ আবুবকর

এ দা-এ কাটে না, কোপ দিলে খালি ফিরে ফিরে আসে সেই কোপ;
এ বটিতে যায় না  কিছুই কোটা, পিচ পিচ করতে গেলেই
তরতাজা মাছও খালি ছিঁড়ে ছিঁড়ে যায়;
এ লাঙলে হয় না আবাদ, ভোতা এর ফাল ভাঙতে পারে না
পলিপড়া শুভ্র প্রাগৈতিহাসিক মাটি;
এ হৃদয়ে হয় না  প্রণয়, জং ধরে মরচে পড়ে
হয়ে গেছে যেন ফুটো হয়ে যাওয়া লোহার কড়াই।

পুরনো পৃথিবী লাথি মেরে ভেঙে ফেলে, হে অতৃপ্ত কারিগর,
আবার নতুন করে বিনির্মাণ করি এসো;
ভেঙে ফেলি এসো জং ধরা কবিতার ভাষা;
কলুষিত প্রণয় ও ফর্মালিন মাখা জ্ঞান আর বিজ্ঞানের ভাষা
গুড়িয়ে ঘৃণার বুলডোজারে
আবার নির্মাণ করি এসো নতুন তাজমহল;
নতুন মানুষ আর নতুন জীবনে গমগম করে উঠুক আবার
সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দেশ-মহাদেশ।


আটচল্লিশটি বছর কেটে গেল
আহসান হাবিব বুলবুল

আটচল্লিশটি বছর কেটে গেল
প্রায় অর্ধশতাব্দী কাল !
মহাকালের পাড়ে আজ ধূসর সময় থমকে দাঁড়ায়।
বলে,
এই সময়ে একটি ফসলের বীজ বংশানুক্রমে
অঙ্কুরোদ্গম হয়েছে কতবার,
কতবার কৃষ্ণচূড়া পলাশ
আগুন ঝরিয়েছে প্রকৃতিতে,
উষ্ণতার পরশ কি পাওনি ?
এই সময়ে একটি শিশু
অতিক্রম করতে পারে যৌবন,
একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ
উঠে আসতে পারে আলোর মিছিলে।
কিন্তু তোমরা তা পারো নি।
তোমরা পারোনি ঘুরে দাঁড়াতে !
তোমাদের সম্মিলিত বোধের উন্মেষ ঘটে না,
তোমরা গড়ে তুলতে পারো না জাতীয় ঐকমত্য,
তোমাদের আত্মমর্যাদাবোধ জেগে ওঠে না,
আজো পক্ষে বিপক্ষে
জাতিকে করো বিভক্ত !
তোমাদের দেশপ্রেম দায়বদ্ধতা
সব হেরে যায় হীন স্বার্থপরতার কাছে।
কিন্তু কেন ?
কেন তোমরা পারো না
ইতিহাসের সত্যটা উচ্চারণ করতে ?
অথচ এক সাগর রক্তের দামে
কেনা এই স্বাধীনতা!!


অনুভূতির দ্বিতীয় চ্যাপ্টার
ওহাব মন্ডল

আমি তো চেয়েছিলাম
আমাকে ভালোবাসবে।
আমাকে আগলে রাখবে।
আমার হাত ধরে তামাম শহর ঘুরবে।

টং দোকানে শীতের সন্ধ্যায়
ধনে পাতা আর কাঁচা মরিচের চাটনি দিয়ে
দু জন মাশকালাইয়ের রুটি খাবো।

তোমার জিহ্বায় ঝাল ধরলে-জল জল করে চ্যাঁচাবে।
আর আমি!!
আমি পাগলের মতো জলের গেলাস-
তোমার মুখে ধরবো।
তুমি মমতার চোখে আমার দিকে তাকিয়ে
ভুলে যাবে ঝালের তত্ত্ববিদ্যা।

কিন্তু চাইনিজ রেস্তোরাঁর শহরে-
হৃদয়ের গভীরতা মাপা যায় না সুচরিতা।
সাম্প্রতিক ভালোবাসা যেন বেলুন ভর্তি বাতাস।
তাই তো বাতাসের মতোই নিখোঁজ অক্সিজেন হয়ে গেছো।

কাউকে হারানোর বেদনার সংজ্ঞা তোমার জানা নেই।
তাইতো নতুন মানুষ নতুন অনুভূতি নিয়ে-
বড্ডই বেকসুর দিন কাটাচ্ছো।

আর আমি ফরমালিন ভালোবাসার ফ্রেমে বন্দি হয়ে-
ক্রমশ হারিয়ে ফেলছি ব্যক্তিগত অস্তিত্ব।
তোমার ভালো থাকা হোক সুচরিতা।
আমি না হয় হেরে যাওয়া একজন মানুষের
গল্পই হয়ে থাকলাম।


আপন কুলায়
সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা
 
আমি শুভ্র গাঙচিলের দলে মিশে যাবার জন্য,
অপেক্ষায় থাকি সমুদ্রতীরে শান্ত শীতের
কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে।
আমি রোদেলা সকালের কোমল পরশে,
নোনা জলের বুকে খুঁজি বেঁচে থাকা,
সহ¯্র সর্পিল খোলসে সুরক্ষিত বর্ণিল
শামুকের কোমল শরীর।
আমি সৌরদীপ্ত মধ্য দুপুরে মৃতপ্রায় শঙ্খের
শ্বেত খোলস কুড়াই আধো ডোবা বালিতটে।
আমি জীবন মরুর বালিয়াড়িতে পড়ে থাকা
মৃত ঝিনুকের খোলসের আড়ালে মুক্তোর সন্ধানে
কাটাই রোদেলা বিকেল।
পড়ন্ত বিকেলের আবীর আলোয় নীল সমুদ্রের
ছোট বড় ঢেউের শব্দে সম্মোহিত
করে তোলে জীবাত্মাকে,
আমি তখন মৌণ চিত্তে স্বপ্নীল ডাক শুনি,
নতুনভাবে বেঁচে থাকার অন্তহীণ প্রেরণায়।
দিনশেষে সূর্য ডোবার সময় পশ্চিম আকাশের
লালিমায় মোহচ্ছন্ন হয়ে,
নীড়ে ফেরা লক্ষাধিক পাখির সাথে
আপন কুলায় আসি ফিরে!


দৃষ্টির সীমানায় নতুন পৃথিবী
মুহাম্মদ রেজাউল করিম

আমার অন্ধকার অনুভবের অবয়বে
সেঁটে আছো তুমি বোতলের ছিপির মতো
আমি ছুঁড়ে দেই পরম সত্য জনতার উদ্দেশ্যে
ফিরে আসে নির্বোধ উত্তর দুপুরের কপাট খুলে
কর্মস্থল, পথঘাট বেসামাল নাবিকের মতো
আমি কাকের গন্ধ পাই দরোজার কাছে
তবু বের হই,
 তোমার নির্দেশে ছুটে যাই নির্বোধ লোকালয়ে
আমার দৃষ্টির সীমানায় ভেসে ওঠে নতুন পৃথিবী।


কষ্টকাব্য
জাকির আজাদ

ধীরে ধীরে এখন আমি
কোন নরকে চলছি,
বিশ^াস করো, তুমিবিহীন
ভীষণ রকম জ¦লছি।

দিনে রাতে ছব্বিশ ঘন্টা
তোমায় স্মরণ করছি,
তোমার দেয়া শেষ চিঠিটা
অসংখ্যবার পড়ছি।

যাতে তুমি লিখে ছিলে
আমি প্রলাপ বকছি,
নিজের কাছে নিজে আমি
অযথাই ঠকছি।

রূঢ় তোমার চিঠির ভাষা
সইতে হচ্ছে সইছি,
বাস্তব বলয় ভ্রমণ শেষে
ফিরবে আশায় রইছি।


১৬ ডিসেম্বরের পড়ন্ত বিকেলে
এম জেড হোসেন আরজু
   
ডুবন্ত সূর্যকে স্বাগত জানানো
আসরের করুণ আযান, প্রকৃতির প্রাণের তান।
১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বরে ঢাকাতে ধ্বনিত আসরের আযান!
আমি শুনেছি মার্ক টালির ভিডিও রেকর্ডে সে সূর।
এক দিকে রক্তের ফোরাত নদী, আরেক পাশে ধ্বংসের ছাইভস্ম তুর
ঢেউ-এর মত বাতাসে ধেয়ে গড়েছিল আনন্দ-বেদনায় গোরস্থান।

ইতিহাস কেঁদেছিল আনন্দ-বেদনার চিৎকারে সেদিন
এখনও শোনা যায় সেখানে ধ্বনিরত মনের মুয়াজ্জিন;
যখন হৃদয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

আজ বেদনায় ছুঁড়ে ফেলা সিরাজের নবাবী মুকুট
পলাশীর প্রান্তরে সযত্নে তুলে নিয়ে প্রতিরোধ হোক
ভালবাসা-সংহতি-অধিকার লুট।
আজ ১৬ ডিসেম্বর; শ্রদ্ধা জানাই চোখের পানিতে
হে আমার বাংলা অসংখ্য শহীদ বাজান।
কে অলক্ষ্যে আমাদের সোনার তরী সোনালী ধানে সাজান?
        
আজ ১৬ ডিসেম্বর! রক্ত রোদনে গড়া বাংলার কারিগর;
উদিত সূর্যের আলোতে আনন্দিত বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর।


মাস শেষে
রুদ্র সাহাদাৎ

মাস শেষ হলেই কন্ঠস্বরে স্বর থাকে না
প্রাণটা পুঁটিমাছের মতোন ছোট হতে থাকে
পথে হাঁটতে গেলে, হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই
বাজারে কখন যেনো দোকানদার ডাক দেয়

ভাইজান মাস তো শেষ, হিসেবের খাতাটা দেখি -

মাস শেষে আমার আমিই থাকি না ইঁদুরের মতোন মুখ লুকিয়ে চলি
শূন্যতায় ভাসি, কাঁদতে কাঁদতেও হাসি- কেউ বুঝে না

রাত্রিজুড়ে কেবল হিসেব দ্যাখি --
ডিস বিল, কারেন্ট বিল, ব্যুরো বাংলায় কিস্তি,
ফলের দোকান, মুদির দোকান,
পানের দোকান, সবজির দোকান, ঔষুধের দোকান,
আর ধার-কর্জ....
জীবন মানে জেনে গেছি অবশেষে
কোনো রকম মানিয়ে নেয়া..!

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ